দেশজুড়ে

বেনাপোলে কুলিদের দৌরাত্ম্যে নাকাল পাসপোর্টযাত্রীরা

যশোরের বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের লাগেজ বহনকারী কুলিদের দৌরাত্ম্যে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ পাসপোর্টযাত্রীরা। তারা যাত্রীদের প্রতিনিয়তই হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ। জানা গেছে, ভুক্তভোগী যাত্রীরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।শনিবার সকালে ভারত থেকে ফিরে আসা ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ থানার বাসিন্দা নজরুল জাগো নিউজকে জানান, চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার সময় নোম্যান্সল্যান্ডে আসলে বাংলাদেশের সবুজ লাল কাপড়ে তৈরি শার্ট পরিহিত একদল কুলি ব্যাগ নিয়ে টানা হেচড়া করতে থাকেন। বলে ৫০ টাকা দিলে ব্যাগটি কাস্টম চেকিংয়ের পর ইজিবাইকে উঠিয়ে দেয়া হবে। পরে কাস্টম ও ইমিগ্রেশন পার হবার পর ইজিবাইকে ব্যাগ তুলে ২০০ টাকা দাবি করেন তারা। টাকা না দিলে ব্যাগ আবার নোম্যান্সল্যান্ডে ফেরত নিয়ে যাওয়া হবে বলে হুমকি দেন। পরে বাধ্য হয়ে একশ টাকা দিয়ে এ যাত্রা রক্ষা পান তিনি।ঢাকার তাঁতী বাজারের সমোনাথ সাহা জাগো নিউজকে জানান, কোলকাতা থেকে সরাসরি বাসে চেকপোস্টে আসার পর কাস্টমস চেকিং এর জন্য আমার দুটি ব্যাগ কুলিরা নিয়ে যান। পরে চেকিং শেষে আবার এনে দিয়ে তিনশ টাকা দাবি করেন। একশ টাকা দিলে না নিয়ে বিজিবি পুলিশ দিয়ে মাল আটক করার হুমকি দিয়ে চলে যান সেই কুলি। পরে বাসের সুপারভাইজারের মাধ্যমে দুইশ টাকা দিয়ে রেহাই পাই।জানা গেছে, চেকপোস্টে কর্মরত কুলিদের পাসপোর্টযাত্রীদের ব্যাগ পরিবহনে বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া অর্থ না নিয়ে জোরপূর্বক বিজিবি, পুলিশ ও কাস্টমসের ভয় দেখিয়ে তিন চার গুণ অর্থ নিয়ে থাকেন। অনেক যাত্রীর পরিবহনে টিকেট কাটা থাকায় তারা কোনো ঝামেলায় যেতে চান না। এদিকে টিকেট কাটা গাড়ির  (ঢাকা-বেনাপোল-কলকাতা) পাসপোর্টযাত্রীদের ব্যাগ পরিবহনের জন্য পরিবহন কর্তৃপক্ষ অর্থ দিয়ে থাকে। এই অর্থ নেওয়ার পরও যাত্রীদের কাছ থেকে বখশিসের নামে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে থাকেন। মাঝে মধ্যে এসব নিয়ে হাতাহাতিরও ঘটনা ঘটে।  যাত্রীদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই।এ ব্যাপারে বেনাপোল চেকপোস্ট কুলি শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজিস্ট্রেশন নং-২০৮৪) সাধারন সম্পাদক আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে জানান, আমাদের ২/১ সদস্য এরকম আচরণ করতে পারেন। তাই বলে সবাই এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। কোনো যাত্রী বা পরিবহনের লোকজন অভিযোগ দিলে সঙ্গে সঙ্গে এসব কুলিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। অনেক যাত্রীও আমাদের বখশিস দিয়ে থাকেন।বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, পাসপোর্টযাত্রীর ব্যাগ বহনের জন্য প্রায় তিনশ কুলি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতকারী পাসপোর্টযাত্রীদের ব্যাগ বহন করার জন্য ৪০/৫০ জন কুলি হলেই হয়। সেখানে কুলি বেশি হওয়ায় পাসপোর্টযাত্রীদের উপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়। রাজনৈতিক চাপে অনেককে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও কুলি কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।এ ব্যাপারে চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, ইমিগ্রেশন পুলিশের কাজ পাসপোর্ট চেকিং করা। কুলিরা কী করে সেটা দেখার কাজ আমার না।বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল জাগো নিউজকে জানান, কুলিদের পাসপোর্টযাত্রীর ব্যাগ বহনের জন্য স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে একটি করে পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে। বন্দরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে একজন যাত্রীর ৩টি ব্যাগ বহন করে মজুরি নেবেন ৫০ টাকা। যদি কেউ বেশি নেন তাহলে অভিযোগ পেলে সেই কুলির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।মো. জামাল হোসেন/এমজেড/আরআই

Advertisement