গ্লাডিওলাস ফুলের চাষ একদিকে যেমন লাভজনক, অন্যদিকে তেমন নান্দনিক। বাজারে এ ফুলের চাহিদাও প্রচুর। বাড়ির আঙিনা, ছাদসহ যে কোনো ধরনের মাটিতে চাষ করতে পারেন এ ফুল। সে জন্য জেনে নিন নিয়ম-কানুন।
Advertisement
আবহাওয়াসঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য আর্দ্র ও ঠান্ডা আবহাওয়া দরকার। ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গাছ ভালোভাবে বাড়ে। চাষের জন্য পূর্ণ সূর্যোলোক দরকার। কারণ ছায়ার এ ফুল ভালো হয় না। করম রোপণ এবং স্পাইক বের হওয়ার আগে মাটিতে আর্দ্রতার ঘাটতি হলে ফলন হ্রাস পায়।
মাটি যে কোনো ধরনের মাটিতে এ ফুল চাষ করা যায়। তবে বেলে দো-আঁশ মাটি বেশি উপযোগী।
সময় কার্তিক (মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বর) মাসে এ ফুল চাষের উত্তম সময়।
Advertisement
রোপণরোগমুক্ত বড় (৩০+/-০.৫গ্রাম) মাঝারি (২০+/-০.৫ গ্রাম) ওজনের ৩.৫-৪.৫ সেমি ব্যাসযুক্ত করম ৬-৯ সেমি গভীরতার রোপণ করতে হবে। করম অবশ্যই সুপ্তাবস্থা মুক্ত হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সেমি হবে। তবে বাণিজ্যক উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১৫*২০ সেমি দূরত্বে রোপণ করা যেতে পারে।
সার হেক্টরপ্রতি ১০ টন পচা গোবর, ২০০ কেজি ইউরিয়া, ২২৫ কেজি টিএসপি এবং ১৯০ কেজি এমপি দিতে হবে। গোবর, টিএসপি ও এমপি জমি তৈরির সময় ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সারকে সমান দুই ভাগে ভাগ করে ৪ পাতা বের হওয়ার পর অর্ধেক এবং বাকি অর্ধেক ৭ পাতা বের হওয়ার পর অর্থাৎ স্পাইক বের হওয়ার সময় সারির দু’পাশে ৫ সেমি গভীরে পার্শ্ব প্রয়োগ করতে হবে।
সেচমাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রস থাকতে হবে। তাই প্রয়োজনমতো সেচ দিতে হবে। সাধারণভাবে করম মাটিতে লাগানোর পর হালাক সেচ দিতে হবে। যার ফলে করমগুলো মাটিতে লেগে যায়। পরবর্তীতে আবহাওয়ার অবস্থা বুঝে ১০-১৫ দিন অন্তর অন্তর হালকা সেচ দিতে হবে।
মালচিংগ্লাডিওলাসের প্রয়োজনীয় পরিচর্যা হচ্ছে মাটি উঠানো। গাছের ৩-৫ পাতা পর্যায়ে একবার এবং প্রয়োজনবোধে ৭ পাতা বের হওয়ার পর অর্থাৎ স্পাইক বের হওয়ার সময় গাছের গোড়ার দু’পাশ থেকে মাটি তুলে দিতে হবে। মাটি তুলে দিলে জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকে এবং বাতাসে গাছ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সেচ দেওয়ার পর করম মাটির উপরে উঠে এলে পাশ থেকে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
Advertisement
আগাছাজমিকে অবশ্যই আগাছমুক্ত রাখতে হবে। আগাছামুক্ত করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে অঙ্কুরোদগমে কোনো ক্ষতি না হয়।
স্টেকিংবর্ষাকালে বৃষ্টিতে পড়ে যাওয়া থেকে গাছ রক্ষার জন্য স্টেকিং প্রয়োজন। সারিতে ২ মিটার দূরে দূরে বাঁশের কাঠি পুঁতে দিতে হবে। তবে গাছ ঘন করে রোপণ করলে স্টেকিং দরকার না-ও হতে পারে।
ফুল কাটাকরম লাগানোর পর জাতভেদে ৭৫-৯০ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে। স্পাইকের নিচে ১-২টি ফ্লোরেটে রং দেখা দিলে স্পাইক কাটার উপযুক্ত সময়। তবে খোয়াল রাখতে হবে, যাতে ফুলগুলো ফুটে না যায় এবং শক্ত থাকে।
সংরক্ষণফুল কাটার ৬-৮ সপ্তাহ পরে করম উঠানোর উপযোগী হয়। করম পরিষ্কার করে ছায়ায় ২-৩ দিন শুকিয়ে বিভিন্ন আকার অনুসারে বাছাই করতে হবে। সুস্থ করম অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। ফুল কাটার পর ৯০-১০৫ দিনের মধ্যে ভালো মানের করম পাওয়া যায়।
ফলনপ্রতিহেক্টর জমিতে প্রায় ২৪ টন ফুল বা স্টিক পাওয়া যায়। একইভাবে প্রায় ১০ টন উন্নত করম পাওয়া যায়।
এসইউ/পিআর