জাতীয়

রফতানি বাড়াতে নতুন বাজার খুঁজতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশে তৈরি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন বাজার খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Advertisement

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সামনে আরও এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের পণ্যের প্রসার ঘটাতে হবে। নতুন নতুন পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি রফতানিও বাড়াতে হবে। কোন কোন দেশে আরও বাজার আছে তাও খুঁজে বের করতে হবে। তবেই আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে যাবে।

আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে ২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশ গড়তে এসেছি। নিজেদের ভাগ্য গড়তে নয়। এ দেশের মানুষ ভালো থাকবে, উন্নত জীবন পাবে সে লক্ষ্য মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমরা এমনভাবে গড়ে তুলতে চাই যাতে দেশের প্রতিটি নাগরিক গর্বের সঙ্গে চলতে পারে, বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার ওষুধ শিল্পকে প্রডাক্ট অব দ্যা ইয়ার ঘোষণা করেন। গত বছরে চামড়া শিল্পকে প্রডাক্ট অব দ্যা ইয়ার ঘোষণা করা হয়েছিল।

এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরঅান, গীতা, ত্রিপেটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করা হয়। এর পর ব্যাবসা বাণিজ্য ও সরকারের উন্নয়নের উপর তথ্যচিত্র "উন্নয়নের অগ্রযাত্রা" প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল অাহমেদ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত্র স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ ঘোষ ও এফবিসিসিঅাই এর সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এতে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান বিজয় ভট্রাচার্য।

Advertisement

বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল অাহমেদ

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাণিজ্য মেলা ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে সেতুবন্ধনের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। ক্রেতাদের চাহিদা মোতারবক বিক্রেতারা নতুন নতুন পণ্য সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীরা যেন সব সুযোগ সুবিধা পায় তার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। শিল্প এবং কৃষি দুটোতেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প যাতে গড়ে ওঠে এবং প্রসার লাভ করে সেজন্য প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। বিনিয়োগ বাড়াতে নীতিমালা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করা হয়েছে। যাতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পান।

শেখ হাসিনা বলেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের সামাজিক উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের তাদের কাছে বিস্ময়। ২০৫০ সালে পশ্চিমা দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সক্ষমতা অর্জন করেছে। এখন কারো কাছে হাত পেতে চলে না। এখন উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় করা হচ্ছে। এছাড়া আমদানি পণ্যে ৭৫ ভাগ অর্থ ব্যয় করছে। এ সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি। আমাদের লক্ষ্য জাতির পিতার সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদন হয়। এর উপর ভিত্তি করে দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছি। শিল্পের ক্ষেত্রে সমুদ্র সম্পদকেও কাজে লাগানোর কথা বরেছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে বাণিজ্যিকভাবে উন্নয়ন করতে কাজ করছি। পাশাপাশি নতুন পণ্য উৎপাদন ও এসব পণ্যের গুণগত মান যাতে বজায় থাকে সে দিকেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। আমরা কারো কাছে হাত পেতে চলবো না। দেশ গড়তে এসেছি, নিজের ভাগ্য গড়তে নয়। প্রধানমন্ত্রিত্ব অল্প সময়ের, এই সময়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য কতটুকু গড়তে পারি সেটাই লক্ষ্য। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নাগরিকরা যাতে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এটা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুও চেয়েছিলেন।

এ সময় তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশি পণ্যের প্রসার ঘটানোর জন্য নতুন দেশ, নতুন জায়গাল, নতুন বাজার খুজে বের করতে হবে। এ কারণে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে। আইসিটির যেসব পণ্য আমরা ব্যবহার করি তা আমরা আমাদের দেশে তৈরি করতে পারি। দেশের মানুষের ব্যবহার ছাড়াও এসব পণ্যে রফতানিও করতে পারি। বাংলাদেশি পণ্যের প্রসার ঘটানোর জন্য ১২টি দেশে নতুন দূতাবাস ও ১৭টি মিশন খুলে দেয়া হয়েছে। এ সবের মাধ্যামেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিযে যাব।

শেখ হাসিনা বলেন, একটি প্রদেশ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছেন। এ কারণেই আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট করতে পারছি। শোষিত বঞ্চিত নিপিড়িত মানুষের জীবন মান উন্নয়নের জন্যই বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালে যখন মন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি তেজগাঁওয়ের শিল্প এলাকার স্থান নির্ধারণ করেছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরিত্যাক্ত শিল্পগুলোকে কীভাবে দাঁড় করানো যায় সে উদ্যোগ তিনি নিয়েছে। বিসিক শিল্প নগরির উদ্যোগও তিনিই নিয়েছিলেন। অর্থাৎ যখনই তিনি সুযোগ পেয়েছেন তখনই তিনি কিছু একটা করার চেষ্টা করেছেন।

এবারের বাণিজ্য মেলায় ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, নেপাল, জাপান, আরব-আমিরাতসহ কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ীরা অংশ নিচ্ছেন।

মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় থাকছে সিসি ক্যামেরা। পাশাপাশি থাকছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আনসার, পুলিশ, বিজিবি-র‌্যাবের পাশাপাশি কর্মরত থাকবেন সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা।

এফএইচএস/এমবিআর/জেআইএম