ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এক মনীষাদীপ্ত মহাজীবনের নাম। তার ধার্মিকতা প্রগতিশীলতার সঙ্গে বিরোধ হয়ে দাঁড়ায়নি। বাঙালি জাতিসত্তা ও সংস্কৃতির প্রশ্নে তিনি কখনো আপোশ করেননি। তিনি বাংলা ভাষার ব্যুৎপত্তি থেকে বৌদ্ধগানের ভাষা পর্যন্ত বিচিত্র ভাষাতাত্ত্বিক বিষয়ে অনুপুঙ্খ গবেষণা করেছেন। মাতৃভাষার প্রতি প্রবল অনুরাগ তাকে যেমন বাংলা ভাষার উদ্ভব-বিকাশ নিয়ে গবেষণায় অনুপ্রাণিত করেছে তেমনি সর্বস্তরে মাতৃভাষা বাংলায় শিক্ষার প্রচলনের পক্ষে লড়াইয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ করেছে। বাংলা ও ইংরেজিতে লিখিত ড. মুহম্মদ শহীউল্লাহ্-র ভাষাতাত্ত্বিক প্রবন্ধসমূহ বাংলা একাডেমি থেকে সংকলিত হয়ে প্রকাশ হওয়া জরুরি। বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত গবেষক, বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্-র ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমির এক আলোচনা সভায় এমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্-র সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। বেলা ১১টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন। বক্তব্য প্রদান করেন এমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্যে মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে এক চিরস্মরণীয় নাম। বাংলা একাডেমির সঙ্গে তার সম্পর্ক এই প্রতিষ্ঠানের সূচনালগ্ন থেকে। তার স্মরণে বাংলা একাডেমিতে স্থাপিত হয়েছে শহীদুল্লাহ্ গবেষণা কক্ষ। এছাড়া একাডেমি তার রচনাবলি প্রকাশ করেছে এবং অতিসম্প্রতি শহীদুল্লাহ্ স্মারকগ্রন্থ পুনঃমুদ্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, বাংলা ভাষার উৎপত্তি-বাংলা ভাষায় অনার্য প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ধারণা ছিল মৌলিক। তিনি শুধু বাংলা ভাষা বিষয়ে নয়, একই সঙ্গে সিংহলি ভাষার উদ্ভব নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে এবং আরবি হরফে বাংলা প্রচলনের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়েছিলেন। বিএ/পিআর
Advertisement