ধর্ম

সুস্থ থাকার মাস রমজান

বান্দার প্রত্যেকটি নেক আমলের মধ্যে আল্লাহর রহমত বিরাজমান। যা শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে না। এই নেক আমলের মধ্যে অনেক আমলকে আল্লাহ ফরজ করে দিয়েছেন; যা অনেক নেককার মুসলমান অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছেন। রোজা এমনই একটি ইবাদত।  যে ইবাদত মানুষকে শারিরীক, মানসিক, আবেগীয়-অনুভূতি ও আধ্যাত্মিকসহ সব ক্ষেত্রেই সুস্থ্যতা দান করে। এ জন্য মানুষ ফরজ রোজার পাশাপাশি প্রত্যেক মাসে আইয়্যামে বিজের রোজাসহ অনেক নফল রোজা পালন করে থাকে। কেননা এ রোজাই মানুষের সুস্থ্য জীবনের অপরিহার্য্য অনুসঙ্গ।১. শারিরীক সুস্থ্যতা :রমজান ব্যতিত বছরের বাকি ১১ মাস আমরা খাওয়া-দাওয়ায় ব্যস্ত থাকি। সকালের নাস্তায় শুরু হয় দিন। বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত যাই বলুন; দুপুরের খাবারের পূর্বেই কিছু না কিছু খেতে হয়। চাকরিজীবি কি ব্যবসায়ী দুপুরের খাবার তো সঙ্গেই রয়েছে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চা নাস্তার আয়োজন; দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা তখনও ডিনারের অনেক দেরি। এ যেন রুটিন ওয়ার্ক। সুতরাং বুঝতেই পারছেন খাবার বা পানাহারের অবস্থা!আমরা যত খাবারই খাই; এগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করার জন্য আল্লাহ অটোমেটিক মেশিন তৈরি করে দিয়েছেন। যা পাকস্থলীতে যাওয়ার পরপরই শুরু হয়ে যায় কার্যক্রম। যার প্রভাব পড়ে শরিরের উপর। শরিরের সমগ্র পরিপাকতন্ত্র লাগামছাড়া পানাহারে ১১ মাস ধরে প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যস্ত থাকে। যার ফলে মানুষ অসুস্থ হয় ঘন ঘন।পক্ষান্তরে রমজানে মাসে একাধারে সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকায় শরিরের সব অঙ্গগুলো পায় বিশ্রাম। ১ মাসের পানাহারের বিরতির মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রের প্রক্রিয়া সচল রাখার জন্য রমজানের বিকল্প নেই।শরীরের শক্তির দুই-তৃতীয়াংশই খরচ হয় পরিপাকতন্ত্রের প্রক্রিয়ায়; এ শক্তি রমজানে পানাহার পরিত্যাগের কারণে জমা থাকে; পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম পায়। মানুষ অসুস্থ্যতা থেকে মুক্ত থাকে।বিশেষ করে সারাদিনের পানাহারে আমরা যে সব খাবার খাই, তার সবগুলোর মধ্যেই কমবেশি ক্ষতিকর অনুসঙ্গ থাকে; রোজায় পানাহার থেকে বিরত থাকায় ক্ষতিকর পদার্থের ভয়াবহতা থেকে মুক্ত থাকা যায়।বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, রোজায় শরিরে গ্লোকুজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হার্টের প্রবাহ ভালো থাকে ও ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদানগুলো মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। এছাড়াও শারিরীক বহু ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকতেও রোজা বিশেষ উপকার করে। মনে রাখতে হবে, ইফতার এবং সাহরিতেও সংযমের পরিচয় দিতে হবে। খেতে হবে অতিরিক্ত চরি ও তৈলাক্তমুক্ত বিশুদ্ধ খাবার।২. মানসিক সুস্থ্যতা :মানসিকভাবে একজন রোজাদার রহমতি পরিবেশের কারণে সময়মতো সাহরি-ইফতার ও সময়মতো নামাজসহ ইবাদত-বন্দেগীতে থাকায় রোজাদারদের মানসিক একাগ্রতা ও মস্তিষ্কের উপকারী উপাদানগুলো বৃদ্ধি পায়। যাতে মস্তিষ্কে কোষ বাড়ে এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। প্রত্যেক রোজাদারের দেহ ও মন থাকে সজীব; কাজ-কর্মে একাগ্রতা তৈরি হয় এবং মানসিক সুস্থ্যতা বৃদ্ধি পায়। রমজানের আগে ও পরে আমরা মানুষ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে বিধায় মানসিকভাবে থাকে বিপর্যস্ত। রমজানে মানুষ তা থেকে সম্পূর্ণরুপে মুক্ত থাকে। বিধায় মানসিকভাবে মানুষ থাকে সুস্থ ও সবল।