বাংলাদেশের টেলিভিশন দর্শকদের কাছে ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত সিরিয়ালগুলোর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলোর নাটক বাংলাদেশের এক শ্রেণির দর্শকের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। বাংলাদেশে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যমও ভারতীয় চ্যানেলগুলো। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা নিয়েলসেনের এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।বাংলাদেশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ টেলিভিশন দেখে এবং সংবাদ ও চলচ্চিত্রের পরই সবচেয়ে বেশি দেখে টেলিভিশন নাটক। সংস্থাটির এক জরিপের ফলাফলে এ তথ্য জানা যায়।সংস্থাটির জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, বাংলাদেশেও বিনোদনমূলক অনেক টিভি চ্যানেল আছে। কিন্তু জনপ্রিয়তার দিক থেকে তৃতীয় এবং সপ্তমস্থানে রয়েছে ভারতীয় চ্যানেল স্টার জলসা এবং জি বাংলা। এই চ্যানেলগুলোর নাটক এবং কিছু কিছু রিয়েলিটি অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ।জরিপে অংশ নেয়া অনেকেই জানান, ভারতীয় চ্যানেলগুলোর নাটকগুলোতে পরিবারের সুখ-দুঃখ নিয়ে কাহিনী থাকে এছাড়া রোমাঞ্চও থাকে। ভারতের জামা-কাপড় এবং মেকআপও ভালো হয়। এজন্যই তারা ওই চ্যানেলগুলো দেখেন।ভারতীয় বাংলা নাটকের জনপ্রিয়তা শুধু টিভি পর্দায়ই সীমাবদ্ধ নেই। এখন দীর্ঘ এই সিরিয়ালগুলোর চরিত্রের নামে জামা থেকে শুরু করে শিশুদের খাতার মলাটেও স্থান পেয়েছে এসব নাটকের নায়িকারা। বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপনের মাত্রা বেশি থাকার কারণে দেশি চ্যানেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দর্শকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের দেশের চ্যানেলগুলোতে এখন অনেকটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে নাটক দেখানো হয়।অধ্যাপক ভূঁইয়া বলেন, বাংলাদেশে যে হারে নাটক তৈরি হচ্ছে, সে হারে অভিনেতা বা কলাকুশলী তৈরি হয়নি। প্রবীণ অভিনেতা এবং নির্মাতা মামুনুর রশিদ বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রচুর নতুন টেলিভিশন চ্যানেল যাত্রা শুরু করেছে এবং নাটকের পরিমাণও বেড়েছে। কিন্তু সেই বৃদ্ধির সাথে সাথে মান তো বাড়েনি বরং আরো নেমে গেছে।তিনি বলেন, ভারতীয় নাটকে যারা অভিনয় করে তাদের একটি গ্রুমিং সেন্টারই আছে। কিন্তু বাংলাদেশে এমন কোন ব্যবস্থা নেই। এছাড়াও যারা ভালো অভিনয় করে, তাদের অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। আর বেশি টাকা দিতে হয় বলে ভালো অভিনেতাদেরও নির্মাতারা নিচ্ছে না।বাংলাদেশে এখন প্রায় ২৩টি টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারে রয়েছে এবং প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে আরো প্রায় ১৮টি চ্যানেল। হাতেগোনা কয়েকটি সংবাদভিত্তিক চ্যানেল ছাড়া সবগুলোতেই প্রচারিত হয় নাটকসহ অন্যান্য বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান। তবে বাংলাদেশি এত চ্যানেলের ভিড়ে, এত নাটকের ভিড়ে ভারতীয় বাংলা নাটকের এতটা জনপ্রিয়তা নিয়ে জানতে চাইলে মামুনুর রশীদ বলেন, ওরা সিরিয়ালের একটি ভাষা বের করেছে। একটু উচ্চগ্রামের, উচ্চস্বরে কথা বলা, বিস্তৃত একটা সুর আছে তাদের নাটকে। বাঙ্গালি কিন্তু এই সুর ভালবাসে। আর ওরা যেভাবে গল্পটা বলতে পারে তাতে প্রতি মুহূর্তে কৌতুহলটা উদ্রেক হয়।দর্শকদের অনেকের অভিযোগ, বাংলাদেশি নাটক ভালো লাগলেও বিজ্ঞাপনের বাড়াবাড়ির কারণে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের অনুষ্ঠান বিভাগের প্রধান শামীম শাহেদ বলেন, ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলো দেখার জন্য আমাদের অথবা কেবল অপারেটরদের একটি কার্ড কিনতে হয়। সেই কার্ডের টাকাটা পায় চ্যানেলের মালিক কর্তৃপক্ষ, কিন্তু আমাদের বিজ্ঞাপন ছাড়া আয়ের আর কোন উৎস নেই।অধ্যাপক শফিউল আলম ভুঁইয়া বলেন, হঠাৎ করেই টেলিভিশন নাটকের যে চাহিদা তৈরি হয়েছে, সেটি যোগান দেবার মতো অবকাঠামো তৈরি হয়নি। যার ফলাফল, নাটকের মানের অবনতি। আমাদের এখানে প্রবণতা হচ্ছে কম বিনিয়োগে বেশি নাটক তৈরি করা। চ্যানেল বাড়ার ফলে নাটকের যে চাহিদা তৈরি হয়েছে, সেটি পূরণ করতে গিয়ে যেনতেন জিনিস তৈরি হচ্ছে। বিবিসি।এসআইএস/এআরএস/এমএস
Advertisement