দেশজুড়ে

ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাহাড়ে বসবাস

বান্দরবানে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস থেমে নেই। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাস করা হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রচারণা চালায় প্রশাসন। পরিবারগুলোর স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যাপারে উদ্যোগ নেই কোনো সংস্থার। স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা না হলে পাহাড় ছাড়তে নারাজ ঝুঁকিতে বসবাসকারীরা। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষের অকালে প্রাণহানি ঘটলেও পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, পাহাড় ধসে ২০০৬ সালে জেলা সদরে মারা যান ৩ জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১০ জন, ২০১০ সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় পাঁচজন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় দুইজন, ২০১২ সালে লামা উপজেলায় ১৭ জন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন এবং ২০১৫ সালে জুন মাসে ২ জন মারা গেছেন।আরো জানা যায়, পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসরত পরিবারগুলোর কোনো নির্দিষ্ট তালিকা নেই প্রশাসনের কাছে। এছাড়াও দাতা সংস্থাগুলো বিশেষ করে ইউএনডিপি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিভিন্ন বছরেই হাজার কোটি টাকা কথিত উন্নয়ন কাজের নামে বান্দরবান জেলায় ব্যয় দেখায়। কিন্তু বর্ষায় জেলাবাসীর দুর্যোগকালীন ও বন্যা থেকে মুক্ত থাকার বিষয়ে মানবিক সহায়তা হিসেবে কোনো ধরনেরই আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপনের কর্মসূচি নেই ওইসব সংস্থার।জেলা সদরের ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম জাগো নিউজকে বলেন, অন্য এলাকায় থাকতে হলে বেশি ভাড়া দিতে হবে। যা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখানে আছি।বিভিন্ন এনজিওর জরিপে দেখা গেছে, বান্দরবানের সাত উপজেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে (পাদদেশে) বসবাস করছেন চল্লিশ হাজারেরও বেশি পরিবার। সদর উপজেলার কাসেমপাড়া, ইসলামপুর, বনরূপাপাড়া, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশন এলাকা, স্টেডিয়াম এলাকা, নোয়াপাড়া, কসাইপাড়া, লামা উপজেলার হরিনমারা, তেলুমিয়া পাড়া, ইসলামপুর, গজালিয়া, মুসলিম পাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হরিণঝিড়ি, টিঅ্যান্ডটি এলাকা, সরই, রুপসীপাড়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি, আমতলী, রেজু, তুমব্রু, হেডম্যানপাড়া, মনজয় পাড়া, দৌছড়ি, বাইশারী, রুমা উপজেলার হোস্টেলপাড়া, রনিনপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে ৪০ হাজার পরিবার। তাদের বেশিরভাগই হতদরিদ্র মানুষ।বান্দরবান মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, পাহাড়ে বালির আধিক্য, পাহাড়ের উপরিভাগে গাছ না থাকা, গাছ কেটে ভারসাম্য নষ্ট করা, পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতবাড়ি গড়ে তোলা, পাহাড় থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখা, বনায়নের পদক্ষেপের অভাব, বর্ষণে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালি ও মাটি অপসারণে দুর্বলতা ইত্যাদির কারণে পাহাড় ধস হয়ে থাকে।এ বিষয়ে লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু মার্মা জাগো নিউজকে বলেন, পাহাড়ধসে মৃত্যু ঠেকাতে হলে সবাইকে নিয়ে আগে একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা তৈরি করা প্রয়োজন।জেলা প্রশাসনের ডেপুটি নেজারত (এনডিসি) শামীম হুসেন জাগো নিউজকে জানান, পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য প্রশাসন থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।সৈকত দাশ/এমজেড/পিআর

Advertisement