দেশজুড়ে

নাব্য সঙ্কট-ডুবোচরে জাহাজ চলাচল ব্যাহত

দেশের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ী নৌপথের রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া এলাকার পদ্মা নদীর বিভিন্ন স্থানে নাব্য সঙ্কটের পাশাপাশি ছোট-বড় অসংখ্য ডুবোচরের কারণে দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরাঞ্চলগামী বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

Advertisement

নদীতে পানি কম থাকায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট এলাকায় বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে নোঙর করতে বাধ্য হচ্ছে জাহাজগুলো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ৬নং ফেরিঘাট এলাকায় সার, কয়লা, সিমেন্ট,গম, ভুট্টা, ক্লিংকার, পাথরসহ নোঙর করা আছে ৩০টির বেশি জাহাজ এবং বড় জাহাজগুলোর পণ্য ছোট জাহাজে আনলোড করছেন শ্রমিকরা। লোড-আনলোড শেষে ছোট জাহাজগুলো নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ীর উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম, মংলা এবং নারায়ণগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে এসব পণ্যবাহী জাহাজ রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া দিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী নৌবন্দরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় চলাচল করছিল। দৌলতদিয়া এলাকায় সাড়ে ১২ থেকে ১৩ ড্রাফটের জাহাজ চলাচলে কমপক্ষে ১৩ ফিট পানির গভীরতা প্রয়োজন। অথচ বর্তমান সেখানে পানির গভীরতা রয়েছে মাত্র ৬ থেকে ৮ ফিট।

Advertisement

তাই নাব্য সংকটের কারণে তাদের জাহাজগুলো গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় এসে আটকা পড়ে আছে। বাধ্য হয়ে শতাধিক শ্রমিক ওই সব জাহাজগুলো থেকে সার, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ‘ক্লিংকার’, পোল্ট্রি খাদ্যসহ বিভিন্ন মালামাল নামিয়ে সেগুলো বোলগেট ও ট্রলারে বোঝাই করে গন্তেব্য নিচ্ছে। এতে ভোগান্তিসহ বেড়ে যাচ্ছে তাদের পরবিহন খরচ।

জাহাজের মাস্টার ও শ্রমিকরা জানান, পণ্য নিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার পথে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় নাব্য সঙ্কটের কারণে তারা আটকা পড়েছেন। এতে করে তাদের নদীতে থাকতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম থেকে নগরবাড়ীর উদ্দেশে পণ্য নিয়ে আসা জাহাজের প্রতিনিধিরা জানান, নদীতে পানি কম থাকার কারণে দৌলতদিয়া এলাকায় এসে তাদের জাহাজগুলো আটকা পড়েছে । যে কারণে এখান থেকেই ছোট ছোট ট্রলারে করে পণ্য নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছে। আর এতে পণ্য রফতানি করতে যেমন তাদের সময় বেশি লাগছে, তেমনি গুনতে হচ্ছে বাড়তি খরচ।

দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আইসি মো. মমিন উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিবেশ অনেক ভাল। পুলিশ নিয়মিত নদীতে টহল দেয়াসহ ঘাট এলাকায় তদারকি করেন । তা ছাড়া নাব্য সঙ্কটের কারণে যে জাহাজগুলো ঘাট এলাকায় আছে, তাদেরও খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

Advertisement

বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা ড্রেজিং বিভাগের দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আক্কাস মোল্লা জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ১৬ লাখ মিটার পলি অপসারণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে দৌলতদিয়া প্রান্তে ৭ লাখ মিটার। এ পর্যন্ত দৌলতদিয়া প্রান্তে ৫ লাখ ৩০ হাজার মিটারের বেশি পলি অপসারণ করা হয়েছে। বাকি পলি দ্রুত অপসারণ করা হবে। তা ছাড়া এ রুটে যে জাহাজগুলো চলাচল করে, সেগুলো পরিমাণের তুলনায় অনেক বেশি মালামাল পরিবহন করায় এ সমস্যা হয়। জাহাজগুলো চলাচলের নির্দিষ্ট ড্রাফট সীমা দেয়া থাকে, কিন্তু তারা সেটা মানে না।

বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া ঘাটের সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। প্রতিবছরের চেয়ে এ বছর বেশি পলি জমেছে, এ জন্য তারা এ রুটে ৭টি ড্রেজারের মাধম্যে ড্রেজিং কাজ চালাচ্ছে।

রুবেলুর রহমান/এনএফ/পিআর