দেশজুড়ে

আরেকটি মানবতার গল্প

দু’জন দুই প্রজন্মের। একজন বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক অপরজন ১০ বছরের শিশু। কফি বিক্রেতা শিশু রিপন মিয়ার দিকে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।

Advertisement

সম্প্রতি অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতি পাওয়া পুলিশের এ কর্মকর্তা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় যোগদানের পর থেকেই মানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বারবার আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছেন। এবার হতদরিদ্র শিশু রিপনের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

রিপন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় গ্রামের আনিস মিয়ার ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় রিপন। বাবা রিক্শাচালক। গ্রামের একটি বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়তো রিপন। তবে বাবার ধারদেনার কারণে নিজের বাড়ি ছেড়ে এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বর্ডার বাজারের ভাড়া বাসায় থাকে রিপন ও তার পরিবার। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে প্রথম শ্রেণির গণ্ডি পেরিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ওঠার পর বিদ্যালয় ছাড়তে হয়েছে তাকে। শুধু তাই নয়, রিক্শাচালক বাবার সংসারের হাল ধরতে এখন ফেরি করে কফি বিক্রি করে সে।

মঙ্গলবার বিকেলে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রিপনের। চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ নিয়ে রিপন জানায়, ‘বাড়িতে আমার ছোট দুই বোন রয়েছে। ৩/৪ মাস আগে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন আমি সংসার চালাতে কফি বিক্রি শুরু করি। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে কফি বিক্রি করি। ৩ মাস ধরে কফি বিক্রি করছি। মাসে ৬ হাজার টাকা বেতন পাই। এই টাকা দিয়েই এখন সংসার চলে। নতুন করে পড়ালেখা করার ইচ্ছা থাকলেও টাকার অভাবে সেটি আর করতে পারছি না’।

Advertisement

সম্প্রতি জাগো ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিওর কর্মী তারেক আজিজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিশু রিপনের কয়েকটি ছবি শেয়ার করলে বিষয়টি পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের নজরে আসে।

তারেক আজিজ জাগো নিউজকে জানান, রাস্তায় বেশ কয়েকদিন রিপনকে কফি বিক্রি করতে দেখেছি। পরে তার সঙ্গে কথা বলে পরিবার সম্পর্কে জেনেছি। এখন পড়ালোখা করার বয়স রিপনের, অথচ সংসারের হাল ধরেছে শিশুটি। পুলিশ সুপারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি রিপনের পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন। একইসঙ্গে পড়ালেখার ফাঁকে কফি বিক্রির জন্য সব সরঞ্জাম কিনে দেবেন বলেও জানিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশিংয়ের বাইরে মানবিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে একের পর এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। সরকারি শিশু পরিবারের নিবাসী ‘অনাথ’ হাবিবা আক্তারের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে তার রাজকীয় বিয়ে দিয়ে সারাদেশে ও নিজ বাহিনীতে ব্যাপক আলোচিত হন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করেই আমরা শিশু রিপনের পাশে দাঁড়িয়েছি। মানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে খুব সহজে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। সমাজে রিপনের মতো আরও অনেক শিশু আছে। এসব শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Advertisement

আজিজুল সঞ্চয়/এফএ/আইআই