জাতীয়

রাজধানীজুড়ে জলাবদ্ধতা ও তীব্র যানজট

বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি কখনো রিমঝিম, কখনো গুঁড়িগুঁড়ি অবিরাম বর্ষণ চলছে সারাদেশে। এদিকে টানা বর্ষণে রাজধানীজুড়ে আবারো জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় নাগরিক জীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। জলাবদ্ধতার কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় ভোগান্তির মাত্রা এখন চরমে। টানা বৃষ্টি ও ঈদের কেনাকাটার ভিড়ে শুক্রবার গাড়ির জট প্রধান সড়ক ছাড়িয়ে অলিগলি পর্যন্ত গড়িয়েছে। ফলে নগরবাসীকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ খাল ভরাটের কারণে এ সমস্যা দিন দিন আরো প্রকট হচ্ছে। অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খাল ও জলাশয় দখলমুক্ত করাসহ এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে নগরীতে বসবাস করা দুস্কর হয়ে পড়বে মনে করছেন নগরবাসীরা। এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালজুড়েই বৃষ্টি হবে। কখনো বেশি, কখনো কম। জুলাই মাসের শেষ দিকে এই বৃষ্টি কমতে পারে। অধিদফতরের পরিচালক শাহ আলম জাগো নিউজকে বলেন, বর্ষাকালে স্বাভাবিকভাবেই বৃষ্টি হবে। বুধবার রাত থেকে ঢাকাও চেয়ে উপকূল অঞ্চলে অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হয়েছে কক্সবাজারে। তিনি জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষার শুরুতে যে বৃষ্টি হওয়ার কথা তা এখন হচ্ছে। তবে দুই একদিনের মধ্যে বৃষ্টির পরিমাণ অনেক কমে যাবে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে জানা যায়, বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বর্ষণ চলছে দেশজুড়ে। টানা বৃষ্টি এলোমেলো করে দিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়, তার উপর তীব্র যানজট। এতে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের ও ছিন্নমূল মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। ড্রেন, নর্দমার ময়লা আর পানিতে একাকার অধিকাংশ এলাকার রাস্তা। টানা বর্ষণে গতকাল সকাল থেকে জলাব্ধতার সৃষ্টি হয় রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, বনানী, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, রূপনগর, উত্তরাহ অনেক এলাকার রাস্তাঘাট। এর সঙ্গে তীব্র যানজট যুক্ত হওয়ায় পথচলতি মানুষ পড়ে চরম দুর্ভোগে। মৌসুমি বায়ুর নিম্নচাপজনিত টানা বৃষ্টির কারণে বহুমাত্রিক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রাজধানীবাসী। জলাবদ্ধতা ও রাস্তাঘাটে খানাখন্দকের কারণে ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি সড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, শান্তিবাগ, যাত্রাবাড়ী, মীরহাজিরবাগ, গুলিস্তান এলাকা, পুরান ঢাকা, মিরপুর ও উত্তরার বিভিন্ন সড়কে যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। মহাখালী-ফার্মগেট সড়কে সারাদিনই থেমে থেমে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সায়েদাবাদ টার্মিনাল-সংলগ্ন প্রতিটি সড়কেও ছিল যানজটের ধকল।বারিধারা, নতুনবাজার এলাকা থেকে বাড্ডা-রামপুরা হয়ে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত গাড়ি চলাচল করেছে গরুর গাড়ির স্টাইলে। কয়েক গজ পরপরই গাড়ি থামিয়ে রাস্তা সচল হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। এ সড়কে চলাচলকারী লোকজন দীর্ঘ সময় ধরে গাড়িতে আটকে থেকে রীতিমতো ত্যক্তবিরক্ত হয়ে অনেকেই বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গাড়ি ছেড়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্য পথে রওনা দিতে বাধ্য হয়।এদিকে, পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে বলা হয়েছে, মূলত বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা এবং সেই সঙ্গে ঈদের কেনাকাটার জন্য মানুষের ভিড় থাকায় বেশ কয়েকটি সড়কে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। তবে বৃষ্টির পানি কমে গেলেই যানজট সহনশীল পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।জলাবদ্ধতা বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসার সমন্বয়হীনতার কারণেই রাজধানীর সড়কগুলোর জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হচ্ছে না।তিনি বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ খাল ভরাটের কারণে এ সমস্যা আরো প্রকট হচ্ছে। দুঃখজনক হলো, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে নগরবাসীর দুর্গতি ক্রমাগত বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির পানি মাটিতে চুষে নেয়ার জায়গা নেই। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে রাজউক সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করে আর সিটি কর্পোরেশন দায়ী করে ওয়াসাকে। এর থেকে বের হয়ে সকলকে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করার আহ্বান জানান স্থপতি।আরএম/বিএ/পিআর

Advertisement