দেশজুড়ে

ঈদে গামছা তৈরিতে ব্যস্ত বাঘার তাঁতিরা

ঈদকে সামনে রেখে গামছা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মোমিনপুর, রুস্তমপুর, পাঁচপাড়া ও চকসিংগার চার মহল্লার নারী তাঁতিরা। এখানকার উৎপাদিত গামছার চাহিদা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এখন দেশের অন্যান্য জেলাতেও পৌঁছানো হচ্ছে এ অঞ্চলের তৈরি গামছা।এক সময়ের অভাবী পরিবারগুলো এখন সুখের সংসার করছেন। তবে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক ব্যবসায়ীকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী কারখানা তৈরি করে রাখলেও বিদ্যুতের কারণে উৎপাদনে যেতে পারছেন না।উপজেলার রুস্তমপুরের মোমিনপুর গ্রাম সরেজমিনে দেখা গেছে, এই গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার গামছা তৈরির সঙ্গে জড়িত। এখানে প্রতি মাসে কয়েত হাজার গামছা তৈরি করেন। কারিগরদের তৈরি এসব গামছা সপ্তাহে দু’দিন শনিবার ও মঙ্গলবার স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি দেশীয় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তা বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। দিনদিন এর চাহিদা বেড়ে চলেছে। এ কারণে শত শত নারী ও পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সমান ভূমিকা রাখছেন।স্থানীয় তাঁতি আবদুল খালেক জাগো নিউজকে জানান, ওই গ্রামের তাঁতিরা প্রতি মাসে অন্তত হাজার হাজার টাকার গামছা তৈরি করেন। এখানকার উৎপাদিত গামছা আগত মহাজনদের কাছে বিক্রি করা হয়। যা দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে। কিন্তু টাকা লেনদেনের জন্য আড়ানীর বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হয়।ওই গ্রামের স্কুল শিক্ষক সানাউল­াহ জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে ওই গ্রামের তৈরি গামছার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কারণে সুতা রঙ করতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া আরো অনেক ব্যবসায়ী কারখানা তৈরি করে রেখেছেন কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় তারা উৎপাদনে যেতে পারছেন না। টাকা বিনিয়োগ করে তারা অলস বসে আছেন। এ কারণে খুব দ্রুত সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের দাবি জানান তিনি।স্থানীয় আরেক তাঁতি নিমাজান বেওয়া জাগো নিউজকে জানান, গামছা বুনিয়ে চার ছেলে ও এক মেয়েকে মানুষ করে বিয়ে দিয়েছি। তারা এখন নাতি-নাতনি নিয়ে সুখে সংসার করছে। এ বয়সে শুধু বসে থাকতে ভালো লাগে না। এছাড়া ঈদের সময়ে তাঁতি গামছার চাহিদা থাকায় একটু চকরাতে সুতা তৈরি করে দিচ্ছি।শামিমা নামের আরেক নারী ঈদ মৌসুমে গামছা তৈরি করতে ব্যস্ত। এ কাজ করে তার দুই ছেলে ইমাম হাসান মেহেদী ও আল তোফিককে লেখাপড়া শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বলে জানান।পাশে শাহানা বেগম গামছা বুনাতে ব্যস্ত। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে সানাউল্লাহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন। বর্তমানে তিনি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার কৃজ্ঞপুর কমলাময়ী উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে এ বছরের ১৬ এপ্রিল যোগদান করেছেন। তিনি স্কুল ছুটিতে এসে সহযোগিতা করছেন। মেজো ছেলে রাজশাহী কলেজে গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। মেয়ে ববিতাকে বিয়ে দিয়েছেন। তবে মাস্টার্স শেষ করা ও অনার্স পড়ুয়া ছেলে ঈদের সময় বাড়ি এসে মা-বাবাকে গামছা বুনতে সহযোগিতা করছেন।আড়ানী পৌর ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে জানান, এসময় এ গ্রামের তাঁতিরা খুব ব্যস্ত থাকেন। এক বছরের আয় এক সঙ্গে করার চেষ্টা করেন। তবে এ গ্রামে বিদ্যুতের সংযোগ দিলে এ এলাকার তাঁতিরা বিভিন্ন রং ও ডিজাইনের গামছা তৈরি দেশের দেশের অর্থনীতীতে জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/আরআই

Advertisement