ভ্রমণ

ফিড মিল ও অর্কিড বাগানে একদিন

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা। একদিন পড়েই সেমিস্টার ফাইনালের প্রস্তুতিমূলক ছুটি শুরু। সবার বাসায় যাওয়ার জন্য মন উড়ুউড়ু করছে। কিন্তু সবাই সেজেগুজে বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যালিপ্যাডে এসে হাজির। সবার মাঝেই আনন্দের আমেজ, বাসার আকুলতা নেই। থাকবেই বা কেন আজ আমরা যাচ্ছি প্রভিটা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং অর্কিড বাগানে। আমাদের জন্য আগে থেকেই গাড়ি এসে হাজির। শিক্ষকমণ্ডলী এলেই শুরু হলো আমাদের যাত্রা। গীটারের সঙ্গে গানে গানে চলতে থাকলো আমাদের গাড়ি।

Advertisement

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধীনে আমাদের লেভেল-৩, সেমিস্টার-২, ফিশ নিউট্রিশনের শিক্ষা সফর এটি। কোর্স শিক্ষক অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেনের আয়োজনে ১০৭ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে ছিলেন অধ্যাপক ড. মোহসীন আলী, অধ্যাপক ড. মনোরঞ্জন দাস, বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মাহ্ফুজুল হক ও অধ্যাপক ড. আলী রেজা ফারুক।

মাছ নিয়েই আমাদের কাজ। মাছের জন্য প্রয়োজন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। সেই খাবার কী দিয়ে তৈরি হয়, কিভাবে তৈরি হয়_ তা হাতেকলমে জানতেই গিয়েছিলাম প্রভিটা ফিড ইন্ডাস্ট্রিজে। সকাল ১০টায় পৌঁছে যাই গন্ত্যবে। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন কর্তৃপক্ষ। খামারিরা যে খাদ্য বস্তাভর্তি কেনে, তা কী দিয়ে, কিভাবে তৈরি হয়— বিস্তারিত বর্ণনা করলেন তারা। নাস্তা সেরে স্বচক্ষে দেখার পালা। গ্রুপ অনুযায়ী ভাগ হয়ে ঢুকে পড়লাম কারখানায়। অত্যাধুনিক অটোমেশিনে খাবার তৈরির সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া স্বচক্ষে দেখলাম। অর্জন করলাম নতুন বাস্তব অভিজ্ঞতা। তাদের আতিথেয়তা ছিল সত্যিই অসাধারণ। সবাইকে সকাল, দুপুরের খাবার এবং উপহার সামগ্রী তুলে দেন। আমরা নিজেদের ছবি তুলে বেরিয়ে পড়ি পরবর্তী গন্তব্য অর্কিড বাগানের উদ্দেশে। বিকেল সাড়ে তিনটায় পৌঁছে গেলাম সেখানে।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার এনায়েতপুরের ২৫ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে মনোমুগ্ধকর দীপ্ত অর্কিড বাগান। বাংলাদেশের একমাত্র অর্কিড ফুলের বাগান এটি। এখানে প্রায় ২০০ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। ফুল ২০-২৫ টাকা আর গাছ ৫০০-২০০০ টাকা। সুগন্ধী না হলেও আকৃতি আর বর্ণবৈচিত্র্যের কারণে অর্কিড খুবই জনপ্রিয় ফুল। আমাদের দেশে এর প্রচলন কম থাকলেও বিদেশে এর রয়েছে প্রচুর চাহিদা। অর্কিড খুবই কষ্টসহিষ্ণু গাছ। এরজন্য মাটির সংস্পর্শ না হলেও চলবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন সরাসরি সূর্যের আলো না পড়ে। আমরা পুরো বাগান ঘুরে দেখতে দেখতে ছবি তুললাম।

Advertisement

যখন সন্ধ্যা নেমে আসতে শুরু করল, তখন মনে হচ্ছিল— দিনটি কেন আর একটু বড় হলো না। ঝটপট উঠে পড়লাম বাসে। গানের তালে ছুটতে থাকলাম ক্যাম্পাসের দিকে। এখানেই শেষ নয়। ট্যুর পরবর্তী পূণর্মিলনী না হলে কেমন হয়? স্যাররা ঘোষণা করলেন— শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় টিএসসিতে আবার একত্রিত হবো।

শুক্রবার বিকেল না গড়াতেই ক্যাম্পাসে দেখা যাচ্ছিল শাড়ি ও পাঞ্জাবি পরা অনেক তরুণ-তরুণী। সারা বছর ক্লাস, পরীক্ষার মাঝে এমন সুযোগ কমই হয়। তাই কেউ সুযোগ হাতছাড়া করেনি। সারা বিকেল ঘোরাঘুরি ও ছবি তুলে সন্ধ্যা ৭টায় সবাই হাজির টিএসসিতে। একই সঙ্গে অনুষদের ডীন ও বিভাগের শিক্ষকরাও এসে হাজির। সবাই যেন নতুন সাজে নতুন রূপে। শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় হলো নাচ, গান আর হৈ-হুল্লোড়। অধ্যাপক ড. মাহফুজুল হক বাঁশি বাজিয়ে শোনালেন।

শেষে সবাই রাতের খাবার খেলাম। পড়াশোনার পাশাপশি প্রতি বিভাগ থেকে যেন এমন সুন্দর কিছু মুহূর্ত উপহার দেওয়া হয়— এমন প্রত্যাশায় শেষ হলো আমাদের আনন্দ আয়োজন।

মো. শাহীন সরদার/এসইউ/এমএস

Advertisement