খেলাধুলা

মাশরাফির রেঞ্জ রোভার ও অ্যাম্বুলেন্স সমাচার!

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলবো না, ফেসবুকে গত ৭২ ঘণ্টায় দুটি বিষয়ে লেখা আমার নজরে পড়েছে। প্রথমটি মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নিয়ে আর পরেরটি আমিনুল ইসলাম বুলবুল তনয়কে নিয়ে। আমাদের সবার প্রিয় মাশরাফিকে নিয়ে একটি লেখা দেখি অনেকেই কপি আর পেস্ট করে চালিয়ে দিচ্ছেন, তাহলো মাশরাফি নাকি বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে ৫/৭ কোটি টাকার রেঞ্জ রোভার গাড়ি না নিয়ে তার নিজ এলাকা নড়াইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে নিয়েছেন।

Advertisement

শেষের লাইনটি শতভাগ সত্য। রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি তার ফ্র্যাঞ্চাইজি বিশেষ করে বসুন্ধরা গ্রুপের স্বত্বাধিকারী শাহ আলম সাহেবের পুত্র সাফওয়ান সোবহানের কাছে নড়াইলের জন্য অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলেন। সেটা জাগো নিউজ তথা আমার সঙ্গে আলাপে নিজ মুখেই জানিয়েছেন।

মাশরাফির কথা, ‘আমি বিপিএল শুরুর আগেই আমার ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছে এলাকার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলাম। তারা তা দিয়েও দিয়েছেন। আমি এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’ বুধবার রাতে নড়াইলে নিজ বাড়ীতে বসে মুঠোফোনে একথা জানান নড়াইল এক্সপ্রেস।

রংপুর অধিনায়ক তথা বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়কের কথাটি মন দিয়ে লক্ষ্য করুণ, যেখানে রংপুর অধিনায়ক মাশরাফির পরিষ্কার সংলাপ, ‘আমি বিপিএল শুরুর আগেই ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছে অ্যাম্বুলন্স চেয়েছিলাম। তা পেয়েছি। অথচ কেউ কেউ ফেসবুকে লিখে লিখে ভরে ফেলেছেন, মাশরাফি রেঞ্জ রোভার গাড়ির অফার ফিরিয়ে নিজ এলাকার জন্য অ্যাম্বুলেন্স নিয়েছেন।’

Advertisement

মাশরাফি যেটা করেছেন সেটাই অনেক। আজকাল বেশির ভাগ মানুষ নিজের কথাই ভাবে। অনেক মানবীয় গুণে গুণান্বিত মাশরাফি এমনিতেই সর্বজনীন মানসিকতার মানুষ। তারই ধারাবাহিকতায় নিজের জন্য না চেয়ে বিপিএল শুরুর আগে নিজ দলের ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছে এলাকার সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার একটি অতি প্রয়োজনীয় উপকরণ অ্যাম্বলেন্স চেয়ে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এখানে তার এলাকার মানুষের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসাই ফুটে উঠেছে।

কিন্তু তিনি রেঞ্জ রোভার গাড়ি না নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স নিয়েছেন, সে কথাটি কে বা কারা ছড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বোঝাতে চাইছেন, মাশরাফি ৫ কোটি টাকার রেঞ্জ রোভার গাড়ির মায়া ত্যাগ করে এলাকার মানুষের জন্য অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছেন তার ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে। যা আদৌ সত্য নয়। সত্যের অপলাপ।

কারণ মাশরাফি এখনো জানেন না, তাকে আদৌ রেঞ্জ রোভার গাড়ি দেয়া হচ্ছে কি না? এ সম্পর্কে আসলে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ‘জাগো নিউজ২৪.কমে।’ গত ১৩ ডিসেম্বর মাশরাফির জন্য ‘রেঞ্জ রোভার’ গাড়ি পুরস্কার বসুন্ধরার! শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে বিশ্ব বিখ্যাত ‘রেঞ্জ রোভার’ ব্র্যান্ডের গাড়ি পেতে যাচ্ছেন মাশরাফি। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৫ কোটি টাকার উপরে। সূত্রটি জানিয়েছেন, সেটি হবে কাস্টমাইজড গাড়ি। যাতে মাশরাফির নাম ‘নেইম প্লেট’ করা থাকবে। রেঞ্জ রোভার গাড়ির পুরস্কারটা নাকি সারপ্রাইজ প্যাকেজ হিসেবে থাকছে। তাই ফ্র্যাঞ্চাইজি তথা বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো রকম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

প্রতিবেদনে একবারও বলা হয়নি, মাশরাফি ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছেন। রংপুর ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কারো উদ্ধৃতি দিয়েও এমন কথা লেখা ছিল না যে, তারা মাশরাফিকে রেঞ্জ রোভার দিতে চেয়েছেন। বলা হয়েছে তাদের ঘনিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে। এখন সেটা নিয়ে রীতিমত এক গল্প তৈরি হয়ে গেছে। যা প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এ বিভ্রান্তির অবসান হওয়া উচিৎ।

