পরিবারের জন্য সুখ কিনতে অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়া গিয়ে দুই মাস কারাভোগ শেষে মালয়েশিয়া রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ও বাংলাদেশি দূতাবাসের সহযোগিতায় মো. বাছির মিয়া (১৭) নামের এক কিশোর দেশে ফিরেছে। বুধবার বিকেল পাঁচটায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় বাছির। এদিন রাতে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেডক্রিসেন্ট ইউনিট কার্যালয়ে আনা হয়। বাছির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের হেলু মিয়ার ছেলে।বাছিরের মামা মো. আখতারুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় বাছির। দারিদ্র্যের মাঝে বেড়ে ওঠা বাছির ফরিদপুর গ্রামের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। অভাবের কারণে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুতে পারেনি সে। তবে সে সবসময় পরিবারের সবার জন্য সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতো। ছোটবেলা থেকেই গ্রামের পাড়া-পড়শিদের কাছ থেকে বিদেশের গল্প শুনে মনে মনে নিজেও একদিন বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন বুনতে থাকে বাছির। এরই ধারবাহিকতায় পরিবারের সবার জন্য সুখ কিনতে স্থানীয় দালাল আদম আলীর মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় সে। বাছিরের দরিদ্র বাবা হেলু মিয়া এক লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে মোট এক লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে মালয়েশিয়া পাঠান।তবে বাছির জাগো নিউজকে জানায়, দালাল আদম আলী কক্সবাজারের টেকনাফের স্থানীয় এক দালালের কাছে তাকে বিক্রি করে দেন। পরে ওই দালালসহ আরো কয়েকজন দালালের মাধ্যমে গত ১৫ মার্চ অবৈধভাবে সাগরপথে ট্রলারযোগে বাছিরসহ আরো বেশ কয়েকজন মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এরপর তাদেরকে মিয়ানমার সাগরের মাঝখানে নিয়ে গিয়ে বেশ কয়েকদিন আটকে রাখেন দালালরা। এ কদিন খাবার চাইলেই তাদের উপর অমানষিক নির্যাতন করা হতো। একপর্যায়ে দালালরা তাদেরকে সাগরের মাঝখানে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে সাগরে ভাসতে ভাসতে তারা মালয়েশিয়া পৌঁছান। মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর বাছিরের মনে কিছুটা আশার আলো জাগে। কিন্তু বাছিরের সেই আশার আলো নিমিষেই নিভে যায়। সেখানে মালয়েশিয়ান নৌপুলিশ অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বাছিরসহ বাকি আরোহীদেরকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। এরপর দুই মাস কারাভোগ শেষে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশি দূতাবাস ও মালয়েশিয়ান রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসে বাছির।এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেডক্রিসেন্ট ইউনিয়নের ভাইস চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, সারা বিশ্বে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি ট্রেসিং বিভাগ রয়েছে। তারা বিদেশে বন্দী শরণার্থীদের জন্য কাজ করে। মালয়েশিয়ান রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ট্রেসিং বিভাগের সদস্যরা বাছিরসহ বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি কারাগারে থাকার বিষয়টি বাংলাদেশি দূতাবাসকে জানায়। পরে বাংলাদেশি দূতাবাস ও রেডক্রিসেন্টের যৌথ উদ্যোগে বাছিরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।আজিজুল আলম সঞ্চয়/এমজেড/পিআর
Advertisement