তার সামর্থ্য নিয়ে সংশয় নেই অতিবড় সমালোচকেরও। থাকার কথাও নয়। অভিষেকের পর সৌম্য সরকার অনেকবারই সামর্থ্যরে প্রমাণ রেখেছেন। ২০১৫ সালে শেরে বাংলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ১১০ বলে ১২৯ রানের ঝড়ো সেঞ্চুরি, আর একই বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পরপর দ্ইু ম্যাচে ঝড়ের গতিতে একজোড়া হাফ সেঞ্চুরি (৭৯ বলে ৮৮, আর ৭৫ বলে ৯০) ইনিংস তিনটি যে এখনো সবার চোখে লেগে আছে!
Advertisement
কি ডাকাবুকো উইলোবাজিই না করেছিলেন! তামিম ইকবালের মত আক্রমণাত্মক উইলোবাজের পাশেও সমান উজ্জ্বল ছিলেন সাতক্ষীরার এ বাঁ-হাতি ওপেনার। সবার আশা ছিল, দেশ এক সত্যিকার ড্যাশিং ওপেনিং ব্যাটসম্যান পেয়ে গেছে। যে কোন ধারালো পেস বোলিংয়ের বিপক্ষেও যার আছে বুক চিতিয়ে আক্রমণাত্মক শটস খেলার সহজাত ক্ষমতা।
উইকেটের সামনে ও দুদিকে সমান সাবলীল, ব্যাটের নাগালের মধ্যে কিংবা খাট লেন্থের ডেলিভারি পেলে আর কথা নেই। সৌম্যর ব্যাটের ছোঁয়ায় তা চলে যেত সীমানার ওপারে। শুরুর গল্পটা এমনই। এরপর প্রায় দুই বছর বেশ আলো ছড়িয়েছে সৌম্যর ব্যাট।
কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে, সেই ঔজ্জ্বলতা কমে কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে সৌম্যর ব্যাটের ধার। রান খরা এসে ভর করেছে। বিশেষ করে গত ছয়-সাত মাসে সৌম্য যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন।
Advertisement
এ বছর ১৯ মে ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৮ বলে ৮৭* রানের দারুণ এক ইনিংস খেলার পর একদম নিষ্প্র্রভ। পরের ছয় ওয়ানডেতে রান মোটে ০+২৮+৩+৩+০+৮ = ৪২। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে মাত্র দুটি টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেয়ে অবশ্য চেষ্টা করেছেন কিছু করার (একটিতে ২৭ বলে ৪৪ আর অন্যটিতে ৩১ বলে ৪৭ রান)।
কিন্তু এরপর ঘরের মাঠে বিপিএলে নেমে চরম ব্যর্থ। চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে ১০ ম্যাচে (০+৩০+৩২+১+৩০+১+১৩+০+১৭+৩০) করেছেন মোটে ১৫৪ রান। এই খারাপ ফর্মের কারণেই ক্রিকেট অনুরাগি মহলে অষ্ফুট গুঞ্জন; তিন জাতি টুর্নামেন্ট আর হোম সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কী দলে জায়গা হবে সৌম্য সরকারের?
শুধু ক্রিকেট অনুরাগিদেও মধ্যে গুঞ্জন বললে, সম্ভবত কম হয়ে গেলো। ভিতরের খবর টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরাও নাকি সৌম্যর অফ ফর্মটাকে বড় করে দেখছেন। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এ বাঁ-হাতি ওপেনারের সাম্প্রতিক খারাপ ফর্মে হতাশ ও অসন্তুষ্ট নির্বাচকরা।
ফর্মহীন সৌম্যকে শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ত্রি-দেশীয় টুর্নামেন্ট ও লঙ্কানদের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে দলে নেয়া নিয়েও নাকি নির্বাচকরা এবং টিম ম্যানেজমেন্ট রীতিমত দোটানায়। জানা গেছে, সৌম্য সরকারকে আপাতত একটা বিশ্রাম বা ব্রেক দেয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে।
Advertisement
নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের ঘনিষ্ট সূত্র জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, সৌম্যকে তিন জাতি আসর ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে বাইরে রাখার কথাই ভাবা হচ্ছে। নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করছে, সৌম্যর একটা ব্রেক দরকার।
একটি বিশেষ কারণে সৌম্যর কপাল পোড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তাহলো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশ জিততে মরিয়া। সেখানে সৌম্যর সাথের ওপেনারদের মধ্যে ইমরুল কায়েস বিপিএলে বেশ ভাল খেলেছেন। এনামুল হক বিজয়ও বিপিএলে রান করে আবার দলে ফেরার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছেন। অন্যদিকে লিটন দাসও ধীরে ধীরে আবার নিজেকে খুঁজে পেতে শুরু করেছেন। সেখানে সৌম্যর জায়গা করে নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, শ্রীলঙ্কার সাথে জয়টা অনেক কারণেই খুব জরুরি। এই ভেবে নির্বচকরাও অফ ফর্মের সৌম্যকে দলে নিতে দ্বিধায়। সবচেয়ে বড় কথা, বিপিএলে সৌম্য যে দলে খেলেছেন, সেই চিটাগং ভাইকিংসের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ছিলেন প্রধান নির্বাচক ও দেশ বরেণ্য সাবেক ব্যাটসম্যান মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।
সৌম্যকে নেটে এবং ১০ ম্যাচে পাখির চোখে পরখ করেছেন নান্নু। জানা গেছে, সৌম্যর সাম্প্রতিক ফর্মে নাকি তিনিও হতাশ। কাজেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং সিরিজে সৌম্যকে নেয়া মানে বাড়তি ঝুঁকি।
তার চেয়ে বরং যারা রানে আছেন, তাদেরকে দলে নেয়াই নিরাপদ ভাবা হচ্ছে। যতদুর জানা গেছে, তাতে তামিম, ইমরুল ও লিটন দাসের ওপরই আস্থা বেশি। সাথে এনামুলক হক বিজয়ও আছেন বিশেষ বিবেচনায়। সেখানে সৌম্য আসলে পিছিয়েই পড়েছেন।
কাজেই ধরেই নেয়া যায়, তিন জাতি টুর্নামেন্ট ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজে সৌম্য হয়ত বাদই পড়তে যাচ্ছেন। তার দলে থাকার সম্ভাবনা খুব কমই।
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম