পাঠ্যবইয়ে বির্তকিত ওড়না শব্দটি আবারো যুক্ত করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণির বাংলা বই থেকে মুছে ফেলে এবার সেটি কোমলমতি শিশুদের ‘আমার বই’ এর বর্ণমালায় যুক্ত করা হয়েছে। এটি নিয়ে আবারো নতুনভাবে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
Advertisement
প্রাক-প্রাথমিকের বাংলা বইটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ‘আমার বই’ নামক শিশু শিক্ষার্থীদের বাংলা বইয়ের বর্ণমালা শেখাতে ৩৬ পৃষ্ঠায় ‘ও-তে ওড়না’ বলা হয়েছে। ছবি হিসেবে একটি মেয়ে শিশুর গায়ে ওড়না দেয়া হয়েছে।
২০১৭ শিক্ষা বছরের প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলা’ বইয়ে বর্ণ পরিচয়ে (পাঠ-৭) ‘অ’ শেখাতে গিয়ে অজ হিসেবে ছাগলের ছবি ব্যবহার করা হয়। একই বইয়ের পাঠ-১২ তে ‘ও তে ওড়না চাই’ বলা আছে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শিক্ষাবিদরাও প্রতিবাদে নানা কর্মসূচি পালন করেন।
তারা বলেছেন, প্রথম শ্রেণির একজন শিশুর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার সঙ্গে ‘ও’তে ওড়না শেখানোর বিষয়টি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তাছাড়া ছেলেশিশুরাও বইটি পড়ে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এনসিটিবি এ ধরনের বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে বিব্রত হয়। নানা সমালোচনার মুখে প্রথম শ্রেণির বইটি পরিমার্জন করে ‘ও-তে ওজন’ শব্দ দেয়া হয়। ছবি দেয়া হয় ওজন পরিমাপক যন্ত্রের। প্রথম শ্রেণির বই থেকে তুলে দেওয়ার পরে প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ে ‘ওড়না’ শব্দ যুক্ত করায় প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
Advertisement
বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আনন্দের মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে। এমন কিছু শেখানো যাবে না যাতে শিশু মনে বিরূপ চিন্তা তৈরি হয়। ও-তে ওড়না শব্দ না শিখিয়ে আরও অনেক আনন্দদায়ক শব্দ রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করলে শিশুরা অল্পতেই শব্দটি শিখে ফেলতে পারতো।
একাধিক শিক্ষক জানান, ও-তে ‘ওলকপি’, ‘ওজন’, ‘ওলি’, ‘ওজু’সহ নানা সহজ শব্দ রয়েছে। একটি পরিচিত বা সহজে পরিচয় করানো যায় এমন শব্দ ব্যবহার করলে ভালো হতো। তাহলে এ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উঠত না। শিশুদের কাছে ওড়না পরিচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন শিক্ষকরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, বিশেষজ্ঞরা বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরি করে এনসিটিবিতে জমা দেয়। এরপর সম্পাদনা শাখার কর্মকর্তারা যাচাই বাছাই করে ছাপার জন্য প্রেসে পাঠায়। প্রথম শ্রেণির বই থেকে ‘ও-তে ওড়না’ শব্দ তুলে দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ে একই শব্দ আছে কি না আমার জানা নেই। এটি খতিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি জানান।
প্রাক-প্রাথমিকের ‘আমার বাংলা’ বই সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সিরাজগঞ্জের নিমগাজী কলেজের সহকারী অধ্যাপক যোগেন্দ্র নাথ সরকার। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, পরিচিত শব্দ হিসেবে ‘ওড়না’ ব্যবহার করা হয়েছে। সাদরি ভাষার বই থেকে মেয়ে শিশুর ছবিটি তুলে দেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলা ভাষার শিশুদের জন্য ছাপানো বইটি আমরা কেবল সাদরি ভাষায় রূপান্তর করেছি। সকল কাজ সম্পাদনা কমিটি করেছেন বলেও তিনি জানান।
Advertisement
এনসিটিবির সূত্র জানায়, আগামী বছরের বই ছাপার বিষয়ে গত মার্চে কর্মশালার আয়োজন করেছিল এনসিটিবি। সেখানে বই থেকে বিতর্কিত বিষয়গুলো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারপরেও প্রাক-প্রাথমিকের বইয়ে বিতর্কিত শব্দটি দেয়ায় খোদ এনসিটিবিতেই চলছে নানা গুঞ্জন। চলতি বছরের পাঠ্যবইয়ে ভুল ও বিতর্কিত বিষয় ছাপার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এবারও একই ভুল হয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।
এমএইচএম/এআরএস/পিআর