চার দিনের অবিরাম ভারী বর্ষণে সমুদ্র উপকূলীয় খুলনার দাকোপের চালনা পৌরসভাসহ ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার কৃষক এখন আমন ধানের বীজতলা তৈরি নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। অবিরাম বর্ষণের ফলে চালনা পৌরসভাসহ ৯টি ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রামের প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন এবং পাঁচ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ায় ওই সকল পরিবারের প্রায় দুই হাজার লোক খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অপরদিকে বিভিন্ন স্থানের পাঁচ শতাধিক পুকুর ও দুই শতাধিক চিংড়ি ঘেরের বাগদা চিংড়ি ও সাদামাছ ভেসে যাওয়ায় কমপক্ষে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও গত চার দিনের অবিরাম ভারী বর্ষণে আইলা দুগর্ত সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নের গুনারী পূর্ব গ্রাম, সুতারখালী, কাটাখালী, গুনারী মধ্যে পাড়া, বাইনপাড়া, মাঝিপাড়া, জালিয়াখালী, রেখামারী, চান্নির চক, ফকির ডাঙ্গা, জয়নগর মধ্যে পাড়া, চালনা পৌরসভার নোলপাড়া, কোনারডাঙ্গা, উত্তোর কোলনী, শহীদ মিনার সংলগ্ন এলাকা, চালনা লঞ্চঘাট মধ্যে পাড়া, সবুজ পল্লী, থানা চত্বর, আচাভুয়ার আংশিক এলাকা, এবং তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের মশামারী, গড়খালী মোজামনগর, কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের হরিণ টানা, কৈলাশগঞ্জ, ধোপাদি, বানিশান্তা ইউনিয়নের খেজুরিয়া, ভোজন খালী, পেটিকাটা, উত্তর বানিশান্তা, কাঁকড়া বুনিয়া, ঝড়খালী, ঢাংমারী, পানখালী ইউনিয়নের মৌখালী, পানখালী, খোনা, বাজুয়া ইউনিয়নের, ওড়াবুনে, চুনকুড়ি ডাঙ্গা পাড়া, লাউডোপ ইউনিয়নের খুটা খালি, বুড়ির ডাবুর কালিবাটি, দাকোপ ইউনিয়নের সাহেবের আবাদ, ওড়াবুনিয়া, কাঁকড়া বুনিয়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত গ্রাম এলাকার একাধিক পানিবন্দী মানুষ অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরাতন স্লুইস গেটগুলো অকার্যকর অবস্থায় পড়ে থাকায় তা আর সংস্কার হয়নি। এছাড়া বিভিন্ন জলাশয়ে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আড়াআড়ি বাঁধ দেয়ায় এ জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় এ সকল গ্রামের হাজারো লোক পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপনসহ কৃষকরা তাদের আমনের বীজতলা তৈরিতে নানা প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হচ্ছেন। উপজেলার চালনা পৌরসভাসহ ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হওয়ায় এতে ৫ শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। ওই সকল পরিবারের প্রায় দুই হাজার লোক খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ গ্রামগুলো পাঁচ শতাধিক পুকুর ও দুই শতাধিক চিংড়ি ঘেরের বাগদা ও সাদামাছ ভেসে যাওয়ায় কমপক্ষে অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোসাদ্দেক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গত চার দিনের অবিরাম বর্ষণের ফলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও কৃষকের আমন ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চলতি মৌসুমে আমন বীজতলা তৈরিতে এলাকার কৃষকরা ব্যাপক সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন।উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, অবিরাম বর্ষণের ফলে উপজেলার বিভিন্ন স্থান প্লাবিত হওয়ার কারণে এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক পুকুর ও দুই শতাধিক বাগদা চিংড়ি ঘেরের মৎস্য ভেসে যাওয়ায় চাষিরা প্রায় কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৃনাল কান্তি দে জাগো নিউজকে বলেন, বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবিরাম বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অনেক পুকুর ও ঘেরের মৎস্য ভেসে গেছে। তিনি আরো বলেন, যদি কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি কোনো জলাশয়ে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন তাহলে ওই বাঁধ অপসারণ করা হবে এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের নষ্ট হওয়া স্লুইস গেটগুলো দ্রুত সংস্কারের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।আলমগীর হান্নান/এমজেড/এমএস
Advertisement