সত্যিই ক্রিকেট অনিশ্চয়তার এক খেলা। সব সম্ভবের খেলা। যার শেষ বলে আসলেই কিছু নেই। এ কারণেই ক্রিকেটকে বলা হয়, ‘গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা।’
Advertisement
আর তাই তো এবারের বিপিএলের রাউন্ড রবিন লিগে সবচেয়ে ভাল খেলা, সর্বাধিক ম্যাচ জেতা ও বেশি পয়েন্ট নিয়ে সবার আগে শীর্ষস্থান নিশ্চিত করা দল কুমিল্লা ভিক্টেরিয়ান্স ফাইনাল খেলতে পারল না। কোয়ালিফায়ারের দুই ম্যাচ হেরে বিদায় নিল।
অন্যদিকে একদম ধুঁকে ধুঁকে কোনোরকমে সেরা চারে পা রাখা মাশরাফির রংপুর ইলিমিনেটর রাউন্ড এবং দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে দারুণ ক্রিকেট খেলে জায়গা করে নিল ফাইনালে। অতিবড় রংপুর রাইডার্স ভক্তও রাউন্ড রবিন লিগ শেষে ভাবেননি তাদের পছন্দের দল শেষ পর্যন্ত ফাইনাল খেলবে।
এমনকি যার যোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্বে রংপুর রাইডার্স ফাইনালে- সেই মাশরাফি বিন মর্তুজাও আসরের মাঝামাঝি পর্যন্ত, চিন্তাই করতে পারেননি তার দল ফাইনাল খেলবে। আজ ফাইনাল নিশ্চিত করার পর মাশরাফির মূল্যায়ন, আসলে রাউন্ড রবিন লিগের ১২ ম্যাচের পারফরমেন্সকে মানদÐ ধরলে কেউই হয়ত ভাবেনি তার দল শেষ পর্যন্ত ফাইনাল খেলবে।
Advertisement
তাই তো আজ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করার পর সংবাদ সম্মেলনে এসে মাশরাফি অকপটে স্বীকার করলেন এবার বিপিএলের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চিন্তাও করেননি রংপুর ফাইনাল খেলবে। তার মতে, বিদেশি ক্রিকেটাররা ঠিক সময়মত জ্বলে ওঠার কারণেই তার দল অনেক পিছন থেকেও ফাইনালে উঠে আসল।
মাশরাফি বলেন, ‘রাউন্ড রবিন লিগের খেলাগুলোর কথা চিন্তা করলে রংপুর কোনভাবেই চার দলের মধ্যে ফেবারিট ছিল না। তবে হ্যাঁ, আমাদের দলে এমন দুই থেকে তিনজন ক্রিকেটার আছেন, যারা একাই পুরো খেলার চালচিত্র বদলে দিতে পারেন। আমাদের গেইল-ম্যাককালাম ছিলেন। যারা তাদের দিনে সব শেষ করে দিতে পারেন। আজকে চার্লস করেছে।’
মাশরাফির ধারনা, সবার আন্তরিক চেষ্টার ফসল ফাইনালে উঠে আসা, ‘আসলে টুর্নামেন্টের মাঝে যদি তাকাই তাহলে বলব, ফাইনাল খেলতে পারি সেটা চিন্তাও করতে পারিনি; কিন্তু ক্রেডিট পুরোটাই ছেলদের দেয়া উচিত। বিশেষ করে, যারা বিদেশি খেলোয়াড় আছে তাদেরকে অবশ্যই কৃতিত্ব দিতে হবে। তারা চেষ্টা করেছে। শুধু নিজের জন্য নয়। দলকে এগিয়ে নিতেও ঘাম ঝরিয়েছে। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে বিদেশি বিশ্বমানের বড় ক্রিকেটারদের সময় মত জ্বলে উঠে দলকে এগিয়ে নেয়াটা আমি খুব কম দেখেছি। এবার দেখলাম। তারা শুধু সময়মত এগিয়েই আসেনি। আমাদের লোকাল ক্রিকেটারদের বুঝিয়েছে, কেমন খেলতে হবে। আমি মনে করি, পুরো দলগত প্রচেষ্ঠায় আমরা এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।’
শুরুতে বেশ কয়েকটি ম্যাচে রান না পেলেও ইলিমিনেটর রাউন্ডে খুলনার বিপক্ষে গেইল জ্বলে উঠে সব হিসেবে-নিকেশ পাল্টে দিয়েছেন। আর দুই দিনে শেষ হওয়া দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে জনসন চার্লস এবং ব্রেন্ডন ম্যাককালামের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়েই গড়ে উঠেছে রংপুরের জয়ের ভিত।
Advertisement
আগের চার ম্যাচে মোটে (৯+১+২+২৬) = ৩৮ রান করা জনসন চার্লস এ ম্যাচে ৬৩ বলে খেলেছেন ১০৫ রানের উত্তাল ইনিংস। আর আগের ৯ ম্যাচে ১৫২ রান করা ম্যাককালাম আজ খেলে ফেললেন ৪৬ বলে ৭৮ রানের ঝড়ো ইনিংস। আর তাতেই লÐ-ভÐ কুমিল্লা বোলিং ও ফিল্ডিং।
এই যে দু’জন আউট অফ ব্যাটসম্যানের খুব দরকারি সময়ে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠে দল জেতানো, সে সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? জানতে চাওয়া হলে মাশরাফি বলেন, ‘আগের কয়েকটা সংবাদ সম্মেলনে বলেছি, আমাদের কন্ডিশনে স্বাভাবিক ব্যাটিংটা ওদের জন্য খুব কঠিন। তবে আজকে ওরা যেভাবে খেলেছে, এটা হচ্ছে তাদের ন্যাচারাল গেম। হয়তোবা একটা মিস হিট হলে আউট হয়ে যেতে পারত। আসলে তাদের বিগ হিট করার সামর্থ্য অনেক। প্রতিপক্ষ বোলিংকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়ার অস্বাভাবিক ক্ষমতা আছে বলেই তারা এ ধরণের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে সবার আগে ডাক পায়। নিজেদের দিনে ওরা যে কোনো দলকে ব্যাপক ধ্বংস করতে পারে। ইলিমিনেটরে গেইল একাই করে দিয়েছে। আজকে চার্লসের এমন একটা ইনিংসই একটা দলের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। ম্যাককালাম এসে যেভাবে খেলেছে, তাতে আমাদের বড় স্কোর গড়তে সুবিধা হয়েছে।’
মাশরাফি মনে করেন, স্কোরলাইনটা বড় হয়েছে বলেই জিতেছে তার দল। কারণ আজ প্রচুর শিশির পড়েছে। বোলারদের জন্য পরের সেশনে বোলিং করাটা সহজ ছিল না। তাই তো মুখে এমন কথা, চার্লস, ম্যাককলাম জুটিতে আমাদের রানটা ১৯০ পর্যন্ত যাওয়ায় জেতা সম্ভব হয়েছে। মাঠে যে পরিমাণে শিশির ছিল, তাতে এ স্কোর না হলে সমস্যা হত।’
মাশরাফির কাছে শেষ পর্যন্ত জানতে চাওয়া হলো, গেইলের কি অবস্থা? এ ক্যারিবিয়ান কি ফাইনালে খেলতে পারবেন? রংপুর অধিনায়কের ব্যাখ্যা, ‘গেইলের একটু ব্যথা আছে। ওভারঅল মনে হচ্ছে না কোনো সমস্যা আছে। কালকে একটু দৌড়াদৌড়ি করলে খেলতে পারবে। হাঁটা-চলাতে কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
এআরবি/আইএইচএস