দেশজুড়ে

বিকেলেই ডুবে গেল ২০১৭ সালের শেষ সূর্য

রোববারের সূর্যটি সন্ধ্যার আকাশে ডুব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কালের গহ্বরে হারিয়ে গেল ২০১৭ সাল। অনেক প্রাপ্তি, হতাশা, ক্লান্তি আর রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেষ হলো আরও একটি বছর।

Advertisement

তবে সূর্য ডুবার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়নি। হয়তো বর্ষ বিদায়ের শোকে দুপুর থেকেই মুখ গোমড়া করে রেখেছিল কক্সবাজারে আকাশ। তাই বছরের শেষ সূর্যের লাভা ক্ষীণ ছিল। সোমবারের সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু হবে নতুন বছর ২০১৮ সালের।

৩৬৫ দিনের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব পেছনে ফেলে পরিচ্ছন্ন আগামীর প্রত্যাশায় ২০১৮ সালকে স্বাগত জানাতে রোববার বিকেল থেকে সৈকতে জড়ো হয় কয়েক লাখ পর্যটক।

উন্মুক্ত কোনো আয়োজন না থাকলেও নিজেদের মতো করে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও সংশ্লিষ্টরা। তাদের পদভারে মুখর হয়ে উঠে পৃথিবীর দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত।

Advertisement

এবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞায় খোলা স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইটের কোনো আয়োজন নেই। তবে তারকা কয়েকটি হোটেল স্ব-উদ্যোগে আভ্যন্তরীণ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

শনিবার বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, অসংখ্য পর্যটকে ভরপুর সৈকত। শীত উপেক্ষা করে শান্ত সমুদ্রে নেমে পানির সান্নিধ্য নিচ্ছেন বহু পর্যটক। কেউ আবার বালুচরে দাঁড়িয়ে সাগরের গর্জন আর সূর্যাস্ত উপভোগ করেছেন।

কক্সবাজারে সরকারি সেবামূলক একটি বিভাগের সহকারী পরিচালক জামাল হোসেন (৩৮)। ভিন্ন জেলার অধিবাসী হিসেবে থার্টি ফার্স্ট নাইটে অংশ নেয়া বা বছরের শেষ সূর্যাস্ত দেখতে সৈকতে আসা হয়নি কখনো। এবার চাকরির সুবাদে কক্সবাজার থাকায় সহকর্মী আরিফুল ইসলামকে নিয়ে সন্ধ্যার আগে বালিয়াড়িতে নামের তারা। সাক্ষী হন ২০১৭ সালের বিদায়ী সূর্যাস্তের। এটি খুবই উপভোগ্য বলে মনে করছেন জামাল হোসেন।

তার মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারার সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধ মন্দির, ইনানী পাথুরে বিচ এবং সেন্টমার্টিন ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করেছেন অনেকেই।

Advertisement

দেশ-বিদেশের অতিথির পাশাপাশি স্থানীয় ভ্রমণপ্রেমীরাও বর্ষ বিদায়-বরণে বালিয়াড়িতে উপস্থিত হন। সন্ধ্যার পর থেকে ভিড় জমিয়েছে চলমান কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্য মেলায়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চড়েছেন নাগরদোলা, নৌকা ও রেল রাইডসে। আনন্দ নিচ্ছেন জাদু, মোটরসাইকেল খেলা দেখে। স্বাচ্ছন্দ্যে পর্যটকরা কিনছেন পরিবার ও নিজের প্রয়োজনীয় সাজ পণ্য। এবারের থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন আয়োজনে এসব রয়েছে।

এদিকে, বিপুল সংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ অন্য আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এইচ এম রায়হান কাজেমী।

হোটেল-মোটেল জোনের মোহাম্মদীয়া গেস্ট হাউসের ব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান বলেন, বছরের শেষ দিন সারাদেশ থেকে লোকজন কক্সবাজার সৈকতে ছুটে আসেন। অনুষ্ঠান না থাকলেও বিগত সময়ের মতো থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে সৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। এতে যোগ দেয় স্থানীয়রাও।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ জানান, থার্টি ফার্স্ট নাইটে দেশের সবচেয়ে বড় মিলন মেলা বসে কক্সবাজার সৈকতে। এ উপলক্ষে শহরের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, বাংলোর সব কক্ষই অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। অতিথি সেবায় প্রশাসনের সব স্তরের সদস্যরা সচেষ্ট রয়েছেন। থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে আগামীতে সৈকতে উন্মুক্ত বিনোদনের নানা ক্ষেত্র তৈরিতে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে, সৈকতের হোটেল-মোটেল জোন, কলাতলী, তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস, দ্যা কক্স টু ডে, সি-গাল, লং-বিচ, সি-প্যালেসসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে রঙবেরঙের আলোকসজ্জায় রঙিন করে তুলেছেন হোটেল-মোটেল জোন।

আভ্যন্তরীণ গেস্টদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস, সায়মন বিচ রিসোর্ট। সন্ধ্যা থেকে ২০১৮ সালের প্রথম প্রহর পর্যন্ত বিনোদন দেবে তারা।

ওশ্যান প্যারাডাইস’র পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, অতিথিদের চাহিদার কারণে বলরুমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাইরের গেস্টদের জন্য হোটেলের ছাদের খোলা রেস্তোরাঁয় আয়োজন করা হয় মুক্ত সংগীতানুষ্ঠান। সঙ্গে ছিল রসালো ম্যানোতে কমমূল্যে ব্যুফে ডিনার।

সায়মন বিচ রিসোর্টেও তারকা কণ্ঠশিলী তাহসান, সৈকত শিল্পী জাহিদ আভ্যন্তরীণ গেস্টদের বিনোদিত করছেন বলে জানিয়েছেন হোটেলের ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ ম্যানেজার ইমরান হোসেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, সৈকতে আসা বিপুল পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশসহ একাধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিচসহ পুরো পর্যটন এলাকায় সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন।

এএম/জেআইএম