আন্তর্জাতিক

নিউ ইয়র্কে বোমা হামলা : অভিবাসন আইন কঠোর চান ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের প্রাণকেন্দ্রে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে রক্তপাত বইয়ে দেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। তবে অভিবাসনবিরোধী হিসেবে পরিচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিবাসনের লাগাম টানতে নতুন জ্বালানি যোগ করেছে এ হামলা।

Advertisement

ম্যানহাটনের ব্যস্ততম দুটি স্টেশনের মাঝে সংযোগকারী ভূগর্ভস্থ রাস্তার মোড়ে সোমবারের বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প বলেন, অভিযুক্ত বোমা হামলাকারীর তথ্য-উপাত্ত ও পারিবারিক সম্পর্কের সূত্রে এ দেশে বিদেশিদের আসার প্রক্রিয়ায় যে সংস্কার আনা দরকার তা নতুন করে জানিয়ে দিলো।

বোমা হামলার সময় আটক আকায়েদ উল্ল্যাহ তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেছেন, চরমপন্থী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিশোধ নিতেই তিনি সাবওয়ে স্টেশনে বোমা হামলা চালিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ভিসার আওতায় তার পরিবারের সদস্যদের সূত্র ধরেই ২০১১ সালে দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।

অভিবাসন ব্যবস্থায় বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সম্প্রসারিত পারিবারিক অভিবাসন প্রক্রিয়ার ভিসায় আজ সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীরা আমাদের দেশে ঢুকে পড়েছে।’ এর আগে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হুকাবি স্যান্ডারস বলেন, অবাধ প্রবেশ ঠেকাতে ট্রাম্প নীতিমালায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছেন।

Advertisement

এদিকে, নিউ ইয়র্ক সিটি সাবওয়েতে বিস্ফোরণে সন্দেহভাজন আটক বাংলাদেশি অাকায়েদ উল্ল্যাহ ঘরে তৈরি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রাণহানি ঘটানোর চেষ্টা করেছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ২৭ বছর বয়সী বাংলাদেশি অভিবাসী আকায়েদ উল্ল্যাহ বলেছেন, তিনি সন্ত্রাসীদের প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং অনলাইন নির্দেশনার মাধ্যমে বিস্ফোরক ডিভাইস তৈরির কৌশল শিখেছেন। ব্রুকলিনে তার অ্যাপার্টমেন্টেই বোমা তৈরি করেছেন।

পুলিশ বলছে, পাইপের তৈরি বোমায় ৯ ভোল্টের ব্যাটারি ছিল। বিস্ফোরণ ঘটানোর সময় তার শরীরে ম্যাচ, ক্রিস্টমাস ট্রি লাইটও পাওয়া গেছে। তার কর্মস্থলের পাশে সে পাইপটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পেয়েছিল। পরে বোমা তৈরির অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছে বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছে বাংলাদেশি এই বংশোদ্ভূত মার্কিন।

কর্তৃপক্ষ বলছে, বিস্ফোরিত ডিভােইসটি সঠিকভাবে কাজ করেনি। বিস্ফোরণের ঘটনায় একমাত্র আকায়েদ উল্ল্যাহই মারাত্মক আহত হয়েছেন।

হাতে এবং তলপেটে দগ্ধ আকায়েদ হাসপাতালের বিছানা থেকেই তদন্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিশোধ নিতেই তিনি হামলা চালিয়েছেন বলে কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন কর্মকর্তারা বার্তাসংস্থা এপিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

Advertisement

আইনপ্রয়োগকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, আকায়েদ উল্ল্যাহ আইএসের প্রোপাগান্ডা ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে হামলা চালিয়েছে। তবে আইএসের সঙ্গে তার সরাসরি সম্পর্ক আছে কি না সেব্যাপারে এখনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সম্ভবত তিনি একাই হামলা চালিয়েছেন।

দুই মাস আগে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের কাছে ট্রাক হামলায় ৮ জনের প্রাণহানির পর নিউ ইয়র্কের সাবওয়ে স্টেশনে এ হামলার ঘটনা ঘটলো। ওই ট্রাক হামলা উজবেক বংশোদ্ভূত অভিবাসী চালালেও দায় স্বীকার করে আইএস।

মার্কিন নাগরিকদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক, উচ্চ শিক্ষা অথবা যোগ্যতা সম্পন্ন বিদেশিদের জন্য ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়। এই অভিবাসন প্রক্রিয়ার আওতায় দেশটিতে পাড়ি জমানো অনেকের জন্যই সেখানকার স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। নাগরিকত্ব পাওয়ার পর স্ত্রী, স্বামী, পিতা-মাতা, সন্তান, ভাই-বোন অথবা তাদের স্বামী-স্ত্রীকে দেশটিতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান।

তবে সম্প্রতি দেশটিতে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এই অভিবাসন প্রক্রিয়ায় লাগাম টানার পক্ষে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই জোরালো অবস্থান জানান দিয়ে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সূত্র : এপি।

এসআইএস/আইআই