তিন দফায় শিক্ষার্থীদের কলেজভিত্তিক তালিকা প্রকাশ করেও ভর্তি সংকট দূর করতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বরং তৃতীয় মেধা তালিকা প্রকাশের পর নতুন সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক কলেজে শিক্ষার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কিন্তু কলেজ ভর্তি নিতে চাচ্ছে না। আবার নামি-দামি কলেজে আসন খালি রয়েছে। সেখানে ভর্তি নিচ্ছে না কিংবা শিক্ষার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এর বাইরে ভর্তি হতে না চাইলেও অনেক কলেজ নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে দিচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছেন, শিক্ষার্থীদের ভর্তি না করে সংকট সৃষ্টি করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ভর্তির সুযোগ না পাওয়া প্রায় পৌনে ৩ লাখ শিক্ষার্থী এখনও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে।এদিকে মিরপুরের এসওএস হারম্যান মেইনার কলেজে ভর্তি হতে যাওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই কলেজে তৃতীয় তালিকায় ভর্তির জন্য ৩২ শিক্ষার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু আসন শূন্য না থাকার কথা বলে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ভর্তি নিচ্ছিল না। এ নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের দিনভর দেন-দরবার চলে। এমনকি পরিস্থিতি ধস্তাধস্তির পর্যায়ে চলে যায়। জানা গেছে, রাজধানীর বেশ কয়েকটি কলেজে ঘটে হয়রানির ঘটনা। রোববার নানা সমস্যা নিয়ে আসা মেহেদী হাসান নামে একজন শিক্ষার্থী জানায়, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে (ইউল্যাব) তৃতীয় তালিকায় তাদের ২০ জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জনের ভর্তি নিয়েছে কলেজ। আসন নেই বলে বাকি ১৩ জনের ভর্তি নিচ্ছে না। অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, এ কলেজে ১৪ জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২ জনকে ভর্তি করিয়ে বাকি ১২ জনকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজেও একই অবস্থা। সেখানে ২০ জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু ভর্তি নিয়েছে মাত্র ৫ জন।ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কিছু কিছু সমস্যা এখনও হচ্ছে। অভিযোগগুলো চিহ্নিত করছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, কেউই ভর্তির বাইরে থাকবে না। যারা এখনও মনোনয়ন পায়নি তারা চতুর্থ তালিকায় পাবে। এজন্য তাদের আবেদন করতে হবে।বোর্ডে কথা হয় রবিন মাহমুদ রনি নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। আবেদন পছন্দক্রমে ঢাকার পাঁচটি কলেজ বাছাই করলেও রনিকে মনোনয়ন দেয়া হয় ভোলার রেবা রহমান কলেজে। ঢাকার বাসিন্দা রনি ওই কলেজে ভর্তি না হয়ে মাইগ্রেশন করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তার ভর্তি নিশ্চিত করে ফেলেছে। তাই কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে সে রোববার ঢাকা বোর্ডে ধরনা দিয়েছে। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর সিদ্দিক এ বিষয়ে বলেন, শিক্ষার্থীরা ভর্তি না হওয়া সত্ত্বেও অনেক কলেজ ভর্তি নিশ্চিত করেছে এমন কথা শুনেছি। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট কলেজ তালিকাভুক্ত করা হবে। ভর্তি ও আসন নিয়ে সমস্যা সমাধানে বিকল্প পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে জানিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন সরকারি কলেজের কিছু আসন বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে এমপিওভুক্ত নামি-দামি কিছু প্রতিষ্ঠানেও আসন বাড়ানো হয়েছে। এরপরও যদি তারা শিক্ষার্থীদের ভর্তি না করে সংকট সৃষ্টি করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।একাদশে ভর্তির জন্য এবার ১১ লাখ ৫৬ হাজার ২২৪ শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করে। এর মধ্যে প্রথম দফায় ৯ লাখ ২৩ হাজার ১০৫, দ্বিতীয় দফায় ১৭ হাজার ৬৪৭ এবং তৃতীয় দফায় ১ লাখ ৮ হাজার ৬৪৩ জনকে বিভিন্ন কলেজে ভর্তির জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়। তিন দফায় মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯৫ জন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, এর মধ্যে ৯ লাখ ৪৬ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। সে হিসাবে এখনও কলেজে ভর্তি হতে পারেনি মনোনয়ন পাওয়া সোয়া দুই লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী।একে/এমএস
Advertisement