শিক্ষা

উত্তরা মেডিকেলে ভর্তিতে অনিয়ম প্রমাণিত

রাজধানীর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তিতে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যে কলেজ পরিদর্শন করে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র দেখে ভর্তি নীতিমালা অনুসরণ না করে তড়িঘড়ি করে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছেন।

Advertisement

কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন ও সুপারিশ আগামী সপ্তাহেই মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হবে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, এ ধরনের অনিয়মের ক্ষেত্রে তিরস্কার, সতর্ক, আর্থিক জরিমানা ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে রাখার বিধান রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী হবে তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সভা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অমান্য ও জাতীয় মেধাতালিকাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তির অনিয়ম ধামাচাপা দিতে চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

Advertisement

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী চিকিৎসক নেতাদের সন্তুষ্ট করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। গোপন লেনদেনের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা তারা প্রস্তাব রাখছেন বলে জোর গুঞ্জন চলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই কলেজে মোট আসন ৯০টি। এর মধ্যে বিভিন্ন কোটায় ১৮টি। আর সাধারণ কোটায় ৭২টি আসন। এ ৭২টি আসনে ভর্তির জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ জাতীয় মেধাতালিকার ক্রমানুসারে ক্রমিক নম্বর ৪০০১ থেকে ৭১৭৮ পর্যন্ত সিরিয়াল বেঁধে দেয়। ১১ ডিসেম্বর ভর্তি শুরুর প্রথম দিনে ১৫টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।

৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তির সময়সীমা থাকলেও ভর্তি কমিটি (গত ১৪ ডিসেম্বর) কোনো প্রকার বিজ্ঞপ্তি কিংবা বিজ্ঞাপন না দিয়ে তড়িঘড়ি করে ‘আগে এলে আগে ভর্তির সুযোগ পাবেন’ ঘোষণা দিয়ে জাতীয় মেধাতালিকায় সিরিয়ালে অনেক পেছনে থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করে। ১৯ হাজার সিরিয়ালে থাকা শিক্ষার্থীকেও ভর্তির নজীরবিহীন অনিয়ম করে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া ভর্তি ফি ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা হলেও প্রায় দ্বিগুণ টাকা নিয়ে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।

উত্তরা মেডিকেলে ভর্তি কমিটি নয় সদস্যের হলেও অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির সঙ্গে পাঁচজন জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এরা হলেন- কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আকরাম হোসেন, ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সেক্রেটারি মেজর জেনারেল (অব.) রফিকুল ইসলাম, গর্ভনিং বডির সদস্য সাব্বির আহমেদ খান, এনাটমি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা বেগম ও ফার্মাকোলজির বিভাগীয় প্রধান এ এস এম মোসাদ্দেক হোসেন।

Advertisement

তাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বাকি চার সদস্য বিব্রত ও ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। তবে কলেজ অধ্যক্ষ অনিয়মের ব্যাপারে গণমাধ্যমের কাছে বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।

উত্তরা আধুনিক মেডিকেলে ভর্তির অনিয়ম সম্পর্কে জাগো নিউজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো.আবদুর রশীদকে প্রধান করে গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (চিকিৎসা শিক্ষা) আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এ বি এম মাকসুদুল আলম বাসু, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সদস্য ডা. রোকেয়া সুলতানা ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. মাসুদুর রহমান।

তদন্ত কমিটির একজন সদস্য জানান, ভর্তি কমিটির সদস্যরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, গত বছর তারা বিজ্ঞপ্তি দিয়েও ছাত্র-ছাত্রী পাননি। এ কারণে তারা অনেকটা ঝুঁকি এড়াতে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে ভর্তি করে ফেলেন। অনিয়ম করলেও তারা খুব বড় ধরনের অপরাধ করেননি বলে মন্তব্য করেন ওই তদন্ত কমিটির সদস্য।

তদন্ত কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. আবদুর রশীদ বলেন, তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শেষ করেছে। খুব শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হবে। তবে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে কিছু বলতে রাজি হননি।

এমইউ/এমবিআর/এআরএস/পিআর