দেশজুড়ে

বছরের প্রথম দিনে বই পেয়ে আনন্দে মেতেছে শিক্ষার্থীরা

দেশের প্রতিটি জেলায় নতুন বছরের প্রথম দিনে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং আনন্দমুখর পরিবেশে সোমবার বই বিতরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও নতুন বই পেয়ে আনন্দে মেতেছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বিস্তারিত সংবাদ পড়ুন আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে।

Advertisement

কুড়িগ্রাম : সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বৃহত্তম জনগোষ্ঠী সম্পন্ন বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় জাকজমকপূর্ণভাবে প্রথমবারের মতো বই বিতরণ উৎসব পালন করা হয়েছে। সকালে কালিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রফিকুল ইসলাম।

ফুলবাড়ীর ইউএনও দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার অধিকারী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী, ফুলবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশীদ হারুন প্রমুখ।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পর এই প্রথম হাতে বই পেয়ে আনন্দিত শিক্ষার্থীরা। বইয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করায় খুশি এলাকার মানুষ। নতুন বইসহ নবনির্মিত একতলা স্কুল ভবনে পহেলা তারিখ থেকে শুরু হয়ে ক্লাস।

Advertisement

২০১৫ সালের জরিপ অনুযায়ী বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় মোট শিশুর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২১৩ জন। এর মধ্যে অভর্তি শিশু ছিল ১৭৮ জন। ছিটমহল বিনিময়ের পর বিভিন্ন স্কুলে অধ্যয়নরত শিশুর সংখ্যা ১ হাজার ২৫৫ জন। বিচ্যুতসহ ৮৫৮ জন শিশু পড়াশুনা থেকে ঝড়ে পড়ে।

অধ্যয়নরত শিশুদের মধ্যে ৭২৮ জন বালক এবং ৬২৭ জন বালিকা। এরা সরকারি উদ্যোগে বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় নবনির্মিত তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেল। এছাড়াও ১৪ জন প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে। যাদের মধ্যে ১১ জন বালক ও ৩ জন বালিকা। অপরদিকে ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৩০ জন শিক্ষার্থী বই পেয়েছে এবং ১টি মাদরাসায় ১৮৫ জনের হাতে বই তুলে দেয়া হয়।

রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দুই স্কুলে নতুন বছরের প্রথম দিনে বই বিতরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে রাবির শেখ রাসেল মডেল স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের পৃথক পৃথক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন শ্রেণির বই প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান।

বই বিতরণ উৎসবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান বলেন, আজকের শিশুরাই হবে আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ার কুশলী কারিগর। তাদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার।

Advertisement

রাবি স্কুলের অধ্যক্ষ মো. শফিউল আলমের সভাপতিত্বে বই বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা।

এসময় স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আনসার উদ্দিন, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকার, ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস, প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, স্কুল দুটির উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষকবৃন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : আনন্দমুখর পরিবেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বই উৎসব পালিত হয়েছে। সকালে জেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়। এসময় নতুন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে।

সকাল সাড়ে ৯টায় মডেল সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয় ও সকাল সাড়ে ১০টায় চরমোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এই বই উৎসবের আয়োজন করা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন।

এসময় জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল লতিফ ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।

এবার জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১০ লাখ ২ হাজার ৫৫৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১৮ লাখ ৬২ হাজার ২৮৩টি এবং মাদরাসাগুলোতে ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪৭টি ও এবতেদায়ীতে ২ লাখ ৫২ হাজার ৬৫২টি পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়।

পিরোজপুর : পিরোজপুরে বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণের উদ্বোধন করা হয়েছে। সকালে শহরের করিমুন্নেছা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য এ.কে.এম এ আউয়াল, বিশেষ অতিথি জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম সেখ বই বিতরণ করেন।

