বিশেষ প্রতিবেদন

যাদের হারিয়েছিলাম

২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় নিরীহ জনগণের ওপর পাকবাহিনীর আক্রমণের সময় থেকেই শুরু হয় বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞ। পাকিস্তানি সেনারা তাদের অপারেশন সার্চলাইট কর্মসূচির আওতায় চিহ্নিত বুদ্ধিজীবীদের খুঁজে বের করে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে ২৫ মার্চ রাতেই হত্যা করা হয়। তবে বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের তিন-চার দিন আগে বিশেষত ঢাকায় ভয়াবহ রূপ নেয়। ১৪ ডিসেম্বর রাতে ঢাকায় দুইশরও বেশি বুদ্ধিজীবীকে তাদের বাড়ি থেকে তুলে নেয়া হয়। ঢাকায় এ হত্যাকাণ্ড শুরু হয় এবং ক্রমে ক্রমে তা সারাদেশে, বিশেষত জেলা ও মহকুমা শহরে ছড়িয়ে পড়ে।

Advertisement

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। আর তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া আরও দুরূহ বিষয়। তবে বাংলাপিডিয়ার প্রাপ্ত তথ্যসূত্র থেকে এক হাজার ১১১জন শহীদের একটি সংখ্যা জানা গেছে। এর মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৫ জন প্রকৌশলী এবং অন্যান্য ২ জন।

বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী জেলাভিত্তিক শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংখ্যা-ঢাকা জেলায় মোট ১৪৯ জন বুদ্ধিজীবী শহিদ হন। এরমধ্যে ৭৩ জন শিক্ষাবিদ, ১১ জন সাংবাদিক, ৬ জন আইনজীবী, ৪৬ জন চিকিৎসক, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৩ জন প্রকৌশলী এবং অন্যান্য একজন।

ফরিদপুরে মোট ৪৫ জন শহীদ হন, এর মধ্যে শিক্ষাবিদ ৪৩জন, আইনজীবী দুইজন রয়েছেন। টাঙ্গাইলে মোট ৩০ জন, এর মধ্যে শিক্ষাবিদ ২৯ জন, অন্যান্য একজন। ময়মনসিংহে মোট ৭৭ জনকে হত্যা করা হয়, এর মধ্যে ৭৫জন শিক্ষাবিদ, দুজন আইনজীবী রয়েছেন। চট্টগ্রামে ৬৪ জন, এর মধ্যে শিক্ষাবিদ ৬২জন,একজন আইনজীবী ও একজন প্রকৌশলী। পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৪ জন শিক্ষাবিদ, একজন আইনজীবী। সিলেটে ২৬ জন শিক্ষাবিদ, দুজন আইনজীবী। কুমিল্লায় ৮০ জন শিক্ষাবিদ, পাঁচজন আইনজীবী, একজন চিকিৎসক। নোয়াখালীতে ৪৩ জন শিক্ষাবিদ, দুইজন আইনজীবী। খুলনায় ৬৫জন শিক্ষাবিদ, একজন সাংবাদিক, দুইজন আইনজীবী।

Advertisement

যশোরে ৯১জন শিক্ষাবিদ, চারজন আইনজীবী, দুইজন চিকিৎসক। বরিশালে ৭৫জন শিক্ষাবিদ। পটুয়াখালীতে চারজন শিক্ষাবিদ। কুষ্টিয়ায় ৪৫ জন শিক্ষাবিদ। রাজশাহীতে ৫৪ জন শিক্ষাবিদ, একজন সাংবাদিক, পাঁচজন আইনজীবী। রংপুরে ৭২জন শিক্ষাবিদ, চারজন আইনজীবী। দিনাজপুরে ৬১ জন শিক্ষাবিদ, দুজন আইনজীবী। বগুড়ায় ২৬ জন শিক্ষাবিদ, দুজন আইনজীবী। পাবনায় ৫৩ জন শিক্ষাবিদ, দুজন আইনজীবী রয়েছেন।

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুয়ায়ী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের উল্লেখযোগ্য একটি তালিকা-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক শহীদ হয়েছিলেন তাদের মধ্যে, ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব (দর্শনশাস্ত্র), ড. মুনির চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য), ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য), ড. আনোয়ার পাশা (বাংলা সাহিত্য), ড. আবুল খায়ের (ইতিহাস), ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (ইংরেজি সাহিত্য), ড. সিরাজুল হক খান (শিক্ষা), ড. এ এন এম ফাইজুল মাহী (শিক্ষা), হুমায়ূন কবীর (ইংরেজি সাহিত্য), রাশিদুল হাসান (ইংরেজি সাহিত্য), সাজিদুল হাসান (পদার্থবিদ্যা), ফজলুর রহমান খান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান), এন এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখ্যান), এ মুকতাদির (ভূ-বিদ্যা), শরাফত আলী (গণিত), এ আর কে খাদেম (পদার্থবিদ্যা), অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য (ফলিত পদার্থবিদ্যা), এম এ সাদেক (শিক্ষা), এম সাদত আলী (শিক্ষা), সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য (ইতিহাস), গিয়াসউদ্দিন আহমদ (ইতিহাস), রাশীদুল হাসান (ইংরেজি)।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন ড. হবিবুর রহমান (গণিত বিভাগ), ড. শ্রী সুখারঞ্জন সমাদ্দার (সংস্কৃত), মীর আবদুল কাইউম (মনোবিজ্ঞান)।

চিকিৎসকদের মধ্যে শহীদ হয়েছিলেন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ), অধ্যাপক ডা. আলিম চৌধুরী (চক্ষু বিশেষজ্ঞ), অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. আব্দুল আলিম চৌধুরী, ডা. হুমায়ুন কবীর, ডা. আজহারুল হক, ডা. সোলায়মান খান, ডা. আয়েশা বদেরা চৌধুরী, ডা. কসির উদ্দিন তালুকদার, ডা. মনসুর আলী, ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা, ডা. মফিজউদ্দীন খান, ডা. জাহাঙ্গীর, ডা. নুরুল ইমাম, ডা. এস কে লালা, ডা. হেমচন্দ্র বসাক, ডা. ওবায়দুল হক, ডা. আসাদুল হক, ডা. মোসাব্বের আহমেদ, ডা. আজহারুল হক (সহকারী সার্জন), ডা. মোহাম্মদ শফী (দন্ত চিকিৎসক), এম মর্তুজা এবং নূতন চন্দ্র সিংহ (সমাজসেবক, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক)।

Advertisement

সাংবাদিকদের মধ্যে শহীদুল্লাহ কায়সার, নিজামুদ্দীন আহমেদ, সেলিনা পারভীন, সিরাজুদ্দীন হোসেন, ন ম গোলাম মুস্তফার নাম রয়েছে।

অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে আলতাফ মাহমুদ (গীতিকার ও সুরকার), ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (রাজনীতিবিদ), রণদাপ্রসাদ সাহা (সমাজসেবক এবং দানবীর), যোগেশ চন্দ্র ঘোষ (শিক্ষাবিদ, আয়ূর্বেদিক চিকিৎসক), জহির রায়হান (লেখক, চলচ্চিত্রকার), মেহেরুন্নেসা (কবি), ড. আবুল কালাম আজাদ (শিক্ষাবিদ, গণিতজ্ঞ), নজমুল হক সরকারের (আইনজীবী) নাম পাওয়া গেছে।

এএসএস/জেডএ/বিএ