সাধারণতঃ এমন হয় না। হলেও খুব কম চোখে পড়ে; কিন্তু এবার সেই সচরাচর না হওয়া ঘটনাটাই ঘটতে যাচ্ছে। চার বছর মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহদের কোচিং করানো চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করে শ্রীলঙ্কার কোচ হয়ে ঠিক বাংলাদেশে আসছেন প্রথম মিশন নিয়ে।
Advertisement
সব কিছু ঠিক থাকলে ইংরেজি নতুন বছর, ২০১৮ সালের জানুয়ারির প্রথম ভাগেই শ্রীলঙ্কা দলকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসবেন তিনি। কারণ, ১৫ জানুয়ারি থেকে তিনজাতি ক্রিকেট শুরু। শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে সেটাই হবে হাথুরুসিংহের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট। হাথুরুর এ আসা হবে প্রতিপক্ষ হিসেবে।
অতিবড় সমালোচকও মানছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে শুরুটা হাথুরুর জন্য বিরাট প্লাস পয়েন্ট। কারণ, টিম বাংলাদেশের সব গোমরই তার জানা। চার বছর কোচিং করাতে গিয়ে তিন ফরম্যাটে টিম বাংলাদেশের অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন ক্রিকেটারকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি।
সেই সব চেনা-জানা ক্রিকেটাররা এবার প্রতিপক্ষ। শুধু হাথুরু নয়, যে কোনো কোচের জন্য এটা এটা বিরাট ও বাড়তি সুবিধা। একইভাবে বাংলাদেশের জন্যও মাইনাস পয়েন্ট। বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার খেলা যতই ঘনিয়ে আসছে, এ বিষয়টা ততই জোরালো হচ্ছে।
Advertisement
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে জাতীয় দল পরিচর্যা ও পরিচালনা কমিটির প্রধান আকরাম খানও অকপটে স্বীকার করেছেন, হাথুরুসিংহে অবশ্যই চিন্তার কারণ। আশার কথা, ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এ বিষয়টাকে খুব বড় করে দেখতে নারাজ।
তার সোজা সাপটা কথা, ‘ভদ্রলোক আমাদের সঙ্গে শেষ চার বছর কাজ করেছেন। আমাদের সব কিছুই তার খুব ভালো জানা। অবশ্যই সেটা তার গেম প্ল্যানিংয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আমাদের নিয়ে লক্ষ্য-কৌশল আঁটাও সহজ হবে; কিন্তু আমি তাতে বিচলিত হতে চাই না। বিষয়টিকে নিয়ে খুব বেশি মাথা না ঘামিয়ে আমার সহযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে একটাই বার্তা দিতে চাই। সেটা হলো- মনের জোর বাড়াতে হবে। হাথুরুকে নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে যার যার কাজটা ঠিকমতো করার চেষ্টা থাকতে হবে। রাতারাতি তো আর যার যার ব্যাটিং-বোলিং বৈশিষ্ট্য পাল্টে ফেলা সম্ভব নয়।’
দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের লক্ষ্য-পরিকল্পনা প্রণয়নই শুধু নয়, দল সাজানোর কাজেও সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন হাথুরু। কাকে কোনো সিরিজে, কোনো দলের বিপক্ষে নিলে ভালো হবে, কোনো কন্ডিশনে কেমন লাইনআপ হবে, গেম প্ল্যানই বা কেমন হবে- এগুলো তো সব তার হাতেই গড়া। ঠিক করা। তিনিই সব ঠিক করে দিতেন।
এর পাশাপাশি টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যারা জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করেন, তাদের সবার সম্পর্কেই হাথুরুর খুব ভালো জানা। কোনো ব্যাটসম্যানের প্লাস পয়েন্ট কোনোটা, কার কোথায় দূর্বলতা? কোনো বোলারের সমস্যা লাইন-লেন্থে? কার বলে নিয়ন্ত্রণ কম? কে সুইং করাতে পারেন না তেমন? কোনো স্পিনারের বলে টার্ন কম? কে স্লো আর লো উইকেট ছাড়া অকার্যকর- এসব খুব ভালো জানা হাথুরুর। এটাই আসলে বাংলাদেশের জন্য এখন চিন্তার কারণ।
Advertisement
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের গেম প্ল্যানও হাথুরুর ঠিক করা। প্ল্যান ‘এ ’, প্ল্যান ‘বি’ কিংবা প্ল্যান ‘সি’- ঠিক করে দিয়েছেন তিনি। সেই প্ল্যান পাল্টে নতুন প্ল্যান করা ছাড়া উপায় নেই। আর ক্রিকেটাররাও কেউই এত অল্প সময়ে নিজের ঘাটতি-দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। কারো পক্ষেই ব্যাটিং- বোলিংয়ে ত্রুটি-বিচ্যুতি সামলে ওঠা সম্ভব হবে না।
কাজেই হাথুরুসিংহে নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ অবশ্যই আছে। সে দুশ্চিন্তা কাটানোর প্রথম দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন কোচ রিচার্ড হ্যালসল আর টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের ওপর। তাদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে। সঙ্গে মাশরাফির পরামর্শমতো, মনের জোর বাড়ানাই এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
এআরবি/আইএইচএস/আইআই