অনিশ্চিত ছিল এবারের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব। কারণ ভেন্যু জটিলতা। আগের পাঁচটি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে এসছে আর্মি স্টেডিয়ামে। কিন্তু এবারের উৎসবে দেখা দেয় জটিলতা। জানা যায়, ভেন্যু হিসেবে আর্মি স্টেডিয়াম বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সে নিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে গঙ্গা থেকে পদ্মায়। উৎসব আয়োজন হবে না ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কাঁদতেও দেখা গিয়েছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটুকে।
Advertisement
আশার কথা হলো সুরপিপাসু মানুষদের প্রাণের এই উৎসবটির পাশে দাঁড়ায় ধানমন্ডির বিখ্যাত আবাহনী মাঠ। পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ঘোষণা দেয়, এই মাঠেই হবে ষষ্ঠবারের বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব। সেই ধারাবাহিকতা নিয়েই মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পর্দা উঠলো জমজমাট এই আসরের। চলবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
অনেক শঙ্কা ছিল আবাহনীকে নিয়ে। প্রথমত এটি আবাসিক এলাকা। এমন স্থানে ৫০-৬০ হাজার মানুষ নিয়ে উৎসব আয়োজন কতোটা উপভোগ্য হবে, সেই শংকা। পাশেই হাসপাতাল, তাই উৎসবে শব্দ নিয়ন্ত্রণের ভাবনাও ছিল। যাতায়াত ও নিরাপত্তার আশঙ্কাও।
তবে সব আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে আবাহনী হয়ে উঠলো শ্রোতাদের জন্য মুগ্ধকর এক ভেন্যুই। আর্মি স্টেডিয়াম প্রবেশের একমুখী ভেন্যু হওয়ায় স্টেডিয়ামের সামনে দেখা যেত যানজট আর হেঁটে আসা মানুষের লম্বা লাইন। কিন্তু চারদিকে খোলামেলা ও যাতায়াতের সুবিধা থাকায় আবাহনীর চারপাশ নিত্যদিনের মতোই স্বাভাবিক।
Advertisement
আর্মি স্টেডিয়ামে সুশৃঙ্খলভাবে ও নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করে আসা দর্শক শ্রোতাদের কাছে আবাহনী মাঠটিও সাদরে গৃহীত হয়েছে। প্রথম রাতের আসরে শ্রোতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখেই আয়োজকরা আশান্বিত হয়েছেন। নিশ্চিত করা হয়েছে চমৎকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা। ভেতরে মূল মঞ্চের সামনে প্রায় হাজার খানেক আসন। তার বাইরে চারদিকে অফুরন্ত জায়গা, সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে দুই-তিনজন করে বসার চেয়ার।
সঙ্গীত উপভোগের পাশাপাশি খাবার ও পানীয়ের জন্য উৎসব প্রাঙ্গণে রয়েছে ফুড কোর্ট। রয়েছে স্মোকিং জোন। পাশাপাশি উৎসব প্রাঙ্গণে আরও চলছে বাংলাদেশের সঙ্গীতসাধক ও তাদের জীবনী নিয়ে একটি সচিত্র প্রদর্শনী এবং বেঙ্গল ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপস অ্যান্ড সেটলমেন্টের ‘সাধারণের জায়গা’ শীর্ষক প্রদর্শনী।
শ্রোতারা উৎফুল্ল মনেই প্রবেশ করছেন, ঘুরে ঘুরে উপভোগ করছেন এবারের আসর। ক্রমেই বািড়ছে ভিড়। কেউ মঞ্চের সামনে, কেউ গ্যালারিতে, কেউ মাঠের মাঝখানে চাদর পেতে বসেছেন। সুরের মূর্ছনায় মেতে উঠেছে হিমশীতল রাত্রি।
রামপুরা থেকে স্ত্রী-পুত্রসহ এসেছেন কামরুল হাসান মামুন। পেশায় ব্যাংকার এই শ্রোতা বলেন, ‘গাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। আমাদের নামিয়ে গাড়ি বাসায় চলে গেছে। অন্যান্যবারের মতো এবার বাইরে কোনো ঝামেলা পোহাতে হয়নি। ভেতরটা তো দারুণ। পার্কের ফ্লেভার পাচ্ছি। অনেক ভালো লাগছে।’
Advertisement
রুহিনা রেহনুম নামে ইডেনপড়ুয়া ছাত্রী এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আর্মি স্টেডিয়াম অনেক দূরে হওয়ায় আগে যেতে পারিনি বলে মনে কষ্ট হতো। এবারে নিজের ঘরের কাছেই বলা যায়। বন্ধুদের নিয়ে উপভোগ করতে চলে এসেছি সন্ধ্যা বেলাতেই। সবকিছু বেশ পরিপাটি ও গোছানো। ভালো লাগছে খুব। আমি চাইবো সবসময় এখানেই আয়োজিত হবে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসব।’
এবারের আসরের উদ্ধোধনী শিল্পী হিসেবে বেহালায় আভোগী রাগ ছড়িয়ে মঞ্চে আসেন ভারতের সঙ্গীতজ্ঞ ড. এল সুব্রামানিয়াম। শিল্পীর সঙ্গে মৃদঙ্গমে সঙ্গত করেন রামামূর্তি ধুলিপালা, তবলায় ছিলেন পণ্ডিত তন্ময় বোস এবং মোরসিংয়ে ছিলেন সত্যসাই ঘণ্টাশালা।
এই পরিবেশনা শেষে অর্কেস্টা নিয়ে মঞ্চে আসেন আস্তানা সিম্পনি ফিলহারমোনিক। দলটি প্রথমে সিলেস কাজগালিব রচিত সিম্পোনির কিছু অংশ এবং পি আই চাইকভস্কির বিখ্যাত রচনা ‘সোয়ানলেক’ এর কিয়দংশ পরিবেশন করেন।
উৎসবের প্রথম রাতে আরও সঙ্গীত পরিবেশন করবেন রাজরূপা চৌধুরী (সরোদ), বিদুষী পদ্মা তালওয়ালকর (খেয়াল), ফিরোজ খান (সেতার), সুপ্রিয়া দাস (খেয়াল), রাকেশ চৌরাসিয়া (বাঁশি) ও পূর্বায়ণ চ্যাটার্জি (সেতার)।
এলএ/বিএ