দেশে যে উন্নয়ন, তার ছোঁয়া রংপুরেও খানিকটা লেগেছে। শহরের মধ্যকার সড়কগুলো প্রশস্ত হয়েছে। প্রধান সড়কগুলোয় ডিভাইডার বসেছে। সড়কে সড়কে বাতি জ্বলে রাতভর। পানি, বিদ্যুতের ব্যবস্থাও যথার্থ। ড্রেন, ময়লা নিয়েও তেমন অস্বস্তি আছে বলে মনে করে না রংপুরবাসী। মশার অত্যাচার অন্য মহানগরের মতো নয় রংপুর নগরে।
Advertisement
বহুমাত্রিক উন্নয়নের ফল এককভাবে ঘরে তোলার কথা ছিল আওয়ামী লীগ নেতা সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর। এরশাদ জামানার কথা ভুলেই মানুষ গতবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত ঝন্টুকে বিজয়ী করেছিল। গত দশ বছরে রংপুরে যা কিছু উন্নয়ন, তার ছিলমোহরে ঝন্টুর নাম বসবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু উন্নয়নেই যে ভোট মেলে না, তার আরেকবার প্রমাণ মিলল রংপুরের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। রাজনৈতিক বা গণতান্ত্রিক বিজয় বলে তৃপ্তির ঢেকুর তুললেও রংপুর আওয়ামী লীগে এখন হাহাকার। এত উন্নয়ন! তবুও আস্থা মিলল না। ব্যক্তি ইমেজেই সব গেলো!
জাতীয় নির্বাচনের আগে এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের লাখো ভোটের ব্যবধানে ভরাডুবি চিন্তার বলিরেখা দীর্ঘায়িত করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারাও মনে করছেন, এই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নেয়ার যথেষ্ট কারণ দেখা দিয়েছে। নেতারা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে রংপুরের উন্নয়ন করছেন। উন্নয়নের স্রোত এখনও প্রবাহমান। প্রধানমন্ত্রীর নিজের সংসদীয় আসন রংপুরে। জাতীয় পার্টির দুর্গ ভেঙেই রংপুরের আসনগুলোয় আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে আসছে। এমন সময় লাখ ভোটের পরাজয় নিঃসন্দেহে ভাবনার বিষয়।
Advertisement
কথা হয়, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে রংপুর সিটি কর্পোরশেন নির্বাচন প্রসঙ্গে। সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় এই নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায়। গণভাবনাও প্রকাশ পায় এসব নির্বাচনে।
নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় সরকারের রাজনৈতিক বিজয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিরোধী পক্ষের নানা অভিযোগ ছিল এই নির্বাচনকে ঘিরে। তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। জনগণ গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভোট কেন্দ্রে এসেছে। এটি মানুষের বিজয়।
প্রার্থী বাছাইয়ে ত্রুটি ছিল কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রংপুরের মানুষ উন্নয়নের মহাসড়কে। এরপরেও এমন পরাজয় আমাদের জন্য শিক্ষা বটে। এখন বিশেষ বার্তা মিলেছে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। রংপুরের মানুষ সরকার থেকে মুখ ফেরায়নি। মুখ ফিরিয়েছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কাছ থেকে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে এখন থেকে শিক্ষা নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, তা আরেকবার প্রমাণ হলো রংপুরে। এই নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে আমাদের সতর্ক করেছে। তবে বিএনপিকে যে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে, তারও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে রংপুরে। আমরা এখন থেকে বিশেষ বার্তা পেলাম বটে।
Advertisement
নৌকার পরাজয় হলেও গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মামুদ বলেন, জনগণ ভোট দিয়েছে। কোনো অঘটন ঘটেনি। সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে নির্বাচন নিয়ে।
তিনি বলেন, রংপুর জাতীয় পার্টির দুর্গ এটি তো অস্বীকার করার সুযোগ নেই। গতবার ঝন্টু সাহেব আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেও নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেননি। এবারে মানুষ প্রার্থীর ওপর আস্থা রাখতে পারেনি বলেই এমনটি হয়েছে বলে মনে করছি। তবে পরাজয়ের আরও কি কারণ থাকতে পারে, তা অবশ্যই আমলে নিয়ে বিশ্লেষণ করবে আওয়ামী লীগ।
এএসএস/এমআরএম/এমএস