প্রত্যেক নারীই মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে চান। এতে নারী জীবনের পূর্ণতা পান। নারীর জীবনে এটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এ প্রক্রিয়া খুব সহজ নয়। দেখা যায় স্বাস্থ্যগত জটিলতা। থাকে জীবনের ঝুঁকি। গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময়, এমনকি প্রসবের পর ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত এসব জটিলতা দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ জটিলতা আগে থেকে অনুমান করা যায় না। তবে জটিলতা সম্পর্কে সচেতন হলে এবং সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এসব অনাকাক্ষিত পরিস্থিতি সহজেই এড়ানো যায়।
Advertisement
আমাদের দেশে বিপুলসংখ্যক মা অসচেতনতা ও কুংস্কারের কারণে প্রসবের সময় মৃত্যুবরণ করেন। কেননা নারী জীবনে গর্ভকাল অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা। এ সময় একই দেহে দু’টি প্রাণের বসবাস। জন্মদান প্রক্রিয়াও জটিল। তাই গর্ভবতী মায়ের বাড়তি যত্ন নিতে পরিবারকে। মায়ের এবং অনাগত শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। জটিল কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে জরুরিভাবে গর্ভবতীকে নিয়ে শরণাপন্ন হতে হবে মা ও শিশু চিকিৎসকের।
এছাড়াও গর্ভকালীন টিটি টিকা দেওয়া, ওজন মাপা, স্বাস্থ্য শিক্ষা দেওয়া, রক্তস্বল্পতা বা শরীরে রক্ত কম কিনা তা পরীক্ষা করা, রক্তচাপ পরিমাপ করা, পা অথবা মুখ ফুলে গেলে পানি আছে কিনা দেখা, শারীরিক অন্য কোনো অসুবিধা আছে কিনা তা পরীক্ষা করা, পেট পরীক্ষা করা, উচ্চতা মাপা ইত্যাদি নিয়মিত করা জরুরি।
একজন গর্ভবর্তী মায়ের প্রসবকালীন সময়ে পরিবার, কমিউনিটি, সরকার ও স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে উপযুক্ত সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। গর্ভবতী যেকোনো সময় যেকোনো জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন। আর সেটি তার জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এজন্য তার প্রতি একটু আলাদা যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। স্বামীসহ পরিবারের সবার সাবধানতা ও আন্তরিক সহযোগিতায় এ ধরনের ঝুঁকি থেকে একজন মা রক্ষা পেতে পারেন।
Advertisement
গর্ভবতী মায়ের পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়- ১. সন্তান গর্ভে আসার পর থেকেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কিছু অর্থ জমা রাখতে হয়। ২. তাকে কোন হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নিয়ে রাখতে হবে। ৩. প্রয়োজনে রক্ত দিতে পারবেন এমন কাউকে আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে।গর্ভকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার দায়িত্ব শুধু স্বামী বা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। গর্ভবতী মায়েরও করণীয় দায়িত্ব আছে। প্রথমত তাকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং প্রয়োজনে সহযোগিতা করতে হবে। বিপদের সময় ভেঙে পড়লে চলবে না। সরকার এবং বেসরকারি সংস্থার স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন বাড়িতে গিয়ে গর্ভকালীন সময়ের সমস্যা এবং সে সমস্যা মোকাবিলার নিয়ম-কানুন, ওষুধপত্র, সাবধানতা ও প্রস্তুতির বিষয়ে গর্ভবতী নারী এবং পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে আসেন, যাতে কোনো সমস্যা না হয়।
কোনো নারী মারাত্মক জটিলতার শিকার হলে তার জরুরি চিকিৎসা করা প্রয়োজন। এসব জটিলতা যাতে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে সেদিকে পরিবারের সদস্যদের নজর রাখতে হবে। যেসব মারাত্মক লক্ষণ দেখে বোঝা যাবে গর্ভবর্তী ঝুঁকির সম্মুখীন সেগুলো হলো- ১. হাত-পা ফুলে যাওয়া২. অত্যধিক বমি হওয়া ৩. প্রসবের আগে রক্তক্ষরণ বা পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ৪. তীব্র মাথাব্যথা ৫. চোখে ঝাপসা দেখা ৬. তীব্র জ্বর ৭. ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে প্রসব ব্যথা ৮. দুর্গন্ধযুক্ত কোনো স্রাব ৯. খিঁচুনি ১০. প্রসবপথে গর্ভস্থ শিশুর মাথার পরিবর্তে অন্য কোনো অংশ দেখা দেওয়া।এ ধরনের যেকোনো একটি সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা নিতে হবে। তা না হলে গর্ভবতীর বিপদ হতে পারে।
বিশ্বের ৯৯ ভাগ মাতৃমৃত্যুর ঘটনা ঘটে আফ্রিকা ও এশিয়ায়। কারণ হিসেবে দেখা যায়- * অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ * ইনফেকশন * একলাম্পশিয়া * ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা * অনিরাপদ গর্ভপাতমায়েদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করা মানবিক দাবি। সুস্থভাবে সন্তান জন্মদান তাদের মানবিক অধিকার। এটা সামাজিক ও অর্থনৈতিক দায়বদ্ধতার মধ্যেও পড়ে। আন্তর্জাতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এ ধরনের মাতৃমৃত্যুুর ঘটনা প্রধান অন্তরায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
নবজাতক শিশু এবং মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে হলে যে বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে, তা হলো- নারী-পুরুষের সমঅধিকার, শিক্ষার হার বৃদ্ধি করা এবং বাল্যবিবাহ রোধ করা। তাহলেই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নবজাতক ও মাতৃমৃত্যুহার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
Advertisement
এসইউ/পিআর