দেশজুড়ে

ছিটমহলে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা

বাংলাদেশ-ভারতের ছিটমহলগুলোতে যৌথ জরিপকালে বাংলাদেশ ভারতের ১৬২টি ছিটমহলে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত জমি ক্রয়-বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে উভয় দেশের প্রশাসন। তবে ছিটমহল বিনিময় চুড়ান্ত হলে এসব ছিটমহলের বাসিন্দারা যদি অন্য দেশের নাগরিক হতে চান তাহলে বর্তমান স্থানের জমি-জমা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি সাপেক্ষে বিক্রি করে নগদ অর্থ যে দেশের নাগরিক হতে চান সে দেশে নিয়ে যেতে পারবেন। বাংলাদেশের পক্ষে ছিটমহল বিনিময় সমন্বয়কারী পরিষদের পাশাপাশি মইনুল ইসলাম জমি ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞার কথা নিশ্চিত করেছেন। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক ও যৌথ ছিটমহল জরিপ কাজের নেতৃত্বদানকারী খান মো. নুরুল আমিন জাগো নিউজকে জানান, গত ১৬ জুন কলকাতায় বাংলাদেশ ও ভারত জয়েণ্ট বাউন্ডারি ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে ২২ জুন থেকে ৩১ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত ছিটমহলের জমি ক্রয় বিক্রয় সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ৩০ নভেম্বর যৌথ জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে ছিটমহলবাসীদের পছন্দমতো নাগরিকত্ব নেওয়া মানুষগুলো ছিটমহল ছেড়ে পছন্দের দেশে সরকারিভাবে চলে যাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ২০১১ সালে সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় ও সীমান্ত চুক্তি নিয়ে প্রটৌকল স্বাক্ষরিত হয়। সে সময় ছিটমহলের প্রকৃত অবস্থা জানতে দুই দেশের সরকার যৌথভাবে ছিটমহলে খানা জরিপ চালায়। এ যৌথ জরিপের চুড়ান্ত ফলাফল সে সময় দুই দেশের প্রশাসন গ্রহণ করে। এবারে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের যৌথ খানা জরিপের রিপোর্টকে ভিত্তি করেই চলছে জরিপ কাজ। ৬ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত উভয় দেশের ১৬২টি ছিটমহলে যৌথ খানা জরিপ চলবে। আগামী ৩১ জুলাই মধ্যরাতে দুদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় শুরু হবে। তাই ১ আগস্ট ছিটমহল নামের বন্দীশালা দুই দেশের মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। স্স্ব স্ব দেশের ভেতরে থাকা ছিটমহলগুলো সেই দেশের মূল ভূখণ্ডে পরিণত হয়ে যাবে। বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ছিটমহল থেকে যারা ভারতে যেতে চান, আবার ভারতের ভেতরে থাকা ছিটমহল থেকে যারা বাংলাদেশে আসতে চান তারা ইতোমধ্যে নাগরিকত্ব পেতে যৌথ জরিপ দলের কাছে ফরম পূরণ করতে শুরু করেছেন। আগামী ১ আগস্ট থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি সাপেক্ষে ছিটমহলগুলোতে জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশে ও ভারতের সরকার যৌথভাবে এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলাদেশ-ভারত মধ্যে ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তি এবং ২০১১ সালের প্রটোকল কার্যকরের প্রেক্ষিতে ছিটমহলবাসীদের অবগতির জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সাত প্রকারের নিদের্শনামূলক একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রচার ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। এই বিজ্ঞপ্তির মধ্যে জমি-জমা ক্রয়-বিক্রয় নিদের্শনা ছাড়াও রয়েছে যারা স্ব স্ব দেশের নাগরিকত্ব পেতে চান তাদের প্রত্যেককে ১৬ জুলাই যৌথ জরিপকারীদের নিকট ফরম পূরণ করতে হবে। ভারত কিংবা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বহাল রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করলে ১ আগস্ট থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবার পর তারা মূল ভূখণ্ডে যেতে পারবেন। এই সময় সীমার পর এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে ইচ্ছুকদের প্রয়োজনীয় ট্রাভেল পাশ ইস্যু করা হবে। যারা রাষ্ট্র পরিবর্তন করতে চান তারা ৩টি চেক পয়েন্ট দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। চেক পয়েন্টগুলো হলো, কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সাহেবগঞ্জ-বাগভান্ডার, লালনিরহাটের বুড়িমারী-ভারতের মেকলীগঞ্জের চেংরাবন্দর, পঞ্চগড় জেলার হলদিবাড়ি চেক পয়েন্ট।নাজমুল হোসেন/এমজেড/এমআরআই

Advertisement