মানুষ সারা বছর জুড়েই কর্মব্যস্ত জীবন কাটায়। দিন, মাস, বছর ঘুরে প্রতিটি মানুষের দ্বারে হাজির হয় রমজান মাস। যার মর্যাদা মুসলিম মাত্রই অবগত। এই রমজান মাসের ইবাদত-বন্দেগিতে উৎসাহ-উদ্দীপনা জাগ্রত করার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানকে কয়েকভাগে ভাগ করেছেন। যার প্রথম দশক হল- রহমতের; দ্বিতীয় দশক হল- মাগফিরাতের; আর তৃতীয় দশক- নাজাতের।নাজাতের দশকে একটি রাত হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর। যার ঘোষণা আল্লাহ দিয়েছেন-হাজার মাসের চাইতেও উত্তম। সুতরাং আজ মানুষ যে আমলই করুক না কেন, হিসাব মত প্রতিটি ইবাদত হবে হাজার মাসের ইবাদতের সমান। তাইতো নাজাতের দশক আসলেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমড়ে কাপড় বেঁধে ইবাদত-বন্দেগিতে লেগে যেতেন এবং পরিবারের সবাইকে ইবাদত বন্দেগি করতে বাধ্য করতেন। সুতরাং আমাদেরও এই রজনীগুলোতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও অনুরকণ করে ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন হওয়া ঈমানের অপরিহার্য দাবি।ফরজ ইবাদতগুলোর মধ্যে প্রথম ও অন্যতম প্রধান ইবাদত হচ্ছে নামাজ। আল্লাহ আমাদের উপর দিনে ও রাতে ১৭ রাকাআত নামাজ ফরজ করেছেন। যা মানুষ হেলায় ফেলায়, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় পরিত্যাগ করে থাকে। এই নামাজ পরিত্যাগী মানুষের জন্য আজকের রজনী অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যারা সারা বছর ধরে পরিপূর্ণ নামাজ আদায় করতে পারেননি। তাদের জন্য আজ সুবর্ণ সুযোগ। তারাবিহ নামাজ শেষ করেইআমরা ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব ও ইশার নামাজ আদায় করব। অর্থাৎ আমাদের বিগত জীবনের ছুটে যাওয়া নামাজকে ক্বাযা পড়ব। আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, ‘লাইলাতুল ক্বাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর’ সুতরাং আজকের রজনীতে যত ইবাদত করা হবে; তার প্রত্যেকটিতেই হাজার মাসের ইবাদতের প্রতিদান পাওয়া যাবে। যার আশারবানী শুনিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা।সুতরাং আমরা যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজ নামাজগুলো ক্বাযা পড়ি; তাহলে হাজার মাস বেঁচে থেকে নামাজ আদায় করার ছাওয়াব লাভ করব। পক্ষান্তরে যাদের নামাজ জন্মলগ্ন থেকে ক্বাযা গিয়েছে তাদের জন্য তো মহাসুযোগ এই রাত্রিতে নামাজ আদায়ে বিগত জীবনের সব ক্বাযা নামাজের আদায় সম্পন্ন করা যেতে পারে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করন। আমিন।প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আজ আমরা তারাবিহ নামাজের পর-১. ফজরের ২ রাকাআত ফরজ;২. যোহরের ৪ রাকাআত ফরজ;৩. আসরের ৪ রাকাআত ফরজ;৪. মাগরিবের ৩ রাকাআত ফরজ;৫. ইশার ৪ রাকাআত ফরজ এবং৬. তিন রাকাআত বিতর নামাজ ক্বাযার নিয়্যতে পড়ব। লাইলাতুল কদরে বিশেষভাবে পাঠ করার একটি দোয়াও রয়েছে। প্রত্যেক রাকাআতের নামাজ শেষে আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিখানো দোয়াই পড়ব। দোয়া প্রসঙ্গে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমি যদি লাইলাতুল ক্বদর পাই, আমি তাতে কি বলবো, উত্তরে তিনি বললেন, তুমি বলবে “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন কারীমুন; তুহিববুল আফওয়া; ফা’ফু আন্নি” অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, মহানদাতা, ক্ষমা করাকে ভালোবাসেন। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।” তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, মুস্তাদরেকে হাকেম)। ইবনে মাজাহ’র বর্ণনা হচ্ছে এই : হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি দেখেছেন আমি লাইলাতুল কদর পেলে কি দোয়া করব? তিনি বললেন, তুমি বলবে- “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন কারীমুন তুহিববুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি”। সুতরাং এই দোয়াটি অধিক হারে পাঠ করা। আজকের রাতে আমরা আমাদের বিগত জীবনের ক্বাযা নামাজগুলো পড়ে নিজেদেরকে শুধরে নিতে চেষ্টা ত্রুটি করব না। করব না অলসতা। আল্লাহ আমাদের ইবাদত- বন্দেগিতে রহমত ও বরকতের ব্যবস্থা করুন। আমিন।জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগী যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন।|# আজ পবিত্র লাইলাতুল ক্বদরএমএমএস/এআরএস/এমএস
Advertisement