বিশেষ প্রতিবেদন

উপ-সচিবদের গাড়ি : সেবার মান জানতে সমীক্ষার তাগিদ

সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবের পর চলতি বছর উপ-সচিবদের জন্য গাড়ি কিনতে ৩০ লাখ টাকা করে সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে তাদের গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাড়িয়ে প্রতি মাসে করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। উপ-সচিবদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সঙ্গে নিজস্ব গাড়ির জন্য এমন সুবিধা দেয়ায় বেড়েছে সরকারি ব্যয়।

Advertisement

কিন্তু উপ-সচিবরা এ সুবিধা পেলেও প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্য ক্যাডারের একই পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের এর আওতায় আনা হয়নি। এমনকি অন্য সরকারি কর্মচারীদের মর্যাদা অনুযায়ী গাড়ির ঋণের সুবিধাও দেয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ তারা।

আর বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য এ প্রণোদনা দেয়া হলেও এতে তাদের সেবার মান কতটুকু বেড়েছে তা জানতে সমীক্ষার প্রয়োজন।

দুই বছর আগে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা। এছাড়া মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতার প্রচলন করেছে সরকার। এসব সুবিধার বাইরেও চলতি বছরে উপ-সচিবদের দেয়া হয় সুদমু্ক্ত ঋণ দিয়ে গাড়ি কেনার সুযোগ।

Advertisement

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অসন্তোষ সত্ত্বেও গাড়িসেবা নগদায়ন নীতিমালায় পরিবর্তন আনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়।

গাড়ি কেনা, রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, ট্যাক্সসহ অনুষঙ্গিক খরচ নির্বাহের জন্য এককালীন সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম ঋণ ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ লাখ টাকা করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।

একই দিনে পৃথক এক প্রজ্ঞাপনে গাড়ি মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি, চালকের বেতন, সব খরচ বাবদ মাসিক ব্যয় ৪৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

গত ১১ জুন গাড়ি প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মর্যাদা পান উপ-সচিবরা। এরই ধারাবাহিকতায় গাড়িসেবা নগদায়নের সুবিধাও পাচ্ছেন তারা। কিন্তু সরকারি ঋণে সুদমুক্ত টাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি ও সরকারি টাকাতেই গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ চান সব কর্মকর্তারাই।

Advertisement

উপ-সচিবরা শুধু এ সুযোগ পেলেও অন্য ক্যাডারের একই পদমর্যাদার কর্মকর্তারা সে সুযোগ পাচ্ছেন না। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা ও কর্মচারীরা। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, উপ-সচিবরা গাড়ি সুবিধা পাওয়ার পর তাদের কাজ ও সেবার মানের কী অবস্থা কিংবা সেবার মান আগের তুলনায় কতটুকু বেড়েছে তা জানতে সমীক্ষার দরকার।

এছাড়া উপ-সচিবদের এ সুবিধা দেয়ায় বেড়ে গেছে ব্যয়ের পরিমাণ। সেইসঙ্গে প্রশাসনে বিরাজমান বৈষম্য আরও বেড়ে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষির মতো বড় আকারের ক্যাডারসহ ২৭টি ক্যাডার কর্মকর্তাদের এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার প্রভাবও পড়বে সরকারি বিভিন্ন সেবা ও কাজে।

এসব বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সেন্টার ফর পলেসি ডায়ালগ’র (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, অন্যান্য সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে সরকারি চাকরিজীবীদের। ফলে যেসব উদ্দেশ্য ছিল,তার ফলাফল আসছে কিনা- এটার জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকা দরকার। তাদের কাজকর্মের একটা মূল্যায়ন হওয়া উচিত এবং সেটি স্বাধীনভাবে করা যেতে পারে। সরকারেরও এ ধরনের একটা চিন্তা-ভাবনা থাকা উচিত।

দেশে বর্তমানে ক্যাডার সার্ভিস রয়েছে ২৭টি। এর মধ্যে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা উপ-সচিব পদে পদোন্নতি পান। অবশিষ্ট কর্মকর্তারা উপ-সচিব না হয়ে নিজস্ব ক্যাডার লাইন পদে থেকে যান। তবে অন্য ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে উপ-সচিব করা নিয়েও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। ১০ থেকে ১২ বছর চাকরির বয়স হলেই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপ-সচিব হতে পারেন। কিন্তু অন্য ক্যাডার থেকে উপ-সচিব হতে ১৮ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

এমইউএইচ/এসআর/এএইচ