১৩ দফা দাবিতে ফের আন্দোলনে নেমেছে রাজধানীর ভাটারাস্থ বেসরকারি পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে দাবি আদায়ে কলেজ শিক্ষক ও কলেজ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভেতরে রেখে প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত না করায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তালা ঝুলিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ দুপুর ২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে।
কলেজটির ২২তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বিনিশা শাহের আত্মহত্যাকে রহস্যজনক দাবি করে গত ২১ ডিসেম্বর প্রথম আন্দোলনে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সে সময় কলেজ কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ১০ দফা দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে দাবি পূরণের শর্তে আন্দোলনে বন্ধ করে। তবে গত ১৫ দিনেও দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ (বুধবার) আবারও আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
নতুন করে এবার ১৩ দফা দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে তারা। ভেতরে কলেজ প্রশাসনকে অবরুদ্ধ রেখেই বাইরে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
শাকিল নামে এক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের আশ্বাস দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করেছে। বিভিন্ন অজুহাতে বেশি টাকা নিচ্ছে। অহেতুক জরিমানা ও অকৃতকার্যের ফাঁদে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এসব বন্ধের জন্যই আমাদের আন্দোলন। এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
সালমান নামে কলেজের আরও এক শিক্ষার্থী জানান, পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের ওপর অমানবিক চাপ প্রয়োগ করছে। অনৈতিকভাবে জরিমানা আদায়, অতিরিক্ত টাকা দাবি ও ফেল করিয়ে জরিমানার ফাঁদ পেতেছে। ৫ বছরের কোর্স ৭ বছরেও শেষ করতে পারিনি। মৌখিক পরীক্ষায় একবার পাস করি তো লিখিত পরীক্ষায় ফেল করি। আরেকবার লিখিত পাস তো মোখিক পরীক্ষায় ফেল। ফেল করলেই ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা। আর উপরি হিসেবে ফের একটি বছরের টাকা আদায় করে। এসব নিয়ে কথা বললেই ফেল করার হুমকি, চাপ আসে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রী বলেন, কোনো বিষয়ে একা কথা বলতে গেলেই নানা চাপ, হুমকি আসে। আমরা আর মানব না। এবার এসবের হিসেব আমরা নেবই।
শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ১০ দফা দাবি হলো-
Advertisement
১. শেষ পেশাগত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর ফরম পূরণের টাকায় কোনো বেতন আদায় করা যাবে না
২. ইন্টার্ন ডাক্তারদের বেতন বৃদ্ধি করে ১২ হাজার টাকা করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য, যে সকল ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সময় উন্নয়ন ফি দিয়ে ভর্তি হয়েছে তাদেরকেও বেতনের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে ইন্টার্ন ডাক্তারদের বেতনের টাকা দিতে হবে।
৩. কলেজে অধ্যয়নরত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে চিকিৎসা গ্রহণ করার সময় চিকিৎসা বাবদ ফি সম্পূর্ণ ফ্রি করে দিতে হবে এবং অভিভাবকদের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ছাড়ে চিকিৎসা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. ইন্টার্ন ডাক্তারদের নিয়ে ‘ইন্টার্ন ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন’ গঠন করতে হবে। অ্যাসোসিয়েশন গঠনের সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিযুক্ত উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন।
৫. ভর্তির সময় যে উন্নয়ন ফি নেয়া হয়, এরপর ফাইনাল ইয়ার পর্যন্ত বেতন ও পরীক্ষার ফি ব্যতীত অন্য কোনো টাকা আদায় করা যাবে না।
৬. প্রত্যেক পেশাগত পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ ফি’য়ের পরিমাণ কমাতে হবে।
৭. কলেজে ভর্তি, পরীক্ষা কিংবা অন্য যেকোনো লেনদেনে রশিদ দিতে হবে।
৮. বেতন বিলম্বে দেয়ার ক্ষেত্রে যে জরিমানা নেয়া হয় তা কমাতে হবে। ২০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ টাকা করতে হবে।
৯. নিয়ম অনুযায়ী হোস্টেলে এক বছর থাকার পর হোস্টেল ত্যাগ ক্ষেত্রে দ্রুত অনুমতি দিতে হবে। অতিরিক্ত কোনো জরিমানা আর নেয়া যাবে না।
১০. কলেজে ইমার্জেন্সি ইউনিট ও অ্যাম্বুলেন্স সেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
১১. হোস্টেল চার্জ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন। খাবারের ক্ষেত্রে মিল সিস্টেম চালু ও খাবারের মান উন্নত করতে হবে।
১২. বহির্বিভাগে চিকিৎসা প্রদানের সময় যে সকল ইনস্ট্রুমেন্ট ও মেটারিয়েল ব্যবহার করা হয় তা পুরোটাই কলেজ থেকে সরবরাহ করতে হবে এবং
১৩. ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় পাস করার ১৫ দিনের মধ্যে অন্যান্য কলেজের ন্যায় ইন্টার্নশীপ চালু ও ইন্টার্নশীপ শেষ হবার পর দ্রুত সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে।
জেইউ/এআরএস/আরএস/আইআই