খ্রিস্ট নতুন বছর আসি আসি করতেই সংবাদমাধ্যমে সারা বছরের বিভিন্ন ধরনের হিসেব প্রকাশ হতে শুরু করে। বছরের কোন কোন ঘটনা সর্বাধিক আলোচিত ছিল সেগুলোরও একটা তালিকা দেখা যায়। অনেক গণমাধ্যমে সারা বছরের বিচার বিশ্লেষণ তো থাকেই, সেই আঙ্গিকে আগামীর পূর্বাভাসও বের করার চেষ্টা দেখা যায়।
Advertisement
বলার অপেক্ষা রাখে না, নিরলস পরিশ্রম করে সেই তথ্য দর্শক-পাঠক-শ্রোতাকে জানান সাংবাদিকরাই। তবে বছরজুড়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তারাও ঠিক কতোটা হয়রানির শিকার হন, সেটাও তো জানা দরকার।
রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডার (আরএসএফ) নামে একটি অলাভজনক ও বেসরকারি সংগঠন রয়েছে। মঙ্গলবার সংগঠনটি ২০১৭ সালে সারাবিশ্বে নিহত সাংবাদিকদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাবিশ্বে ৬৫ জন সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে ৫০ জন রিপোর্টার রয়েছে। এই সংখ্যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। বেশিরভাগ সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন বিশ্বের সহিংসতাপূর্ণ কিছু দেশে।
Advertisement
আরএসএফ বলছে, সারাবিশ্বে সংবাদকর্মীর জন্য সিরিয়া সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান। সেখানে ২০১৭ সালে ১২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এর পরেই রয়েছে মেক্সিকোর নাম। সেখানে ১১ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন।
প্রখ্যাত সাংবাদিক জাভিয়েদ ভালদেজ নিহত হওয়ার ঘটনা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বার্তা সংস্থা এএফপির এই কন্ট্রিবিউটর রিপোর্টারকে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৫০ বছর বয়সী ভালদেজ।
মৃত্যুর আগে নারকো জার্নালিজম নামে একটি বই লিখে যান ভালদেজ। পরে সেই বই বেশ জনপ্রিয় হয়। আরএসএফ বলছে, মেক্সিকো কেবল যুদ্ধের জন্য আত্মঘাতী রাষ্ট্র নয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি এবং প্রতিষ্ঠানের নানারকম অনিয়মের ফলে সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটে।
এদিকে সাংবাদিকদের জন্য এশিয়ার মধ্যে ফিলিপাইন সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান। দেশটিতে পাঁচজন সাংবাদিককে গুলি করা হয়। যাদের মধ্যে চারজনই মারা গেছেন।
Advertisement
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুর্তেতে সাংবাদিকদের নিয়ে কটূক্তি করার পর নড়েচড়ে বসে আরএসএফ। সাংবাদিকদের কুকুরের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছিলেন তিনি।
আরএসএফ বলছে, ৬৫ জনের মধ্যে ৩৯ জনই দায়িত্বপালনকালে নিহত হয়েছেন। অন্যদের ভিন্ন উপায়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে আরএসএফ জানিয়েছে, বর্তমানে সাংবাদিকরা আরও বেশি সচেতনভাবে কাজ করছেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন উপায়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেয়ার ফলে নিহতের সংখ্যা কমেছে।
তবে সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন এবং লিবিয়াকে বিপজ্জনক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে যুদ্ধের কারণে কেবল সেই দেশগুলো বিপজ্জনক নয়।
এছাড়া তুরস্কের কারাগারে বেশ কিছু সাংবাদিক গ্রেফতার থাকার কথাও জানিয়েছে সংগঠনটি। মেক্সিকোতে অনেক সাংবাদিক অন্য পেশায় চলে গেছেন, অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সেখানে অপরাধী এবং রাজনীতিবিদরা সাংবাদিকদের জন্য হুমকির কারণ।
তুরস্কে ৪২ জন রিপোর্টার এবং একজন গণমাধ্যমকর্মী কারাগারে আটক আছেন। আরও অনেককে এর আগে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। জঙ্গিবাদী মতাদর্শ লালনের অভিযোগে বেশিরভাগ সাংবাদিককে সেখানে আটক করা হয়।
পার্শ্ববর্তী দেশ চীনে ৫২ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। রিপোর্ট প্রকাশ এবং ব্লগিংয়ের অভিযোগে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কারাগারে আটক সাংবাদিকদের অনেকেরই স্বাস্থ্য ভেঙে পড়েছে।
এছাড়া সিরিয়াতে ২৪ জন, ইরানে ২৩ জন এবং ভিয়েতনামে ১৯ জন সাংবাদিক কারাভোগ করছেন। তবে ওই প্রতিবেদনে ভারত, বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।
কেএ/আরআইপি