Advertisement

সে আলোকেই এ প্রতিবেদন। মাশরাফি যা করেছেন, তার জন্য শুধু মামুলি ধন্যবাদ যথেষ্ট নয়। তাকে হাজার বার ধন্যবাদ দিলেও শেষ হবে না। নিজ এলাকার সাধারণ মানুষের কথা ভাবা, তাদের চিকিৎসা সেবার জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার চিন্তাই আমাদের সমাজের অনেক প্রতিষ্ঠিত মানুষের নেই। মাশরাফি তা কে দেখিয়েছেন তার মানবতাবোধ কতটা জাগ্রত। এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য তার আন্তরিক ভালোবাসা অনেক প্রবল।

কিন্তু তাকে বড় করতে গিয়ে সত্যের অপলাপ করে লাভ কি? ৫ কোটি টাকার রেঞ্জ রোভার গাড়ি না নিয়ে নিজ এলাকার মানুষের জন্য মাশরাফি অ্যাম্বুলেন্স বেছে নিয়েছেন, না জেনে এ কথা ছড়ানো কেন? এসব বলে মাশরাফিকে বড় করার দরকার আছে কী?

মাশরাফি এমনিই অনেক বড়। মাঠের লড়াকু সৈনিক। সফল সেনাপতি। মানুষ হিসেবেও নানা মানবিক গুণাবলী তার মাঝে বিদ্যমান। তিনি শুধু দক্ষ অধিনায়ক বা বল-ব্যাট হাতে মাঠের লড়াকু সৈনিকই নন, দারুণ ভালো মনের মানুষ। তার বিনয়, নম্রতা ও সৌজন্যতা সর্বজন স্বীকৃত।

কিন্তু একটা ভুল তথ্য উপস্থাপন করে তাকে বড় করার চেষ্টা চলছে। যা রীতিমত অপচেষ্টা। আশা করি এ প্রতিবেদনের পর সে ভুল ভাঙবে। সবাই জানবেন, মাশরাফি বিপিএল শুরুর আগেই নিজ এলাকা তথা নড়াইলের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলেন রংপুর মালিকদের কাছে। তার সঙ্গে তাকে রেঞ্জ রোভার গাড়ির কোনই সম্পর্ক নেই। আর ঐ কোটি টাকার গাড়ি বাদ দিয়ে মাশরাফির অ্যাম্বুলেন্স নেয়ার খবরও ঠিক নয়।

এটাই শেষ নয়। কাল রাত থেকে দেখছি কোন কোন অনলাইন আর কেউ কেউ স্ট্যাটাস দিচ্ছেন বাংলাদেশের আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বড় ছেলে নাকি অস্ট্রেলিয়ান অনূর্ধ্ব-১৫ দলে সুযোগ পেয়েছে। এটাও ভুল তথ্য। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বড় ছেলে আগেই অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের অনূর্ধ্ব-১৫ দলে সুযোগ পেয়েছেন।

তার অস্ট্রেলিয়ান অনূর্ধ্ব-১৫ ইনডোর দলে জায়গা পাবার একটা সম্ভাবনা আছে। যার ট্রায়াল আগামী সেপ্টেম্বরে। এ বিষয়ে বৃহষ্পতিবার রাতে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে আমিনুল ইসলাম বুলবুল ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৫ দলে চান্স পেয়েছে, এ খবর ছড়ালো কে বা কারা?’

বিনয়ী আমিনুল ইসলাম বুলবুল জাগো নিউজের মাধ্যমে সবাইকে জানান, ‘আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন কাইন্ডলি। সে এর আগে একটি রাজ্য দলের অনূর্ধ্ব-১৫ দলে খেলেছে। আর সামনে তার অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৫ দল, তাও আউটডোর নয়, ইনডোর দলে জায়গা পাবার একটা সম্ভাবনা আছে। আগামী বছর সেপ্টেম্বরে তার ট্রায়াল হবে। ঐ ট্রায়ালে টিকলে তবেই না অস্ট্রেলিয়ান অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সদস্য হতে পারবে। সেটাও কিন্তু আউটডোর দল না। ইনডোর দলের।’

বলার অপেক্ষা রাখে না, অস্ট্রেলিয়ায় বয়স ভিত্তিক দল তৈরি করা হয় অনেক ভেবে চিন্তে। মূল দল গড়া হয় আউটডোরের জন্য। আর দ্বিতীয় দলটি গড়া হয় ইনডোর ক্রিকেটের জন্য। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের উপরের বক্তব্যে আশা করি বিভ্রান্তি দূর হবে।

তারপরও একটা কথা না বলেই পারলাম না, ক্রিকেট বিশেষ করে দেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের ভক্ত হওয়া ভালো। তাদের ভাল পারফরমেন্সের প্রশংসা করায়ও কোনই দোষ নেই। কিন্তু ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অযাচীত প্রশংসা আর তা নিয়ে হৈ চৈ বাধিয়ে ফেলার মধ্যে কোন কৃতিত্ব আছে কী?

এআরবি/এমআর/আইআই