ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে ‘থার্টি ফাস্ট’ উদযাপনের রাতে ঢাকায় সব বার বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শনও নিষিদ্ধ। বুধবার সচিবালয়ে আসন্ন বড়দিন উদযাপন এবং থার্টি ফার্স্ট নাইটে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আয়োজিত সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এসব তথ্য জানিয়েছেন।
Advertisement
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বর বিকেল থেকে ঢাকা শহরের সব বার বন্ধ থাকবে এবং পরের দিন ভোর ৫টা পর্যন্ত কোনো লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্রও কেউ বহন বা প্রদর্শন করতে পারবেন না।’
থার্টি ফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে কোনো সমাবেশ করা যাবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তবে ইনডোরে হোটেল বা যার যার বাসাবাড়িতে যারা অনুষ্ঠান করতে চান তারা করবেন। সেখানে যদি নিরাপত্তার প্রায়োজন হয় আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে নিরাপত্তা দেবে।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইটে গুলশান, বনানী, বারিধারা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টার পর কোনো বহিরাগত প্রবেশ করতে পারবে না। বহিরাগত প্রবেশ আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখব।’
Advertisement
‘৮টার পর যারা যেতে চান আমাদের সার্চ টিম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। তারা যদি মনে করেন তারা সেই জায়গার লোক তবে যেতে দেবেন। থার্টি ফার্স্ট নাইটে রাত ৮টার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র এবং তাদের নির্দিষ্ট গাড়ি ছাড়া অন্য গাড়ি আমরা নিয়ন্ত্রণ করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি বা পটকা ফোটানো যাবে না। উন্মুক্ত স্থানে নাচ-গান করা যাবে না। ওইদিন মাদক গ্রহণকারীদেরও নিয়ন্ত্রণ করা হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনের জন্য আমাদের দেশের তরুণরা অবাধ্যভাবে চলাফেরা করত। গত ২-৩ বছর ধরে শান্তির পরিবেশ এসেছে। এখন আর সেই ধরনের হইচই, ইভটিজিং সেগুলো বন্ধ হয়েছে। আমরা এটা কন্টিনিউ করতে চাচ্ছি।’
বড়দিনে চার্চে বিশেষ নিরাপত্তা ঢাকা মহানগরীতে খ্রিস্টানদের ৭৫টি চার্চ রয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বড়দিনে চার্চগুলোর জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি। এর মধ্যে তেজগাঁও, মিরপুর, বনানী ও কাকরাইল- এই চারটি বড় চার্চে আমরা বিশেষ ব্যবস্থা রাখব। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ ভক্ত ২৪ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে গিয়ে থাকেন।’
Advertisement
‘খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থাও আমরা করছি। বিদেশ থেকেও খ্রিস্টানদের আত্মীয়-স্বজনরা আসবেন। তারা হোটেলগুলোতে অবস্থান করবেন। তারা যেখানে অবস্থান করবেন সেখানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব।’
ঢাকা শহরে ৫ হাজারের বেশি নিরাপত্তাকর্মী চার্চের নিরাপত্তায় থাকবে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘পর্যাপ্ত সংখ্যক সাদা পোশাকধারী নিরাপত্তা কর্মী ২-৩ দিনের জন্য কাজ করবেন। বিজিবি ও আনসারও প্রস্তুত থাকবে। যদি প্রয়োজন হয় তারাও সাড়া দেবেন।’
সব চার্চেই নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘চার্চে ইভটিজার এবং নেশাগ্রস্তদের নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সারাদেশে খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকায় শান্তি রক্ষায় সমন্বয় কমিটি থাকবে। পুলিশের ফোকাল পয়েন্টের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখবে।’
বড়দিনকে সামনে রেখে কোনো নিরাপত্তা হুমকি রয়েছে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে এই পর্যন্ত এমন কোনো ইনফরমেশন নেই। আমরা মনে করি, ইনফরমেশন না থাকলেও যে কিছু ঘটবে না এটাও আমরা চিন্তা করি না। যে কোনো কিছু ঘটতে পারে সেজন্য আমরা তৈরি রয়েছি।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিওসহ অন্যান্য খ্রিস্টান নেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/আরএস/জেডএ/এমএস