জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।
Advertisement
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানিয়েছেন। চুক্তিতে এই নিয়োগ দিয়ে শিগগিরই আদেশ জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব পদাধিকার বলে এনবিআর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
গত বছরের ৩০ জুন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে মোশাররফ হোসেনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়।
গত রোববার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নিয়োগ দেয়া হয়।
Advertisement
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সরকারের সামগ্রিক রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সংস্থা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অর্জিত রাজস্ব দেশের বাজেট বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদের সবেচেয়ে বড় উৎস।
এনবিআরের প্রধান দায়িত্ব শুল্ক-কর আরোপ করা ও তা আদায় করা। এছাড়া শুল্ক নীতি প্রণয়নসহ চোরাচালানরোধ আইন ও বিধি প্রণয়ন বোর্ডের অন্যতম কাজ।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে যোগ দেন। ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল সিনিয়র সচিব হন তিনি।
গত বছরের ৩০ জুন মোশাররফের অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পিআরএল বাতিল করে সরকার তাকে এক বছরের জন্য চুক্তিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নিয়োগ দেয়।
Advertisement
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। তিনি ১৯৮১ সালের ৩০ জানুয়ারি অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগে সহকারী কন্ট্রোলার মিলিটারি অ্যাকাউন্টস পদে যোগদানের মাধ্যমে চাকরি জীবন শুরু করেন।
চাকরি জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি প্রতিরক্ষা, অর্থ বিভাগ এবং হিসাব মহা-নিয়ন্ত্রকের অধীন বিভিন্ন অফিসে কাজ করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং বাণিজ্য, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে কাজ করেন।
মোশাররফ হোসেন ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের (তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়) সেতু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১০ সালের ২৯ জুলাই তাকে সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ১৯৫৭ সালের ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার বালুসাইর গ্রামে।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় মোশাররফ হোসেন গ্রেফতার হয়েছিলেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলার প্রধান আসামি সেতু বিভাগের সাবেক এই সচিব। কারণ ওই সময় সেতু সচিবের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
অভিযোগ ওঠার পর মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকে সেতু বিভাগের সচিবের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। তাকে বসানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানের পদে। এরপর বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে মোশাররফ হোসেনকে ছুটিতেও পাঠানো হয়েছিল। ছুটিতে থাকা অবস্থায় অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানের পদ থেকেও তাকে অপসারণ করা হয়। এ সময় তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। গ্রেফতার হওয়ায় ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত হন তিনি।
যদিও পরে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার দুর্নীতি প্রমাণিত হয়নি। এজন্য তাকে চাকরিতে ফিরিয়ে আনা হয়। এর আগেই বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুর প্রকল্প থেকে সরে গিয়েছিল।
আরএমএম/জেডএ/আরআইপি