দেশজুড়ে

সরকারি বরাদ্দের অভাবে বন্ধ ডিএনডির পানি নিষ্কাশনের পাম্পগুলো

একটু বৃষ্টি হলেই কৃত্রিম বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে ডিএনডির (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা বাঁধ) নিম্নাঞ্চল এলাকা। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য স্থাপনা। সামান্য বৃষ্টি হলেই চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ওইসব অঞ্চলের বাসিন্দারা। যেন দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছেনা তাদের।এদিকে দুই সপ্তাহ আগে ফতুল্লা, আলীগঞ্জ ও পাগলায় পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয়দের উদ্যোগে একাধিক পানি নিষ্কাশনের পাম্প বসানো হয়েছিল। সেগুলো সাংসদ শামীম ওসমান উদ্বোধন করলেও বরাদ্দের অভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে পাম্পগুলো। ডিএনডির পানি নিষ্কাশনের জন্য সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বরাদ্দ দিলেও তার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে। বরং কচুরিপানা পরিষ্কার করতেই কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এজন্য ডিএনডির পানি নিষ্কাশনের জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারকে বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন অধিবাসীরা।  জানা গেছে, অব্যাহত বর্ষণে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা, দেলপাড়া, আলীগঞ্জ, দাপা, কুতুবপুর, নন্দলালপুর, পিলকুনি, ভুইগড়, পেয়ারাবাগান, রঘুনাথপুর, কুতুব আইল, নয়াআটি, লামাপাড়া, সস্তাপুর, কায়েমপুর, চাঁদমারী, ইসলাম বাগ, ইসদাইর, গাবতলী, তল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজির পাইনাদী, সানারপাড়, তুষার ধারা, গিরিধারা, সাদ্দাম মার্কেট, জালকুড়ি, ধনকুন্ডা, রাজধানী ঢাকার দনিয়া, শনির আখড়া, মাতুয়াইলসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ, সবজি খেত, নার্সারি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। নর্দমা ও বিভিন্ন শিল্পকারখানার দুষিত বর্জ্য বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে রোগব্যাধি ছড়াচ্ছে। ডিএনডি এলাকায় বসবাসকারীরা জাগো নিউজকে জানান, বৃষ্টিতে আবারো ফতুল্লার আলীগঞ্জ, দাপা, কুতুবপুর, নন্দলালপুর, পিলকুনি, তল্লা, মাসদাইর, গাবতলী, সস্তাপুর, শেহাচর, পাগলা, দেলপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার লাখো অধিবাসী পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। কিছুদিন আগে স্থানীয়দের উদ্যোগে ১৩টি পানি নিষ্কাশনের পাম্প বসানো হয়েছিল। এতে পানি কিছুটা নিষ্কাশন হয়েছিল। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন থেকে পাম্পের তেলের কোনো বরাদ্দ না পাওয়ায় পাম্পগুলো বন্ধ রয়েছে। ওই পানি নিষ্কাশনের পাম্পগুলো সচল থাকলে দুর্ভোগ কিছুটা কমতো। ডিএনডি সূত্রে জানা যায়, ডিএনডি থেকে সুষ্ঠুভাবে সেচ কার্য পরিচালনা করা এবং পানি নিষ্কাশন করার জন্য ৯টি সেচ খাল, ৯টি ডিটিও খাল, ২১০টি আউট লেক খাল, ৮৫টি চকবন্দী খাল অনুসারে ১০টি নিষ্কাশন খাল রয়েছে। এছাড়াও এক কিলোমিটার দীর্ঘ ইনটেক খাল, ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মেইন ক্যানেল টার্ন আউট খাল রয়েছে। এ সকল খালগুলোর অধিকাংশই ভরাট হয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা (ইউএনও) আফরোজা আক্তার চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাল পরিষ্কার করার যে প্রকল্প ছিল সেটি বৃহস্পতিবার শেষ হয়ে গেছে। তারপরও তাদের ঠিকাদারকে বলেছি ভেকু দিয়ে শনিবার আবারো খালগুলো পরিষ্কার করে দিতে। এতে কিছুটা দুর্ভোগ কমবে। পানি নিষ্কাশন পাম্পের তেলের বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ওইসময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেবদের বলেছিলাম পাম্পের তেলের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে ডিএনডির পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে বরাদ্দ আসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে। আমাদেরকে কোনো বরাদ্দ দেয়া হয় না। যে কারণে আমরা ইচ্ছে করলেও অনেক উদ্যোগ নিতে পারছি না। প্রসঙ্গত গত ২৮ জুন বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা পাগলা রসুলপুরে ডিএনডি বাঁধের জলাবদ্ধতা দূর করার লক্ষ্যে পানি নিষ্কাশনে পাম্পের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের ভেতরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টির জন্য জনগণকে দায়ী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি নির্মাণ ও খাল দখল করে বালু দিয়ে ভরাট করার ফলে ডিএনডি এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এই জলাবদ্ধতা দূর করতে হলে খাল দখলমুক্তসহ পরিকল্পিতভাবে বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। যাতে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়। মো.শাহাদাৎ হোসেন/এমজেড/এমএস

Advertisement