দেশজুড়ে

ফল বিপর্যয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও সচেতন মহল

গত এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেশের সকল বোর্ডের মধ্যে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের ধারাবাহিক ফলাফল বিপর্যয়ের পর এবার জেএসসির ফলাফলের জন্য অভিভাবক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ বোর্ড কর্তৃপক্ষকে দুষছেন।

Advertisement

অনেকে সরাসরি বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে দায়ী করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা ও কুমিল্লা নগরীর একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বলেন, সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রায় এক যুগ ধরে এ বোর্ডে কুমিল্লা সদর উপজেলার বাসিন্দা কায়সার আহমেদ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদে আছেন। তিনি অসম্ভব প্রভাবশালী। পরীক্ষার ফলাফল ও শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নেই, কিন্তু পরীক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অশোভন আচরণসহ নানা কারণে তাকে নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে।

শনিবার দুপুরে জেএসসি’র এমন ফলাফলের বিষয়ে জানার জন্য তার কার্যালয়ে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফল বিপর্যয়ের কারণ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের পরীক্ষক জানান, অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষকরা যেভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে একইভাবে কুমিল্লা বোর্ডের খাতা মূল্যায়ন করা হলে পাসের হারে গড় পাসের হারের কাছাকাছি থাকতো।

তারা আরও বলেন, বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে আমাদেরকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকেন। তাই উত্তরপত্র মূল্যায়নে অধিকাংশ পরীক্ষকই কোনো অনুকম্পা দেখায় না, কিন্তু সকল বোর্ডেই ২/১ নম্বরের জন্য ফেল করা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অনুকম্পা দেখানো হয়ে থাকে। ইংরেজি বিষয়ের একজন পরীক্ষক ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, কুমিল্লা বোর্ডের ফেল করা কিছু উত্তর পত্র এবং কম নম্বর পেয়ে পাস করা অন্য বোর্ডের কিছু উত্তরপত্রের তুলনামূলক মূল্যায়ন করলেই প্রমাণিত হবে অন্য বোর্ডেও পরীক্ষকরা ফেল করা শিক্ষার্থীদের প্রতি কতোটা সদয় ছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেই এ বিষয়ে তদন্ত করার দাবি জানান পরীক্ষকরা।

Advertisement

অপর দিকে নগরীর খ্যাতনামা একটি প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের পরীক্ষক জানান, জেএসসিতে গণিতে ৭০ নম্বর সৃজনশীল এবং ইংরেজি ১০০ নম্বরের প্রথম পত্র এবং ২য় পত্রে ৫০ নম্বরের প্রশ্নপত্র এতোটাই জটিল ছিল গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের পক্ষে এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হয়নি তাই ফল বিপর্যয় হয়েছে। ফলাফল বিপর্যয় প্রসঙ্গে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু জানান, সারাদেশের মেধাবীদের তুলনায় কুমিল্লা কখনই পিছিয়ে ছিল না, কিন্তু এখন বোর্ড দাবি করছে প্রকৃত মেধাবীরাই পরীক্ষায় পাস করছে।

বোর্ডের এমন বক্তব্য অযৌক্তিক বলে দাবি করে তিনি আরও জানান, এমন ফলাফল বিপর্যয়ের পেছনে বোর্ড কর্তৃপক্ষ এবং মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকাই দায়ী। শিক্ষকরাও দায় এড়াতে পারেন না। বোর্ড কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কুমিল্লাকে মেধা শূন্য করার এ ধারাবাহিক এ প্রক্রিয়ার বিষয়ে এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

তবে বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহাদুর হোসেন জানান, এবার জেএসসিতে মফস্বল এলাকার বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ইংরেজিতে ফেল করেছে ৭৬ হাজার ৬৮১ জন এবং গণিত বিষয়ে ফেল করেছে ৪৫ হাজার ৯১৫ জন শিক্ষার্থী। এ কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার কমে গেছে।

কামাল উদ্দিন/এমএএস/আরআইপি

Advertisement