কিছুতেই কান্না থামছিলনা সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত যুবক মাসুদ মিয়ার মা নূর জাহান বেগমের। ছেলের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর থেকে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। কান্না জড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেল। বাড়ি বন্ধক রেখে, সুদে টাকা নিয়ে সামান্য সুখের আশায় ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আমার কপালে সুখ সইলোনা। আমার বুকের ধন আল্লাহ কেড়ে নিয়েছে। তোমরা আমার বাবার লাশ এনে দাও।ছোট্ট কুঁড়েঘরে একপাশে কাঠের চৌকিতে শুয়ে আহাজারি করছেন মাসুদের বাবা মো. উসমান মিয়া। তিনি হার্টের রোগি। বার বার তার মাথায় পানি দেয়া হচ্ছে। হাউমাউ করে বোবাকান্নায় বুক চাপড়াচ্ছেন মাসুদের বাক প্রতিবন্ধী বোন শিরিন আক্তার। হাত চোখের ভাষায় বলার চেষ্টা করছেন, তাদের মুখে খাবার দিতেই মাসুদ বিদেশ গিয়েছিলেন। তার আর কোনো কর্মক্ষম ভাই নেই। এখন তাদের কী হবে!শুক্রবার সৌদী আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদী ইউনিয়নের নামা মির্জাপুর গ্রামের উসমান মিয়ার ছেলে মাসুদ মিয়া (২০)। ওই দিন বিকেলেই এ সংবাদ পৌঁছে মাসুদের গ্রামের বাড়িতে। শনিবার বিকেলে মাসুদের বাড়িতে গিয়ে এমন কান্না আর আহাজারি দেখা যায়।এমন মৃত্যু কাম্য ছিলনা কারো। তাই খবর শুনে আশপাশের লোকজন ভিড় করছেন তাদের বাড়িতে। নিহত মাসুদের চাচা তমিজ উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, তিন ভাই আর এক বোনের সংসারে মাসুদ বড়। তার অপর দুই ভাই মকসুদ (২০) ও মামুন (১৫) বাক প্রতিবন্ধী। আর একমাত্র বোন শিরিন আক্তারও (১৮) বাক প্রতিবন্ধী। সংসারে একমাত্র সুস্থ-সবল এবং কর্মক্ষম ছিলেন মাসুদ। তাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পরিবারটি।চরফরাদী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বর হাজী মো. মঞ্জুরুল হক জাগো নিউজকে বলেন, মাসুদের বাবা উসমান ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার। তাদের সহায় সম্বল বলতে ছিল ৯ শতাংশ বসতবাড়ি। মাসুদ ফেরি করে মুড়ি বিক্রি করে পরিবারে কিছুটা হাল ধরেছিলো। তবে পরিবারের অভাব লেগেই ছিল। খেয়ে-না খেয়ে থাকতে হতো তাদের। এ অবস্থায় মাসুদের বাবা উসমান একই গ্রামের জালাল উদ্দিনের কাছে ৫ লাখ টাকায় বসতবাড়ি বন্ধক রাখেন। এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে চড়া সুদে আরো আড়াই লাখ টাকা নেন।মাসুদের বাবা উসমান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, নিজের বতসবাড়ি বন্ধক রেখে এবং সুদে টাকা নিয়ে সাড়ে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে এক দালালের মাধ্যমে ছেলেকে সৌদি আরব পাঠাই। সেখানে গিয়ে মাসুদ একটি মার্কেটের পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ করছিলো। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার মাত্র ২১ দিনের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় আমার ছেলে। দুর্ঘটনায় সন্তান ও সহায়-সম্পদ হারিয়ে ওসমান মিয়ার পরিবার এখন পথে বসেছে। সবকিছু হারিয়েও প্রিয় সন্তানের মরদেহ পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন মাসুদের পরিবার। এ ব্যাপারে সরকারি সহায়তা চেয়েছে অসহায় পরিবারটি।নূর মোহাম্মদ/এমজেড/এমএস
Advertisement