দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থীরা। এ কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ইচ্ছুক বিদেশিদের ভর্তি সংখ্যা গত কয়েক বছর থেকে হ্রাস পাচ্ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক প্রতিবেদনে জানা গেছে।
Advertisement
তবে আশার কথা হচ্ছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা সেদিকে ছুটছেন। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সংখ্যা কমলেও বিদেশি শিক্ষার্থী সংখ্যা বেড়েছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। সূত্র মতে ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৬ এর এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৯টিতে মাত্র ৩৫৫ বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করেছে। অন্যদিকে দেশের চলমান ৯০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছে ১৯২৭ বিদেশি শিক্ষার্থী ।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১০ সালে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিল ৩৫৯ জন, ২০১১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২১০ জনে, আবার ২০১২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫২৫ জনে, ২০১৩ সালে আবারও প্রায় দুইশত শিক্ষার্থী কমে দাঁড়ায় ৩২৬ জনে, ২০১৪ সালে একশ বেড়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩২ জনে, ২০১৫ সালেও অন্তত দেড়শ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯৩ জন এবং সর্বশেষ ২০১৬ তে শিক্ষার্থী কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫৫ জনে। অর্থাৎ ছয় বছর আগে ২০১০ সালে যা ছিল তার চেয়ে চারজন কম শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করেছে ২০১৬ সালে।
এদিকে, ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিল ১৫৪৮ জন। ২০১৬ সালে ৩৭৯ শিক্ষার্থী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯২৭ জনে।
Advertisement
২০১৬ সালে সব থেকে বেশি অন্তত ৩৪ শিক্ষার্থী এসেছে মিসর থেকে। তারা ৩৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। এছাড়া ইউনাইটেড আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে এসেছে ৩২, ফিলিপাইনের ৩১, মিয়ানমারের ৩০ জন।
এ ছাড়া জিম্বাবুয়ে, জাম্বিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, গিরিসন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান এবং ভরত থেকেও পড়াশোনা করতে দেশে এসেছে শিক্ষার্থীরা। সব থেকে কম শিক্ষার্থী মাত্র একজন এসেছে ভারত থেকে।
ইউজিসির প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, প্রতিবছরই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ বর্তমানে দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক ডিজিটালাইজেশন হয়েছে। ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীরা তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে উচ্চশিক্ষার কোর্স-কারিকুলাম, সিলেবাস ইত্যাদি দেখে বাংলাদেশে পড়তে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন, কানাডা, ইত্যাদি) থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে এসেছে। সে কারণে বর্হিবিশ্বে একদিকে যেমন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে অপরদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
Advertisement
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি বিদেশি শিক্ষার্থীদের এমন আগ্রহের পেছনে চারটি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সহ-সভাপতি ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী।
তিনি বলেন, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খরচ কম, আফ্রিকান দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের আবহাওয়া-পরিবেশ অনেক ভালো, শিক্ষার গুণগতমান ঠিকঠাক রাখার চেষ্টা এবং উচ্চ শিক্ষার মান নিশ্চিতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অনেক জটিল প্রতিযোগিতায় সফল হওয়া কঠিন বিষয়, অথচ সহজেই অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাচ্ছে। ফলেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীরা সেসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহজেই ডিগ্রিও পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভর্তিসংক্রান্ত ক্যাম্পেইন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যেটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে সম্ভব হয় না। এছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে, যা বেসরকারিতে মিলছে। এ কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি কমছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী না বাড়ার কারণ হচ্ছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য তেমন প্রচার প্রচারণা করে না। তাছাড়া যেসব দেশে এক সময় উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না সেসব দেশে এখন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। ফলে ওইসব দেশ থেকে শিক্ষার্থী তেমন আসে না। যেমন, ভুটান, নেপাল, মালায়শিয়াতে এক সময় উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। এখন তারা অনেক উন্নত। আবার বেশিরভাগ দেশে উচ্চশিক্ষার চেয়ে কারিগরি ও কর্মমূখী শিক্ষার প্রতি জোর দিয়েছে। এ কারণেও তারা উচ্চশিক্ষা নিতে বাংলাদেশে আসে না।
এমএইচএম/এএইচ/আইআই