দরজায় বাহির থেকে কেউ ঠক্ ঠক্ শব্দ করছে। বই পড়ছিলাম। রাত জেগে বই পড়ার বদ অভ্যাসটা আমার একটু বেশি। তাই দরজা খুলতে বেশি সময় নেইনি। দরজা খুলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই দু’জন পুলিশ আমাকে শক্ত করে ধরে ফেললো। হাতে হাতকড়াও লাগিয়ে ফেললো। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি জানতে চাইলাম, কেন তারা আমাকে ধরেছে। তারা জানালো, একটি মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। সেই মেয়ের ফোনে সবশেষ মেসেজটা নাকি আমার নম্বর থেকে গিয়েছে। সেখানে নাকি লেখা, ‘ভালো থেকো’। তারা আমার ফোন ট্র্যাক করে এখানে এসেছে। কিন্তু কথা তো সত্য। আমি তো লিপিকে এই মেসেজটা পাঠিয়ে ছিলাম। তাই বলে তার লাশ পাওয়া যাবে? কে হত্যা করলো? নাকি সুইসাইড করলো? আর সুইসাইডই বা করবে কেন?
Advertisement
লিপিকে আমার ভালো লাগতো। টিনএজের ভালো লাগা যাকে বলে। ভালো লাগার কথা চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে ছিলাম। আমাকে তার ভালো লাগে না, সে কথা তখনি জানিয়ে ছিল। আজ রাতে তাকে বেশ মনে পড়ছিলো তাই মেসেজটা পাঠিয়ে ছিলাম। পুলিশ আমার ফোনটা নিয়ে মেসেজ দেখলো। আমাকে টেনে গাড়িতে তুলছে। আমি চিৎকার করে বলছি, ‘আমি কিছু জানি না।’ এমন সময় বাংলোর কেয়ারটেকার আমাকে ডাকছে। আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমার সারা শরীর ঘেমে গেছে। আমিও হাঁপিয়ে গেছি। বুঝতে পারলাম, আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। দরজা খুলে দিলাম। কেয়ারটেকার বলল, ‘মামা, বেলা তো অনেক হলো; হাঁটা শুরু করবেন না?’ আমি বললাম, ‘এই তো বের হবো।’ আমি এমন বাজে একটা স্বপ্ন দেখলাম কেন? রাতের বিভিন্ন সময় দেখা স্বপ্নের নাকি বিভিন্ন অর্থ থাকে। আমি সেসব জানি না। তাই বুঝতে পারছি না আমার এই ভোরবেলার স্বপ্নের মানেটা কী?
ভাঙ্গা মোড়ে এসে একটি হোটেলে ঢুকেই প্রথমে খাবারের অর্ডার দিলাম। পথে খাবারের হোটেল কোথায় পাবো তার ঠিক নেই। তাই এখান থেকেই খেয়ে হাঁটা শুরু করি। হোটেলে কালিজিরা ভর্তা, আলু ভর্তা আর লাউ শাক ভর্তা দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। কতদিন এসব খাই না। তাই এগুলোর সাথে গরম ভাত দিয়ে পেটপূজা সেরে নিলাম। আজ প্রায় তেইশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কাওরাকান্দি ফেরিঘাটে পৌঁছতে হবে। তারপর নদী পার হয়ে মাওয়া। রাস্তার দু’পাশে তেমন ঘরবাড়ি নেই শুধু কৃষিজমি। কৃষকরা মাঠে কাজ করছে। রাস্তার দুই পাশে গাছের সারি। আজ সকাল থেকেই সূর্য হেসে উঠেছে। আমি সেই আলো-ছায়ার শিল্পকর্মের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলছি। বামনকান্দি বাজারে এসে যাত্রাবিরতি করলাম।
মালিগ্রাম বাজারটা বেশ বড়। এ বাজারেই মালিগ্রাম হাইস্কুল। এখানে পরিচয় হয় এই স্কুলের দু’জন ছাত্রের সাথে। এখান থেকে তারা দু’জন আমার হাঁটার সঙ্গী হলো। তারা দশম শ্রেণিতে উঠেছে কেবল। আমাকে দেখে তারা বেশ উৎসাহিত। তাদের সাথে গল্প করতে করতে প্রায় চার কিলোমিটার দূরের পুলিয়া বাজার চলে এলাম। যদিও তাদের বাসা আরো অনেক পেছনে ফেলে এসেছি। আমার সাথে হাঁটতে নাকি তাদের ভালো লাগছে। আসার পথে তাদের সাথে আমার পদযাত্রার উদ্দেশ্য শেয়ার করেছি। তারাও খুব অনুপ্রাণিত হয়েছে।
Advertisement
এই যে দীর্ঘ পথ হেঁটে এলাম, অনেক প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে তার আজ সবচেয়ে বড় সাফল্য পেলাম। এই যে দশম শেণিতে পড়ুয়া ছেলে দু’টি, তারা ধূমপান করে সেই অষ্টম শ্রেণি থেকেই। আজও বাসায় ফেরার পথে ধূমপান করার জন্য সিগারেট কিনে এনেছে। মাঝপথে কোথাও আড়ালে বসে ধূমপান করবে। কিন্তু প্যান্টের পকেট থেকে তারা সিগারেট বের করে ফেলে দিয়ে আমাকে প্রতিজ্ঞা করলো, তারা আর কখনো ধূমপান করবে না। যেহেতু মাদকবিরোধী সচেতনতার লক্ষ্যেই কাজটা করছি; সেহেতু এর চেয়ে বড় কোনো সফলতা আছে কিনা বলতে পারবো না। আমি জানি না, তারা ভবিষ্যতে ধূমপান করবে কিনা? তবে আমি বিশ্বাস করি, তারা আর ধূমপান করবে না।
এসইউ/পিআর