নড়াইলে কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল, বীজতলা, পানের বরজসহ মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। এতে প্রায় ২৯ হাজার কৃষি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক জাগো নিউজকে জানান, কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণে নড়াইলে ৫ হাজার ৯৯৫ হেক্টর জমির আমন-আউশ, ৫৭০ হেক্টর রোপা-আমন জমির বীজতলা, এক হাজার ২৩৫ হেক্টর জমির মৌসুমি ফসল এবং ৪৫ হেক্টর জমির পানের বরজের ক্ষতি হয়েছে। এতে জেলার ২৮ হাজার ১৪৫টি কৃষি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আর্থিকভাবে বিবেচনা করলে কৃষকের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকা। সরেজমিন জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার তুলারামপুর, হাতিয়ারা, বাকলি, চাচড়া, বড়কুলা, মির্জাপুর, শিংগাসোলপুর, বাসগ্রাম, কালিয়া উপজেলার পাটেশ্বরী, রামপুর, বাবরা, চাচুড়ি, যোগানিয়া লোহাগড়া উপজেলার শরসুনা, নলদী, ব্রাহ্মণডাঙ্গা, মিঠাপুর, মাউলির বিলসহ ছোট-বড় অসংখ্য বিলের বেশিরভাগ ফসলি জমি, বীজতলাসহ মৌসুমি ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সদর উপজেলার হাতিয়ারা গ্রামের কৃষক কৃঞ্চ বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ১০ হাজার টাকা দাদন নিয়ে পাঁচ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগাইছিলাম। লাগানো ধান বৃষ্টির জলে তলাইয়ে গেছে। হাটু সমান জল না সরলি ধান জাগে উঠপে নানে। মহাজনের সুদ আমি কিভাবে মিটাবানি। শেখহাটি ইউনিয়নের তপনভাগ গ্রামের মাখন দাস জাগো নিউজকে বলেন,বৃষ্টির জলে আমার তিনটি পানের বরজের মাটির ফিলি ধুয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আমার প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, এলাকার কয়েক’শ পানের বরজের ক্ষতি সাধন হয়েছে। সদর উপজেলার নাকশি-মাদরাসা গ্রামের মৎস্য চাষী রেজাউল মল্লিক জাগো নিউজকে বলেন, আমার তিন একর জমির ওপর চিংড়ি ঘের। গত সাত-আট দিন টানা বৃষ্টিতে ঘের ভেসে সব মাছ পানিতে বেরিয়ে গেছে। প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। জেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করা হলে অফিস সহকারী মো. সেকেন্দার মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, অবিরাম বর্ষণে কি পরিমাণ মাছের ঘেরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। কালিয়া উপজেলার পাটেশ্বরী গ্রামের মোস্তফা বিশ্বাস জাগো নিউজকে জানান, বিল তলিয়ে সব শেষ হয়ে গেছে। বিলের চারপাশের ছয়টি গ্রামের প্রায় তিন হাজার কৃষক পথে বসেছে। সরকারি সাহায্য ছাড়া এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। পাঁচগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মধুমতি নদীর পাশেই পাটেশ্বরী বিল। কৃষিনির্ভর মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হলো পাটেশ্বরী বিলের জমি। সেই বিলের জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রায় শতাধিক সাদা এবং চিংড়ি মাছের ঘের ভেসে গেছে। কৃষি এবং মাছ ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা। লোহাগড়া উপজেলার মিঠাপুর গ্রামের আব্দুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মিঠাপুর বিলে আশপাশের আটটি গ্রামের প্রায় আড়াই হাজার কৃষি পরিবারের জমি আছে। জমির সমস্ত ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি বেরোনোর কোনো ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে মৌসুমি ফসল মরিচ, করল্লা, খিরাই, কাকরোলসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। হাফিজুল নিলু/এসএস/এমএস
Advertisement