খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্বিতীয় কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (সিআইপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। পাঁচ বছর (২০১৬-২০২১) মেয়াদি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই মুহূর্তে ২৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকার তহবিল প্রয়োজন বলে সিআইপি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে।
Advertisement
সিআইপি প্রতিবেদনে বিনিয়োগের জন্য ১৩টি খাত শনাক্ত করা হয়েছে। এসব খাত উন্নয়নে দ্রুত বিনিয়োগ প্রয়োজন। এর মধ্যে পণ্য উৎপাদনে বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতি উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে ৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের ঘাটতি আছে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে গুণগত বিজ, সেচ ব্যবস্থাপনা ও জমির সক্ষমতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে।
এছাড়া এই মুহূর্তে ৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের দরকার কৃষি পণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাত ব্যবস্থাপনার জন্য। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পণ্য রক্ষার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে ৩ হাজার ৪০ কোটি টাকা এবং উন্নত পণ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থায় বিনিয়োগের দরকার হচ্ছে ৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ খাতে ৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা ও গুণগত মানের খাদ্য উৎপাদনের জন্য, গবেষণা, ডাটা ও তথ্যভিত্তিক কাজ এবং অন্যান্য খাতেও। এসব খাতে আরো ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ এই মুহূর্তে প্রয়োজন।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিআইপি হচ্ছে কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগের জন্য দেশভিত্তিক একটি পরিকল্পনা। এর আলোকে দেশের খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য ১৩টি খাত শনাক্ত করা হয়েছে। বিনিয়োগের জন্য নির্বাচিত উল্লেখযোগ্য খাতের মধ্যে আছে পণ্য উৎপাদনে বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতি, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে গুণগত বিজ, সেচ ব্যবস্থাপনা ও জমির সক্ষমতা উন্নয়ন, পণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাত ব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পণ্য রক্ষা এবং উন্নত পণ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা।
এছাড়া রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ, খাদ্য নিরাপত্তা ও গুণগত মানের খাদ্য উৎপাদন, গবেষণা, ডাটা ও তথ্যভিত্তিক কাজ ইত্যাদি। সূত্র মতে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে একটি সূচক হচ্ছে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সরকার ওই লক্ষ্যকে সামনে রেখে খাদ্য নিরাপত্তায় নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্লান বাস্তবায়নের জন্য অর্থায়ন দরকার। এজন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে এ পরিকল্পনা পত্রটি উপস্থাপন করা হবে। আশা করছি, এতে সাড়া পাওয়া যাবে।
এ বিষয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রকল্পের জাতীয় পরামর্শক শাহ মোহাম্মদ মাহবুব বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বায়ু দূষণের প্রধান কারণ হলো ইটের ভাটা। অথচ এ খাতে পরিবেশ দূষণ কিভাবে কমানো যায়, এর কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই, বাজেটও নেই।
Advertisement
২০২১ সালের মধ্যে দেশে বনায়ন বিদ্যমান ১৩ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু এই বনায়ন করতে হলে যে টাকা দরকার সেটিও দেওয়া হচ্ছে না। বন উজাড় করে ফেলা রোধ ও কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমানোর বিষয়েও তেমন বাজেট নেই। পরিবেশ সুরক্ষায় গত কয়েক বছর যে হারে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, তাতে আগামী পাঁচ বছরে খরচ হতে পারে ৬০০ কোটি ডলার। ফলে ঘাটতি থাকবে আরো ৪০০ কোটি ডলার। ঘাটতি টাকা সরকারকেই জোগান দিতে হবে।
তিনি বলেন, বড় আকারে চারটি খাতের কথা বলা হয়েছে। এসব খাতের মধ্যে আবার অনেকগুলো ছোট ছোট উপখাত রয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ জনসংখ্যা ২০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। তাদের ঘর-বাড়ি রাস্তা-ঘাটের চাহিদা পূরণের পর আবাদি জমির পরিমাণও কমছে।
গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) এ সমীক্ষায় দেখা গেছ, বাংলাদেশে প্রতি বছর শতকরা এক ভাগ কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। এ জমি মানুষের নতুন আবাসন ও শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবে ফসলি জমি কমে গেলে দেশে খাদ্য উৎপাদন ও কৃষিখাতে কর্মসংস্থান ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার জাগো নিউজকে বলেন, সিআইপি বাস্তবায়নে বেশ কয়েকটি বিষয়ে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে কৃষি জমির সংকোচনশীল প্রবণতা সিআইপি লক্ষ্য অর্জনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। অন্য আরও একটি বাধা হল খাদ্যের সুষম বণ্টন। কারণ কৃষি জমি দ্রুত সংকোচনশীল প্রবণতার কারণে বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। একদিকে দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ মোকাবেলায় দেশীয় উৎপাদনে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। তা সম্ভব হবে যদি জমির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষি জমির ক্ষয় কমানো যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিআইপি বাস্তবায়নের পথে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। বিশ্ব বাজারে অনিশ্চয়তার মুখে দেশীয় খাদ্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে হবে। তখনই ফিশারি, ফরেস্ট্রি এবং প্রাণিজ সম্পদসহ কৃষির বিভিন্ন উপখাতেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এ দিকে শিশু ও নারীদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে দেশের গম, ডাল, তৈলবীজ, শাকসবজি ও ফলমূল ও দুধ মাংস উৎপাদন বাড়ানো দরকার। এছাড়াও খামার ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে জমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও এর কর্মক্ষমতা বাড়ানো, পণ্যের কার্যকর বাজার গড়ে তোলা, সময়মতো কৃষিজ উপকরণ সরবরাহ করার পাশাপাশি ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ এবং পর্যাপ্ত গবেষণার মাধ্যমে কৃষিখাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এমইউএইচ/এআরএস/এমএস