বগুড়ায় সোনাতলায় হেলিকপ্টারে এসে বিয়ে করলেন চাঁদপুরের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আরেফীন খাঁন। শুক্রবার দুপুরে রাজকীয় এ বিয়ে সম্পন্ন হয় উপজেলার কাবিলপুর গ্রামে। হেলিকপ্টারে করে আসার পর সেখান থেকে বিয়ে বাড়ি দুই কিলোমিটার দূরে হওয়ায় বরকে হাতির পিঠে করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় রাস্তায় হাজার হাজার উৎসুক জনতার বরকে দেখার জন্য ভিড় করে।
Advertisement
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোনাতলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাবিলপুর গ্রামের মৃত আলহাজ্ব শামস উদ্দিন আকন্দের ছেলে জাকির হোসেন বেলালের বড় মেয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ফারজানা আকতার স্নিগ্ধার সঙ্গে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার খাঁনবাড়ি পূর্ব নাউরী এলাকার প্রবাসী শায়েস্তা খাঁনের একমাত্র ছেলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আরেফীন খাঁনের বিয়ে ঠিক হয়। শুক্রবার সেই বিয়ের অনুষ্ঠান সোনাতলা সদর ইউনিয়নের কাবিলপুরস্থ গ্রামে সম্পন্ন হয়।
বর শামসুল আরেফীন খাঁন বেলা ১১টায় হেলিকপ্টারে করে সোনাতলা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ মাঠে অবতরণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মা জেসমিন খাঁন, বোন ও বোন জামাই। এরপর সেখান থেকে বরকে হাতির পিঠে চড়িয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে শ্বশুরবাড়ি কাবিলপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় বাদকের একটি দল ছিল। হাজারও উৎসুক জনতা রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে বরের হাতিতে চরে বিয়ে করতে যাওয়ার দৃশ্য উপভোগ করেন।
বরযাত্রী ছিলেন প্রায় দেড় শতাধিক। তারা বিয়ের আগের দিন বৃহস্পতিবার বগুড়ায় এসে শহরের একটি আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপন করেন। শুক্রবার সকালে ১৫টি মাইক্রোযোগে বিয়ে বাড়িতে আসেন। বর হাতি থেকে নেমে স্থানীয় মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করেন। এরপর বিয়ের আসরে বসেন। স্থানীয় কাজী হাবিবুর রহমান হাবিব বিয়েটির রেজিস্ট্রি করেন। সোনাতলা ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বিয়ে পড়ান। বিয়েতে কাবিন ধার্য করা হয় ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিয়েতে প্রায় ৪ হাজার লোকজনকে আমন্ত্রণ করা হয়।
Advertisement
আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন- সোনাতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির, সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল করিম শ্যাম্পো, সোনাতলা পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম নান্নুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। বিয়েতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
বিয়ে অনুষ্ঠানের বাবুর্চি মুঞ্জ রহমান জানান, ১৮ থেকে ২০ মণ চাল, চারটি গরু, আটটি খাসি জবাই করে রান্না করা হয়। এছাড়াও সাড়ে তিন হাজার মুরগির রোস্ট করা হয়েছে। খাবারের আইটেম ছিল, বিরিয়ানি, কাচ্চি বিরিয়ানি, মোরগের রোস্ট, খাসির মাংস, গরুর মাংস, সালাদ, দই, বোরহানি, মিষ্টি, সফট ড্রিংকস।
কনের বাবা জাকির হোসেন বেলাল জানান, তার চার কন্যার মধ্যে ফারহানা আকতার স্নিগ্ধা সবার বড়। সেও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। শখ ছিল জামাইকে হাতিতে করে বাড়ি নিয়ে আসবেন। এ জন্য তিনি হাতির আয়োজন করেন।
কনে ফারহানা আকতার স্নিগ্ধা জানান, তার বাবা একজন সৌখিন লোক। তাই তার বিয়েতে ব্যাপক আয়োজন।
Advertisement
বর শামসুল আরেফিন খান জানান, তিনি ঢাকার একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তার বাবা জাপান প্রবাসী। মাসে তাদের আয় ৮-১০ লাখ টাকা। হেলিকপ্টারে চেপে আসতে তার ব্যয় হয়েছে আড়াই লাখ টাকা।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেল ৪টায় বর-কনে, বরের মা ও বোন আবারও হেলিকপ্টারে চেপে সোনাতলা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ থেকে রওয়ানা দেন।
আরএআর/এমএস