খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীচরের বিন্দু কুমার কৃষি কাজ করেন। তার স্ত্রী রবি মালা গৃহিনী। ৫ কন্যার সবার ছোট মনিকা চাকমা রাঙ্গামাটির ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্রী। পরিবারের কারোরই সম্পৃক্ততা নেই ফুটবলে। বিন্দু কুমার ও রবি মালার কেউই চাননি তার কোনো মেয়ে ফুটবল খেলুক। খেললেও বকা দিতেন, বাধা দিতেন।
Advertisement
বাবা-মায়ের বাধা উপক্ষো করেই ফুটবল নিয়ে মাঠে ছুটেছেন ছোট মেয়ে মনিকা। ২০১১ সালে বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় টুর্নামেন্টে ফুটবল খেলেছেন ময়মনসিংহের হয়ে। দুই বছর পর খেলেছেন নিজ স্কুলের জার্সি গায়ে। বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট থেকে উঠে আসা সেই মনিকাই এখন দেশের নারী ফুটবলের অন্যতম বড় মুখ। খেতে ফসল ফলানো বিন্দুর মেয়ে ফুটবলের ফুল ফুটিয়ে যাচ্ছেন লাল-সবুজ জার্সি গায়ে। ফুটবল মাঠ রাঙাচ্ছেন বাবার চোখ রাঙানি খাওয়া সেই মেয়ে মনিকা।
বৃহস্পতিবার সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে ৩-০ ব্যবধানে হারানো ম্যাচের শেষ গোলটি মনিকার চাকমার। দারুণ গোল ছিল সেটি। শামসুন্নাহারের কাছ থেকে বল পেয়ে ঢুকে পড়েন ভারতের সীমানায়। দু’জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে গোল। শুধু গোলই করেনি, খেলেছেও দুর্দান্ত। ম্যাচসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে। প্রথম ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষেও ছিল একটি গোল। ওই ম্যাচেরও সেরা ছিলেন রাঙ্গামাটির এ কিশোরী।
ভারতকে হারানোর পর মনিকামুখী হয়ে পড়েছিল মিডিয়া। সেটাই স্বাভাবিক। ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ভালো খেলার প্রসঙ্গ উঠতেই লাজুক হাসি দিয়ে মনিকা বললেন, ‘আমি স্বাভাবিক খেলার চেষ্টা করি। আসলে খেলতে খেলতে বুঝতে পারি না কতটা ভালো খেলি।’
Advertisement
বাবা-মায়ের বাধার পরও কিভাবে ফুটবলার হলেন? ‘ফুটবল আমার অনেক ভালো লাগে। তাই বকা খেয়েও মাঠে গিয়েছি, ফুটবল খেলেছি। বাবা আমাকে খেলতেই দিতেন না। তারপরও চুরি করে মাঠে গিয়ে খেলতাম। তবে বির সেন স্যার আমাকে খেলার জন্য খুব উৎসাহ দিতেন। এখন তো ফুটবলই আমার সব’-রহস্যের ঝাঁপিটা খুলে দিলেন মনিকা।
এ টুর্নামেন্টে তিন ম্যাচে ২ গোল। এর আগেও আন্তর্জাতিক গোল রয়েছে অনূর্ধ্ব-১৫ নারী দলের এ সদস্যার। গত বছর তাজিকিস্তানে করেছেন দুটি গোল। একটি করেছেন থাইল্যান্ডে আরো বড় টুর্নামেন্টে। দেশে মনিকার আইডল জাতীয় দলের স্ট্রাইকার সাবিনা খাতুন। বিদেশে পর্তুগালের রোনালদো, আর্জেন্টিনার মেসি ও ব্রাজিলের মার্সেলো। রোনালদো, মেসি- প্রিয় খেলোয়াড় ঠিক আছে। কিন্তু মার্সেলো কেন? ‘মার্সেলোর খেলা আমার ভালো লাগে। আমি ইউটিউবে তার অনেক খেলা দেখি’-জবাব মনিকার।
এই তো গত বছরই তাজিকিস্তানকে দুইবার হারিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। সেই দলের সদস্যও ছিলেন মনিকা। তিন ম্যাচের মধ্যে ঘরের মাঠের ম্যাচটিই তারা বেশি ভালো খেলেছেন মনে করেন লাল-সবুজ জার্সিধারী মনিকা। থাইল্যান্ডে এশিয়ান অনূর্ধ্ব-১৪ চ্যাম্পিয়নশিপেও দুর্দান্ত খেলেছিলেন এ ফরোয়ার্ড। ওই রকম ফুটবলই সব সময় খেলতে চান তিনি। বিশেষ করে রোববার ফাইনালে।
ভারতের কোচ মেমল রকি নেদুগাদান এ ম্যাচ হারলেও ফাইনালে নিজের দলকেই ভাবছেন ফেবারিট। বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন মুখ ফুটে নিজের ফেবারিট না বললেও লুকাননি মনিকা। ফাইনালে নিজেদেরই ফেবারিট ভাবছেন তিনি, ‘আমরা ফাইনালেও ভালো খেলতে চাই। শিরোপা জিতে আরো এগিয়ে যেতে চাই।’
Advertisement
ভারতের বিপক্ষে মনিকা গোল করেছেন দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে। বল পাওয়ার পর কী মনে হয়েছিল তখন? ‘আসলে আমি যখন বল নিয়ে এগিয়ে যাই তখন মনে হয়নি আমার আশপাশে কেউ আছে। কাউকে বিট করছি সেটাও মনে হয় না। আমি আমার মতো করেই বল নিয়ে ঢুকে পড়ে জালে পাঠিয়েছি’- পায়ে বল গেলে অন্য কিছু চোখে পড়ে না মনিকার।
আরআই/আইএইচএস/জেআইএম