ঈদের আগ মুহূর্তে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে এ পর্যন্ত পদদলিত হয়ে ১৩৮ জনের মৃত্যু হলেও কোনো সরকার এ বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনা বা প্রতিরোধমূলক গ্রহণ করেনি। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ সবার উদ্যোগ শোকবার্তা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা দেখা যায়। আর স্থানীয় প্রসাশনের নামমাত্র আর্থিক সহায়তাকে গরিবদের প্রতি উপহাস হিসেবে দেখছেন অনেকে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের এমন নীরবতাকে উদাসীনতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটছে অথচ কোনো সরকার কার্যকর কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা এ বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে কেন পারেনি এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সমাজবিজ্ঞানী ড. নেহাল করিম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের দেশে সরকার চাইলে সব হয়, সরকার না চাইলে কিছুই হয় না। এদেশে সব কিছু প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে। দুর্নীতিবাজরা লোক দেখানোর জন্যে জাকাত দেয়ার নামে অলৌকিক শক্তিকে বিশ্বাস করে এসব কাণ্ড করে থাকে। তা না হলে ২৭ জন লোক কীভাবে মারা যায়। এদের লাশের উপর দিয়ে কীভাবে বেহেশতে যাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, সমাজ না পাল্টালে এসব বন্ধ হবে না। সত্যিকারার্থে আর্তসামাজিক উন্নয়ন না হলে দরিদ্ররা অন্যের মুখাপেক্ষি হবে, জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে প্রাণ দিবে, এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানসহ অতীতের সবগুলো সরকার এ বিষয়ে চরম উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০০২ সালে গাইবান্ধায় জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৪২ জন মারা যায়। চট্টগ্রামে ১৯৯০ সালের ২৬ এপ্রিল পাহাড়তলীর আবুল বিড়ি কারখানায় জাকাত নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৩৫ জন নিহত হন। ১৯৮৯ সালের ৫ মে চাঁদপুরে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা যান ১৪ জন। ১৯৮৭ সালের ২৩ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে জাকাত প্রদানকালে ব্যাপক লোকসমাগম হয়। এক পর্যায়ে জনগণ উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়ে চারজন মারা যান। ১৯৮০ সালে ঢাকার জুরাইনে জাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ১৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ১৯৮৩ সালের ৯ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জাকাতের টাকা নিতে গিয়ে ভিড়ের চাপে পড়ে মারা যায় তিন শিশু। আরএম/বিএ/এমআরআই
Advertisement