দেশজুড়ে

হবিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগে এপিপির প্রকল্পে অনিয়ম

হবিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগে এপিপির পৌঁনে দুই কোটি টাকার একটি প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে বলে জানা গেছে। এই্ অনিয়মের সঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলীর সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।সুত্র জানায়, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী নিজের অফিস, বাসার বিভিন্ন কাজ দেখিয়েও টাকা তোলে নিয়েছেন বলে জানা যায়। এছাড়া জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, আদালত, নার্সিং ইনস্টিটিউট, হাসপাতাল কিংবা জেলখানার নামেও প্রকল্প দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এসব প্রকল্পের কোনো কাজই হয়নি।সুত্র আরো জানায়, এই নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কাজে গাফিলতি ও অফিসে অনুপস্থিতির অভিযোগ রয়েছে। এই গাফিলতির কারণে বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়ন ও পূণঃনির্মাণের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত ৫ কোটি টাকা ফেরত গেছে।২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা তালিকা থেকে জানা যায়, ৭৯টি প্রকল্পের নামে মোট এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা সরকার থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়। যে তালিকায় ২০১৪ সালের ১৯ আগস্ট স্বাক্ষর করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী এমএ মুনিম। এর মধ্যে রয়েছে গণপূর্ত, স্বরাষ্ট্র, সাধারণ প্রশাসন, আইন ও বিচার, উপজেলা কোর্ট বিল্ডিং এবং স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প। এগুলোর মধ্যে শুধু গণপূর্ত বিভাগেরই ২৭টি প্রকল্প দেখানো হয়েছে। যেখানে রয়েছে গণপূর্ত বিভাগের কার্যালয়ের রাস্তা উঁচুকরণ, বাগান মেরামত ও সংস্কারের জন ৩ লাখ, কার্যালয়ের জানালার লক, রং, সিভিল মেরামত ও সংস্কার কাজের জন্য ২ লাখ, দপ্তরের বাংলোতে ২টি এয়ারকুলার স্থাপনের জন্য ৩ লাখ, অফিসের কর্মচারীদের ওয়ার্কশেডের সিভিল মেরামতের জন্য ৩ লাখ টাকাসহ ২৭টি প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৬২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এছাড়াও পুলিশ সুপারের অফিসের সীমানা প্রাচীর মেরামত ও সংস্কার বাবদ ৪ লাখ, পুলিশ লাইনের গেইট ও সীমানা প্রচীর মেরামত ও সংস্কার বাবদ ১ লাখ, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ৫ ইঞ্চি গভীর নলকূপ স্থাপন বাবদ ২ লাখ ৫০ হাজার, জেলা জজ কোর্টের সেমিপাকা ভবন-২ এর ফ্লোর মেরামত ও সংস্কার বাবদ ২ লাখ, হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে ১৫ অর্শ্বশক্তি সম্পন্ন ১টি সাবমারসিবল পাম্প সরবরাহ বাবদ ১ লাখ ৭০ হাজার।এছাড়া সিভিল সার্জনের কার্যালয় মেরামত ও সংস্কার বাবদ ২ লাখ ৫০ হাজার, নার্সিং ইনস্টিটিউটে পানি সরবরাহ, স্যানিটারি মেরামত ও সংস্কার বাবদ ৩ লাখ এবং একটি স্থানে স্ট্যান্ডবাই পাম্প মটর স্থাপন বাবদ আরও ৩ লাখ, জেলা কারাগারে ২৫ অর্শ্বশক্তি সম্পন্ন ১টি সাবমারসিবল পাম্প সরবরাহ ও স্থাপন স্থাপন বাবদ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ বাকি ৫২টি প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ কোটি ১২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছির উদ্দিন ভূঁইয়া জাগো নিউজকে জানান, তার বাসা, কার্যালয় এবং সদর হাসপাতালে দু’য়েকটি পানির আর ছিটেফুটো কাজ ছাড়া কিছুই করা হয়নি। পাম্প বসানো বা বৈদ্যুতিক কাজের কথা তিনি জানেনই না।ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, হাসপাতালের বাথরুমগুলোর কমেট, বেসিনগুলো ভেঙ্গে গেছে অনেক দিন থেকেই। চরম খারাপ অবস্থা। অথচ এগুলোর নামে গত অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল শুনে তিনি হতবাক হন।নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর রেহেনা খাতুন জাগো নিউজকে জানান, তার এখানে কোনো কাজই হয়নি। তিনি ভবনের অনেক ত্রুটি বিচ্যুতির কথা জানিয়ে গণপূর্ত বিভাগকে বার বার চিঠি দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ইনস্টিটিউটের সেনেটারি ও পানি সরবরাহের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের প্রধান সহকারি নলিনী কুমার সিংহ জাগো নিউজকে বলেন, পুলিশ লাইনের গেইট ও সীমানা প্রাচীর আমরা নিজেদের ফান্ড থেকে নির্মাণ করছি। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সীমানা প্রাচীর উচু করার জন্য চিঠি দিয়েছি।জেলা কারাগারের জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, কারাগারে কিছু রঙের কাজ ছাড়া কিছুই হয়নি। পানির পাম্পও বসানো হয়নি। কোন মেরামত বা সংস্কার কাজ হয়নি।এমন অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এমএ মুনিম প্রথমে তালিকা সঠিক নয় বলে দাবি করেন। পরে তালিকাটি তাকে দিলে নিজের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা স্বীকার করে জাগো নিউজকে বলেন, এটি কমবেশি হয়েছে। সে তালিকা চাইলে তিনি তা দিতে অপারগতা জানান। কিছু বিব্রতবোধও করেন। গত ১৪ জুন তিনি খাগড়াছড়ি জেলায় বদলি হয়েছেন কিন্তু এখনো কেন এখানে অবস্থান করছেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে যাকে বদলি করা হয়েছে তিনি আসতে চাচ্ছেননা। তিনি এলেই আমি দায়িত্ব হস্তান্তর করে চলে যাব। সরেজমিন বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখা যায় বাস্তবে এসবের কোনটিতেই তেমন কোন কাজ হয়নি। খোদ নিজ দপ্তরের নামে প্রকল্পগুলোরই কোন কাজ হয়নি। গণপূর্ত অফিস সূত্রে জানা যায়, একই অর্থবছরে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন ও পূণঃনির্মাণ কাজের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত ৫ কোটি টাকা ইতিমধ্যে ফেরত গেছে। এর মধ্যে চীফ জুডিসিয়ালম ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের পৌঁনে ৩ কোটি, মুক্তিযোদ্ধা ভবনের ২০ লাখ, শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ৫ লাখ ও আনসার ভিডিপি অফিসের দেয়াল নির্মাণের ৭ লাখ টাকা উলে­খযোগ্য। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৪ জুন নির্বাহী প্রকৌশলী এমএ মুনিমকে খাগড়াছড়ি জেলায় বদলির আদেশ দেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী। অথচ রোববারও হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে তার নাম ওয়েবসাইটে দেয়া ছিল। তিনি বদলি ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে অফিস সূত্রে জানা গেছে।সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এসকেডি/এমআরআই

Advertisement