সালতামামি

মেজবাহ-জহিরের আলোয় অ্যাথলেটিক

কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে আরেকটি বছর। আর মাত্র তিনদিন পর পুরোনোটি সরিয়ে দেয়ালের জায়গা করে নেবে নতুন ক্যালেন্ডার। ২০১৮ সালকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে গোটা বিশ্ব। স্মৃতির খেরোখাতা থেকে ইতিমধ্যেই মানুষ মেলাতে শুরু করছে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব। সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনে চলছে সফলতা ও ব্যর্থতার চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিদায়ী বছরে দেশে ও দেশের বাইরে ক্রীড়াঙ্গনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো নিয়ে ধারাবাহিক পর্যালোচনার প্রথম পর্বে থাকছে অ্যাথলেটিক।

Advertisement

দেশের অ্যাথলেটিক জৌলুস হারিয়েছে অনেক আগেই। এখন আর এ খেলাটি মানুষকে টানে না। ঘরোয়া প্রতিযোগিতাগুলো দায়সারাভাবে হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অ্যাথলেটিকে বাংলাদেশের কোনো অবস্থান নেই। বরং সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণে মাঝেমধ্যে আন্তর্জাতিক সংগঠনের চোখ রাঙানি দেখতে হয়। অ্যাথলেটিকের অন্ধকার আকাশ থেকে আতশী কাঁচ দিয়ে খুঁজে বের করতে কিছু সাফল্য।

বিদায়ী বছরে বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকে আলো হয়েছিলেন মেজবাহ আহমেদ ও জহির রায়হান। রুগ্ন অ্যাথলেটিক এ দুইজনের সাফল্যের আলোয় কিছুটা হলেও ছিল আলোকিত। দেশের দ্রুততম মানব মেজবাহ আহমেদ বছরের শেষ মাসে ছুঁয়েছেন অনন্য এক রেকর্ড।

সাবেক অ্যাথলেট মোশারফ হোসেন শামীমের টানা ৭ বার ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সেরা হওয়ার রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন বিকেএসপির সাবেক ছাত্র ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মেজবাহ আহমেদ। এ মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় অ্যাথলেটিকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছেন তিনি। এখন এ অ্যাথলেটের লক্ষ্য রেকর্ডটা এককভাবে নিজের করে নেয়া। পরের আসরে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখে ১০০ মিটার ছেড়ে দেয়ার কথাও বলেছেন তিনি। তারপর শুধু ২০০ মিটারে খেলবেন দেশের দ্রুততম মানব।

Advertisement

ঘরের ট্র্যাকে আলো ছড়িয়েছেন মেজবাহ আহমেদ, আন্তর্জাতিকভাবে তরুণ জহির রায়হান। বিকেএসপির এ অ্যাথলেট চমক দেখিয়েছেন যুব বিশ্ব অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপে ৪০০ মিটার দৌঁড়ে সেমিফাইনালে উঠে।

জুলাইয়ে নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত ৪০০ মিটার দৌঁড়ের হিটে রায়হান ৪৮.০০ সেকেন্ড সময় নিয়ে উঠেছিলেন সেমিফাইনালে। অ্যাথলেটিকের যে কোনো পর্যায়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে এটাই বাংলাদেশের কারো প্রথম সেমিফাইনালে ওঠার কৃতিত্ব। নতুন ইতিহাস গড়ে ঝিমিয়ে পড়া অ্যাথলেটিকে কিছুটা হলেও দোলা দিতে পেরেছেন শেরপুরের এ যুবক।

নাইরোবিতে যুব অ্যাথলেটিকে যাওয়ার আগে জহির রায়হানকে অতিক্রম করতে হয়েছিল এশিয়ান যুব অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপের হার্ডেলস। মে মাসে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়ান যুবাদের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের জহির রায়হান সময় নিয়েছিলেন ৪৯.১২ সেকেন্ড। নাইরোবিতে তিনি দৌঁড়িয়েছেন ৪৮.০০ সেকেন্ড সময়ে।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকের আরেকটি ভালো খবর ছিল, এই প্রথম ঘরোয়া কেনো প্রতিযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কর্মকর্তা। এশিয়ান অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সভাপতি এবং আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সহ সভাপতি দাহলান আল হামাদ ঢাকা সফর করেছেন ৪১ তম জাতীয় অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপের সময়। তিনিই উদ্বোধন করেছিলেন ঘরোয়া অ্যাথলেটিকের সবচেয়ে বড় এ প্রতিযোগিতা।

Advertisement

বিগত বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল তা কেটে গেছে ২০১৭ সালে। আগের নির্বাচিত কমিটির সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক ফেডারেশন অনুদান স্থগিত রেখেছিল। বর্তমান অ্যাডহক কমিটি দায়িত্ব নেয়ার পর সম্পর্কটা আবার জোড়া দিতে পেরেছে।

আরআই/এমএমআর/জেআইএম