অনুষ্ঠানে জেলা প্রথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল লতিফ মজুমদারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম মো. বুলবুল, সুপারিনটেনডেন্ট মোল্যা ফরিদ আহমেদ, শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম ও জিনিয়া ইসলাম প্রমুখ।

২০১৮ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের বিনামূল্যে বই বিতরণ উপলক্ষে জেলা শিক্ষা বিভাগ এ উৎসবের আয়োজন করে।

উল্লেখ্য, নতুন বছরের জন্য জেলার ৭টি উপজেলার মাধ্যমিক স্তরে ৮৬ হাজার ৯৫ জন শিক্ষাথীদের মাঝে ১২ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৪টি বই এবং প্রাথমিক স্তরে ১ লাখ ২৬ হাজার ১৫০ জন শিক্ষার্থীদের মাঝে ৬ লাখ ১৯ হাজার ৮০০টি বই আজ এক যোগে বিতরণ করা হয়।

চাঁদপুর : চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৬ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩৬টি বই বিতরণ করা হয়েছে। দুপুরে চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা সদরের ১০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বই বিতরণ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল।

‘শিক্ষার আলো জ্বালাবো, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো’ এ স্লোগানে বই বিতরণ উৎসবের আয়োজন করে চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. খোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ২০১৫ সালে চাঁদপুর জেলার শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ শুরু করা হয়। এর ফলে সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফলাফলে চাঁদপুর জেলা ৪র্থ হয়েছে। জিপিএ-ফাইভপ্রাপ্ত জেলার মধ্যে তৃতীয় এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে অর্জন হয়েছে ৯৯.৯৭%। বিদ্যালয়ে শিশুদের ভর্তির ক্ষেত্রে সারাদেশে চাঁদপুর জেলা প্রথম সারিতে রয়েছে।

সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার একেএম মোস্তাক আহমেদের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি মঈনুল হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) লক্ষণ চন্দ্র সূত্রধর, সহ-সভাপতি সোহেল রুশদী ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাজমা আক্তার।

৮ উপজেলার মধ্যে চাঁদপুর সদরে ৩ লাখ ১২ হাজার, ৮৬৪, কচুয়া উপজেলায় ২ লাখ ৮০ হাজার ২শ, হাজীগঞ্জে ২ লাখ ৯ হাজার ৪শ, হাইমচরে ৮০ হাজার ৩২২, শাহরাস্তিতে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪শ, ফরিদগঞ্জে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭২০, মতলব দক্ষিণে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫০, মতলব উত্তরে ২ লাখ ৬ হাজার ৫৯৮ বই বিতরণ করা হয়।

এর পূর্বে বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসক হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করেন। এছাড়াও একই সময় শহরের মাতৃপীঠ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং মাদরাসায় বই বিতরণ করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি : নতুন বছরের প্রথম দিনে খাগড়াছড়ির পাহাড়ে পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন বইয়ের গন্ধ। সোমবার উৎসবমুখর পরিবেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে নতুন বই। নতুন বই হাতে খুশিতে মাতোয়ারা হয়ে উৎসবের আমেজে বাড়ি ফিরেছে শিক্ষার্থীরা।

বেলা ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কুকিছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন বই তুলে দিয়ে পাঠ্যপুস্তক উৎসব উদযাপন করেন ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।

এসময় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মো. আলী আহমদ খান ও খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রাক-প্রাথমিকের পর এ বছর প্রথম শ্রেণিতেও চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে স্ব-স্ব মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে জানিয়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী জাগোনিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী দিনেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

২০১৮ শিক্ষাবর্ষে খাগড়াছড়ির ৭০৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১ লক্ষ ২১ হাজার ৮৮৭ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৪ লক্ষ ৯৮ হাজার ২৪২টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন।

এছাড়াও প্রাক-প্রাথমিকে ১১ হাজার ৫৩২ জন এবং প্রথম শ্রেণিতে ৯ হাজার ১৯১ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থী পাবে স্ব-স্ব মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক।

এমএএস/এমএস