জাতীয়

সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাগ সরবরাহ বন্ধ

সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাগ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। দেশের একমাত্র ব্লাড ব্যাগ উৎপাদনকারী এ প্রতিষ্ঠানটির ব্লাড ব্যাগের গুণগত মান নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে অভিযোগ উঠায় ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মো. জাফরউল্যাহ্ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত হাসপাতালগুলোতে রক্তের ব্যাগ সরবরাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন হাসপাতালের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে অত্যন্ত নিম্নমানের  ব্লাড ব্যাগ সরবরাহ করা হচ্ছিল। ডোনারের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করে ওই ব্যাগে রাখার  পর জমাট বেঁধে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল।জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর পরিচালক ডা. মো. জাফরউল্যাহ্ নির্দেশে  ব্লাড ব্যাগের গুণগত মান সঠিকভাবে যাচাইবাছাই ও মানসম্মত  ব্লাড ব্যাগ উৎপাদনে তদারকি/পর্যবেক্ষণ করার জন্য ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধায়ক (ডিপিটি) ডা.সেতারুন নাহারকে সভাপতি ও ডিএল শাখার জীবানুবিদ ডা. শাফিয়া শাহিনকে সদস্যসচিব করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, রি-এজেন্ট শাখার বায়োকেমিস্ট মো.আমিনুল হক আখন্দ ও মো. আবদুল মান্নান। কমিটির পর্যবেক্ষণ ছাড়া কোন ব্লাড ব্যাগ ব্যবহার কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা যাবে না মর্মে নির্দেশনা জারি হয়।কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যেই ব্লাড ব্যাগে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে কাজ শুরু করেছেন। বর্তমানে ব্লাড ব্যাগ সরবরাহ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে রক্ত সংগ্রহের কাজ সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে দেশে স্বাস্থ্য অধিদফতরাধীন একমাত্র জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটেই ব্লাড ব্যাগ উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত ব্লাড ব্যাগ রাজধানীসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) প্রকাশিত হেলথ বুলেটিন-২০১৪ তথ্যানুসারে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে জনস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটে যথাক্রমে  চার লক্ষাধিক রক্তের ব্যাগ উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ৮৫হাজার ৮শ ব্যাগ, ২০১০ সালে ৮৩ হাজার ৮৯০ ব্যাগ, ২০১১ সালে ৬২ হাজার ২৭২ ব্যাগ, ২০১২ সালে ১ লাখ ৫ হাজার ৫২৩ ব্যাগ ও ২০১৩ সালে ৬৬ হাজার ১১৭ পিস রক্তের ব্যাগ উৎপাদন হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক ডা.আসাদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিএসএমএমইউতে প্রতিদিন ১৭০ থেকে ১৮০ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করতে হয়। তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে তারা রক্ত সংগ্রহের ব্যাগ কিনে নিতেন। কিন্তু সম্প্রতি তারা দেখেছেন, ব্লাড ব্যাগে রক্ত রাখার সঙ্গে সঙ্গে তা জমাট বেঁধে যায়। অনেক সময় ব্যাগ ছিঁড়েও যাচ্ছে। এ কারণে তারা চিঠি দিয়ে বিষয়টি জনস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটকে অবহিত করেছেন। অভিযোগ রয়েছে এক শ্রেনীর সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী  ঠিকাদার চক্র  জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিম্নমানের কাঁচামাল সরবরাহ করছে। নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহারের কারণে উৎপাদিত ব্লাড ব্যাগে রক্ত সংগ্রহ করলে তা জমাট বেঁধে যাচ্ছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ব্লাড  ব্যাগ উৎপাদনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হয়। এছাড়া ব্যাগ উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত মেশিনগুলোও পুরোনো। তাই কি কারণে ব্লাড  ব্যাগে রক্ত জমে যাচ্ছে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হবে না। কমিটির সদস্যরা সম্ভাব্য সব কারণই খতিয়ে দেখছেন। কেউ কেউ আবার জনস্বার্থে সঠিক কারণ অনুসন্ধানে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে ব্লাড ব্যাগের নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে অভিমত দিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে সোমবার এ প্রতিবেদক জনস্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউটের পরিচালক ডা. জাফরউল্যাহর সাথে একাধিকবার চেষ্টা করলেও ব্যস্ততার অজুহাতে তিনি সাক্ষাতকার দেননি। তার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি জানার পর পরই স্যার কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের কমিটি করে দিয়েছেন।এমইউ/এসআইএস/এআরএস/পিআর

Advertisement