বাংলাদেশ-ভারতের ১৬২টি ছিটমহলে যৌথ জনগণনায় নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলার অভ্যন্তরে অবস্থিত ১২টি ছিটমহলের অধিবাসী বাংলাদেশে থাকার ব্যাপারে এর আগে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু বর্তমানে নানান প্রলোভন ও প্রচারণার মাধ্যমে তারা দ্বিধাগ্রস্ত। এ নিয়ে ছিটমহল বিনিময় বাস্তবায়ন কমিটি ও বিপক্ষ গ্রুপ নানান কর্মতৎপরতা চালাচ্ছেন। সরকারি প্রশাসন থেকে এ ব্যাপারে ছিটবাসীকে কারো কথায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। ২০১১ সালে জনগণনা অনুযায়ী জেলার ১২টি ছিটমহলের ভূ-খণ্ডের আয়তন ২২৪৩ একর জমি। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবারে রয়েছে ৮৩০৭ জন মানুষ। এরমধ্যে ফুলবাড়ীর ১৫০নং ভারতীয় ছিটমহল দাসিয়ার ছড়ার আয়তন ১৯৪৩ একর। জনবসতি ৭১৫৮ জন মানুষ। অপরদিকে ভূরুঙ্গামারীতে ১০টি ছিটমহলে মোট জমি রয়েছে মাত্র ৩শ একর। এখানে ১১৪৯ জন মানুষের বাস। এর আগে ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনগণনার সময় বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থিত ভারতের ১১১টি ছিটমহলের ১৪৯টি পরিবারের ৭৪৩ জন মানুষ ভারতে যাবার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জেলার ১২টি ছিটমহলে যৌথ জরিপ দলের গণনার কাজ ৬ষ্ঠ দিনে (শনিবার পর্যন্ত) ৩২ পরিবারে ১২৮ জন সদস্য ভারতীয় নাগরিক হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ১৬ জুলাইয়ের যৌথ সমীক্ষার পর জানা যাবে কত জন ভারতে যেতে আগ্রহী। তবে বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে চাননা অনেকেই। থাকতে চান বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে।দাসিয়ার ছড়া ছিটমহলের বোর্ডেরহাট এলাকার খলিলুর রহমান (৬৪), আব্দুল আজিজ (৮৪), কালিরহাট এলাকার নজরুল ইসলাম (৪০), কালিরহাট মধ্যপাড়া এলাকার মিনু বেগম (২৬), আরজিনা আকতার (২০) ও হামিদাসহ (৩৫) অনেকেই জানান, এর আগে ভারতে যাবার ব্যাপারে ছিটবাসীদের কম আগ্রহ দেখা গেলেও ছিটমহল বিনিময় চুক্তি ভারতের পার্লামেন্টে অনুমোদন হবার পর থেকে ছিটবাসীদের পুনর্বাসনে ভারত প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন শুনে বেশি সুযোগ সুবিধা পাবার আশায় ভারতে যাবার ব্যাপারে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে তারা অভিযোগ তোলেন ভারত যেতে আগ্রহ প্রকাশকারীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বিরোধীতাকারী সংগঠন ছিটমহল ইউনাইটেড কাউন্সিল, বাংলাদেশ ইউনিট এর সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান জাগো নিউজকে জানান, আমরা ভারতের নাগরিক। আমরা ভারত যেতে আগ্রহী হলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেকেই তা প্রকাশ করতে পারছেন না।এ সংগঠনের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, ভারত সরকার ছিটবাসীদের জন্য ৪ তলা ভবনে ৩ রুমের ফ্ল্যাট, নগদ ৫ লাখ টাকা, ২৩ ধরনের রেশন সুবিধাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবে। এই প্ররোচনায় বিশ্বাস করে ভারতে যাবার ব্যাপারে আগ্রহীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জাগো নিউজকে জানান, একটি কুচক্রী মহল বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় বাঁধাগ্রস্ত করতে নানান ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা সক্রিয়ভাবে হেড কাউন্টিংকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পায়তারা করছেন। এ বিষয়ে প্রশাসনকে আরো সজাগ হবার আহ্বান জানান তিনি।এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন জাগো নিউজকে জানান, বর্তমান সরকারের বড় সাফল্য ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন। এখানে কেউ কাউকে জোর করতে পারবেন না। জনগণনা ও নাগরিকত্ব বিষয়টি পরিষ্কার হলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ১১১টি ছিটমহলের উন্নয়নে কাজ করা হবে। এজন্য সরকার বর্তমান বাজেটে ২শ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে। আপনারা কারো কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে প্রশাসন ও সরকারকে সহযোগিতা করুন। সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে।নাজমুল হোসনে/এমজেড/এমআরআই
Advertisement