দেশজুড়ে

গ্রাম্য সালিশে ১০১ দোররায় গৃহবধূকে হত্যা

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় গ্রাম্য সালিশে দোররা মেরে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতের বোন ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখ করে গত ২১ ডিসেম্বর হরিপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

Advertisement

জানা যায়, বিয়ের পর থেকেই যৌতুক নিয়ে স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে টানাপড়েন ছিল গৃহবধূ মৌসুমী আক্তারের। কয়েকবার মৌসুমীকে মারধর করে বাপেরবাড়ি পাঠিয়েও দেয়া হয়। তবে গত ২০ ডিসেম্বর মৌসুমীর জীবনে ঘটে সবথেকে ভয়ংকর ঘটনা।

পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে ওই রাতে মাতবরদের নিয়ে সালিশ ডাকে স্বামীর পরিবার। সালিশে দেয়া রায়ে ১০১ বার দোররা মারা হয় মৌসুমীকে। এর মাঝে কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে গেলে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর আবার চলে নির্যাতন। পরদিন ২১ ডিসেম্বর মারা যান মৌসুমী।

এদিকে মৌসুমীর মৃত্যুর পর তার স্বজনরা স্বামী জাহাঙ্গীর ও সালিশকারী সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১০ জনের নামে হরিপুর থানায় ২১ ডিসেম্বর হত্যার অভিযোগ এনে একটি এজাহার দেন। তবে থানা পুলিশ এটিকে হত্যা মামলা হিসেবে না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা হিসেবে নিয়েছে। স্বজনদের চাপে মৌসুমীর ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নিলেও পুলিশ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ নিহতের স্বজনদের।

Advertisement

তবে পুলিশ জানিয়েছে, সালিশকারীদের অন্যতম কাজী আবুল কালামকে অপমৃত্যু মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্ত বাকিরা পলাতক আছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সালিশে গ্রামের কাজী আবুল কালাম ছাড়াও আব্দুল কাদের, সাবেক ইউপি সদস্য জামালসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

সালিশের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাত ১১টায় জাহাঙ্গীরের বাসায় গ্রাম্য সালিশ বসিয়ে কাজী আবুল কালামের নির্দেশে ‘ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক’ মৌসুমীকে তওবা পড়ানো হয়। এরপর ১০১ দোররা মারা হয়। তখন মৌসুমীর চিৎকারে তিনি ও আশপাশের অনেকে ছুটে আসেন ওই বাড়িতে। কিন্তু গ্রাম্য মাতব্বরদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পাননি।

আমগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পাভেল ইসলাম বলেন, তিনি প্রথমে ঘটনা জানতেন না। পরে জানতে পেরেছেন। দেশে আইন-কানুন থাকতে এভাবে দোররা মেরে বিচার সালিশ করা আইনত দণ্ডনীয়। অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ২৩ ডিসেম্বর মৌসুমীর মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, মৌসুমীর শরীরে দোররার আঘাতের একাধিক চিহ্ন ছিল।

Advertisement

তবে হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল কুদ্দুসের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।

এ ব্যাপারে জেলার পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ জানান, তিনি এ ঘটনা জানতেন না। কিছু মাধ্যমে জানতে পেরে অভিযুক্ত কালাম কাজীকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ইতোমধ্যে কালামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

রবিউল এহসান রিপন/এফএ/আরআইপি