৩. অনুভূতির সুস্ত্যতা :প্রত্যেক মানুষের রয়েছে আবেগ, অনুভূতি। অন্যান্য মাসের সর্বপ্রকার উম্মাদনা, উসৃংখল জীবন-যাপন, মন্দ চিন্তাচেতনায় বিরত থাকায় জান্নাতী অনুভূতি বিরাজ করে। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত- ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় বিরাজ করে ইবাদতখানার পরিবেশ। মনে হয় যেন সবাই আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত। অনুভূতি জাগরিত হয় আল্লাহর শাস্তির ভয়ের। মানুষ চিন্তা করে রমজানে অন্তত অন্যায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখি। পাশাপাশি যারা অমুসলিম তাদের চলাফেরায়ও থাকে সংযম। আর ইসলাম সাম্য ও সম্প্রিতির পরিবেশকেই সবেচেয়ে বেশি সমর্থন করে বিধায় সর্ব ধর্মের লোকে জনের মাঝে বিরাজ করে এক স্বর্গীয় আবহ। যা রমজান ছাড়া অন্য সময়  তেমন পরিলক্ষিত হয় না। রমজানের রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের কল্যাণেই সৎ কাজের অনুভূতি তৈরি হয়।৪. আধ্যাত্মিক :রমজান মাস হচ্ছে তাকওয়ার মাস। তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়ই হচ্ছে আধ্যাতিকতার  মূলমন্ত্র। সারা পৃথিবীতে রমজান এই দাওয়াত নিয়েই আসে যে, রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতে পরিপূর্ণ এই মাস। যারা এগুলোর পাশাপাশি গুনাহমুক্ত জীবন লাভ করতে চায়; আল্লাহর ভয় এবং মহব্বত অর্জন করতে চায়, রমজান তাদের জন্যই আধ্যাত্মিক উন্নতির অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য স্পেশাল ঘোষণা- হে ঈমানদারগণ! তোমারদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। আধ্যাত্মিক সুস্থ্যতা লাভ করতে পার। সারা বছরের সকল প্রকার পাপ-পংকিলতা থেকে নিজেকে মুক্ত করে একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয়ে জান্নাতের মেহমান হওয়ার উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারে। যে মানুষের আত্মা পরিশুদ্ধ থাকে, তার শরীরের সব অঙ্গগুলো থাকে সুস্থ্য সবল, মন থাকে পরিশুদ্ধ, মানসিকভাবে থাকে শান্ত, আগেব অনুভূতিতে বিরাজ করে স্বর্গীয় আবহ।আধ্যাত্মিক সুস্থ্যতার কারণেই মানুষ বেপরোয়া জীবন-যাপন থেকে থামে সম্পূর্ণ মুক্ত। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহিানি-মারামারি, অরাজকতা-বিশৃংখলা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। ধর্মীয় নিয়ম-কানুনগুলো মেনে চলার কারণেই রোজাদারের মন থাকে প্রশান্ত, ইবাদতে বাড়ে একাত্মতা। একজন সঠিকভাবে রোজা রেখে আবেগকে রাখতে পারেন নিয়ন্ত্রিত। হয়ে উঠতে পারেন সত্যিকারের আদর্শ মানুষ, দ্বীনদার, ঈমানদার তথা খাঁটি মুসলমান।রমজানের রোজায় সবার প্রত্যাশা সুস্থ্য দেহ,সবল মানসিকতা প্রশান্ত মন ও মনন তৈরিতে নিজেকে আত্মনিয়োগ করা। মানুষ রমজানের রোজা পালনের মাধ্যমে যে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছে, তা বাস্তব জীবনে সারা বছর প্রতিফলিত করতে পারলেই স্বার্থক হবে রোজা ও রমজান। লাভ করতে পারবে শারিরীক, মানসিক, আবেগীয় ও আত্মিক উন্নতির। আল্লাহ সবাইকে সর্বক্ষেত্রের সুস্থ্য রাখুন। আমীন।জাগো নিউজ ২৪ ডটকমের সঙ্গে থাকুন। রমজান সম্পর্কিত সুন্দর সুন্দর ইসলামী আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদীস মোতাবেক আমলী জিন্দেগী যাপন করে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফেরাত অর্জন করুন। আমীন, ছুম্মা আমীনএমএমএস/পিআর

Advertisement